আবু সাঈদ: এই সুনীল আকাশ, নির্মল বাতাস, অনুপম প্রকৃতি আমরা উপভোগ করছি। হরদম আল্লাহর নেয়ামতে আকণ্ঠ ডুবে থাকছি। বিচিত্র এই পৃথিবীর আলো আমরা পিতামাতার অবদানেই দেখতে পাচ্ছি। এজন্য পিতা-মাতা আমাদের পরম আবেগমথিত স্থান। পিতা-মাতার প্রতি আমাদের অসম্ভব দুর্বলতা।
ইসলাম এই দুর্বলতাকে স্বীকার করে। এর প্রতি প্রবলভাবে উদ্বুদ্ধও করে। একবার এক সাহাবী এসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কি? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাঁরাই তোমার জান্নাত, তারাই তোমার জাহান্নাম (মিশকাত হা.৪৯৪১)। অর্থাৎ তাদের সন্তুষ্টি জান্নাতের পথ সুগম করবে। তাদের অসন্তোষ জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিবে (মিরকাত)।
অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টি তোমার রবের সন্তুষ্টি। পিতার অসন্তোষ তোমার রবের অসন্তোষ (মিশকাত হা.৪৯২৭)।
তাবরানী ও বাযযারের বর্ণনায় পিতা-মাতা উভয়ের কথা এসেছে (মিরকাত)। সুতরাং পরকালীন সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য পিতামাতাকে বড় প্রয়োজন।
পার্থিব জীবনের সফলতার জন্যও পিতা-মাতার ভালোবাসার আশীষ নেহায়েত জরুরি। হযরত মুআজ রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতা-মাতার সদাচারী সন্তানের জন্য সুসংবাদ, আল্লাহ তা’আলা তার জীবনের আয়ু বাড়িয়ে দিবেন। (আল আদাবুল মুফরাদ হা.২২)
অপর হাদিসে এসেছে, হযরত ছাওবান রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুআর মাধ্যমেই কেবল তাকদির পরিবর্তন হতে পারে। পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণই কেবল আয়ু বাড়াতে পারে (মিশকাত হা. ৪৯২৫)।
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হাতেম সিজিস্তানী রাহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, দোয়ায় তাকদির পরিবর্তন হওয়ার উদ্দেশ্য হলো, সবসময় দুআয় নিমগ্ন থাকলে নিয়তির লিখন ব্যক্তির অনুকূলে হয়। আর আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জীবন সুখ-সমৃদ্ধিময় হয় (মিরকাত)।
যে পিতা-মাতা আমাদের দুনিয়া আখেরাতের সুখ-সমৃদ্ধির সোপান, তার প্রতি স্বভাবতই আমরা মমতাপূর্ণ ও বিনয়াবত আচরণ করবো। তবুও সহজাত এই শিষ্টাচারের প্রতি কুরআন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
আমরা যেন আরো সতর্ক ও আন্তরিক হই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, .. এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সাথে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবত করো এবং দোয়া করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন। (সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)
এজন্য সর্বক্ষেত্রে পিতা-মাতার সাথে আমাদের উত্তম আচরণ বজায় রাখতে হবে। কুরআনে তো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সর্বোত্তম আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ”তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, পিতা-মাতার প্রতি সর্বোত্তম আচরণ করো, পিতা-মাতার কোন একজন কিংবা উভয় যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ পর্যন্ত বলোনা এবং তাদেরকে ধমক দিও না। বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)।
-এটি