আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: খালেদ আর মাজেদ তারা দুই ভাই। একজনের বয়স আনুমানিক ১৪ অপরজনের বয়স ১৬। উভয়েই বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে গেল এবং খুশ গল্প করতে করতে কখন যে গভীর রাত হয়ে গেল তারা টেরও পায়নি ।বহু কষ্টে ঘুম থেকে উঠে ফজরের জামাতে শরিক হলো একজন সেজদায় গিয়ে ঘুমিয়ে গেল এমন ভাবে যে, দুই বাহু পেটের পার্শ্বদেশ এবং ফ্লোরের সাথে লেগে গেল এবং উরুর সাথে পেট লেগে গেল।
অপর ভাই ও ঘুমাল তবে মাসনূন সিজদার হালতে ঘুমাল। দুইজন মুসল্লি তাদের অবস্থা দেখে নামায শেষে পরস্পর বলতে লাগলো উভয় ভাইয়ের ওযু ভেঙ্গে গেছে। তাই তাদের কারো নামাজ হয়নি। অপরজন বলল ,না যে সুন্নত তরিকায় সিজদার হালতে ঘুমিয়েছে তার ওযু ভঙ্গ হয়নি। তার নামাজ পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন আমার জানার বিষয় হল,এই দুই মুসল্লির মধ্যে কার কথা সঠিক? কেউ যদি নামাজের বাইরে সেজদা অবস্থায় ঘুমায় তাহলে ও কি তার ওযু ভেঙ্গে যাবে? বিস্তারিত জানিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন।
উত্তর
নামাযের ভেতরে হোক বা বাহিরে হোক সুন্নত তরিকায় সেজদা করা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে না। এটাই অধিকাংশ আরবি এবং উর্দু ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখিত হয়েছে। অতএব এই হিসেবে যে মুসল্লী বলেছেন, সুন্নত তরিকায় সেজদা না করার কারণে এক ভাইয়ের ওযু ভেঙ্গে গেছে, তার নামাজ হয়নি।
তার কথাই (আপাতত) সঠিক। তবে বাদায়েউস সানায়ে, ফাতহুল কাদির, ফাতাওয়া শামী, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ও আল বাহরুর রায়েক ইত্যাদি কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী নামাজের বাহিরে সুন্নতের খেলাফ তরিকায় সেজদা করা অবস্থায় ঘুমালে অর্থাৎ পেটের সাথে রানকে এবং দুই বাহুকে জমিনের সাথে ও পেটের পার্শ্বদেশের সাথে মিলিয়ে ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে। আর সুন্নত তরিকায় সেজদা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে না।
তবে নামাজের ভেতর সেজদারত অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে না। চাই সুন্নত তরিকায় (রান থেকে পেট কে এবং জমিন ও পেটের পার্শ্বদেশ থেকে বাহুকে আলাদা রেখে )সেজদা করুক বা না করুক।
এই হিসেবে দ্বিতীয় মুসল্লির কথাকে সঠিক বলতে হয় যিনি বলেছিলেন যে অপর ভাইয়ের ওযু ভঙ্গ হয়নি বরং তার নামাজ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কার কথা কে আমরা সঠিক বলবো সেটাই আমাদের কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। আর এটা বুঝতে হলে আমাদেরকে একটু বিস্তর আলোচনা করতে হবে।
এক্ষেত্রে আমাদের সামনে প্রথমে যে বিষয়টি স্পষ্ট হতে হবে তা হল, সেজদারত অবস্থায় অথবা নামাজের ভেতর ঘুমের কারণে ওযু ভঙ্গ হওয়া বা না হওয়ার মূল ভিত্তি কী?
ফাকীহুন নাফস রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. সে ভিত্তিটাই অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন
انما القول بانتقاض الطهارة بالنوم مبني على كونه علة للاسترخاء الداعي للخروج (الكوكب الدري (1/50
অর্থাৎ ঘুমের কারণে ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথাটির ভিত্তি হল, ঘুমের কারণে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়াগুলো ঢিলে হয়ে যায় ফলে পায়ুপথে বায়ু বের হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়।
যদি কারো ঘুম গভীর না হয়ে স্বাভাবিক হয় , শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সতেজ থাকে ,তার প্রতিরোধ ক্ষমতা বহাল থাকে তাহলে এরূপ ঘুমের কারণে ওযু ভঙ্গ হবে না।
সুতরাং কোন ব্যক্তি যখন সুন্নত তরিকায় সেজদা করে অর্থাৎ জমিন এবং পেটের পার্শ্বদেশ থেকে বাহুকে আলাদা রাখে এবং উরু থেকে পেটকে আলাদা রাখে তখন বুঝতে হবে যে, তার ঘুম গভীর হয়নি। এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়া গুলো ও ঢিলে হয়নি ।অন্যথায় সে এ অবস্থায় থাকতে পারত না বরং মাটিতে শুয়ে যেত। আল কাউকাবুদ্দুররী১/৫০
আল্লামা ইবনে হুমাম রহ.বলেন: بخلاف النوم حالة
القيام والقعود والركوع والسجود في الصلاة وغيرها هو الصحيح لان بعض الاستمساك باق إذ لو زال لسقط فلم يتم الاسترخاء
দাঁড়ানো -বসে, রুকু -সেজদা অবস্থায়– চাই তা নামাজের ভিতরে হোক বা বাইরে হোক– ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয় না কারণ তখনও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ধারণ ক্ষমতা কিছুটা হলেও অবশিষ্ট থাকে।কিছুই না থাকলে তো পড়ে যেত। ফাতহুল কাদির ১/৩৮
পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি সুন্নত তরিকায় সেজদা না করলে অর্থাৎ বাহুকে পেটের পার্শ্বদেশের সাথে মিশিয়ে এবং জমিনের সাথে লাগিয়ে ও পেটকে রানের সাথে লাগিয়ে ঘুমালে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়াগুলো ঢিলে হয়ে যায় ,তার প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকে না ফলে বায়ু বের হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয় যার কারণে এভাবে ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। এ কারণেই হানাফী ফকিহগণ বলেছেন,কোন মহিলা সেজদা অবস্থায় ঘুমালে তার ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ মহিলারা যে তরিকায় সেজদা করে তাতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়াগুলো ঢিলে হয়ে যায়।
তবে কিছুসংখ্যক ফকীহ নামাজের ভেতর সেজদারত অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ না হওয়ার কথা বলেন ।চাই সেজদা সুন্নত তরিকায় করুক বা না করুক।এর কারণ হিসেবে তারা ওই হাদিসকে পেশ করেন যাতে সেজদা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ না হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।আর সে হাদিসে সুন্নত তরিকায় সাজদা করতে হবে এমন কোন কথা উল্লেখ নেই।
আল্লামা শামী রহ.ফুকাহায়ে কেরামের উক্ত মতানৈক্যকে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন
اعْلَمْ أَنَّهُ اُخْتُلِفَ فِي النَّوْمِ سَاجِدًا؛ فَقِيلَ: لَا يَكُونُ حَدَثًا فِي الصَّلَاةِ وَغَيْرِهَا، وَصَحَّحَهُ فِي «التُّحْفَةِ»، وَذَكَرَ فِي «الْخُلَاصَةِ» أَنَّهُ ظَاهِرُ الْمَذْهَبِ. وَقِيلَ: يَكُونُ حَدَثًا، وَذَكَرَ فِي «الْخَانِيَّةِ» أَنَّهُ ظَاهِرُ الرِّوَايَةِ، لَكِنْ فِي «الذَّخِيرَةِ» أَنَّ الْأَوَّلَ هُوَ الْمَشْهُورُ. وَقِيلَ: إنْ سَجَدَ عَلَى غَيْرِ الْهَيْئَةِ الْمَسْنُونَةِ كَانَ حَدَثًا وَإِلَّا فَلَا. قَالَ فِي «الْبَدَائِعِ»: وَهُوَ أَقْرَبُ إلَى الصَّوَابِ، إلَّا أَنَّا تَرَكْنَا هَذَا الْقِيَاسَ فِي حَالَةِ الصَّلَاةِ لِلنَّصِّ، كَذَا فِي «الْحلْبةِ» مُلَخَّصًا، وَصَحَّحَ الزَّيْلَعِيُّ مَا فِي «الْبَدَائِعِ» فَقَالَ: إنْ كَانَ فِي الصَّلَاةِ لَا يَنْتَقِضُ وُضُوءُهُ؛ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ: «لَا وُضُوءَ عَلَى مَنْ نَامَ قَائِمًا أَوْ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا». وَإِنْ كَانَ خَارِجَهَا فَكَذَلِكَ فِي الصَّحِيحِ إنْ كَانَ عَلَى هَيْئَةِ السُّجُودِ وَإِلَّا يَنْتَقِضُ. اهـ. وَبِهِ جَزَمَ فِي «الْبَحْرِ» وَكَذَلِكَ الْعَلَّامَةُ الْحَلَبِيُّ فِي «شَرْحِ الْمُنْيَةِ الْكَبِيرِ»
অর্থাৎ সেজদা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে কিনা এ ব্যাপারে ফকিহগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, নামাজের ভেতরে হোক বা বাহিরে হোক সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অযু ভঙ্গ হবেনা। ؛তুহফাতুল ফুকাহা,কিতাবে এটিকে সহীহ আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং খুলাসাতুল ফাতাওয়ায় এটিকে জাহিরুল মাজহাব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন,ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। খানিয়া কিতাবে এটিকে জাহিরুর রিওয়ায়াহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু যাখীরা কিতাবে প্রথম মতটিকেই প্রসিদ্ধ মত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।আবার কেউ কেউ বলেছেন,সুন্নত তরিকায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে না ।অন্যথায় ভঙ্গ হয়ে যাবে। বাদায়েউস সানায়ে কিতাবে এটিকে আকরাব ইলাস সওয়াব (সঠিকতার নিকটতম)হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নামাজের ভেতর সুন্নত তরিকায় না ঘুমালেও ওযু ভঙ্গ না হওয়ার কথা যে বলেছি তা আমরা হাদিসের কারণে বলেছি।ইমাম যায়লাঈ রহ. বাদায়েউস সানায়ের মতটিকেই প্রাধান্য দিয়ে বলেন নামাজের ভেতরে হলে ওযু ভঙ্গ হবে না কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ওই ব্যক্তির উপর ওযু ওয়াজিব নয় যে দাঁড়িয়ে বা বসে অথবা সেজদারত অবস্থায় ঘুমিয়েছে। আর নামাজের বাহিরে হলে সুন্নত তরিকায় ঘুমালে হলে ওযু ভঙ্গ হবে না ।আর সুন্নত তরিকায় না হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইবনে নুজাইম আল বাহরুর রায়েকে এবং আল্লামা হালাভী রহ. শরহুল মুনয়াতে উক্ত অভিমতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ফাতাওয়া শামী ১/১৪২(সাঈদ), আল বাহরুর রায়েক ১/৭৩(থানবী)
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরামের এই একাধিক মতামতের ভিত্তিতেই উর্দু ফাতওয়ার কিতাবগুলোতে দুই ধরনের ফতোয়া দেওয়া হয়েছে ।কেউ কেউ সুন্নত তরিকায় সেজদা করলে অজু ভঙ্গ হবে না বলে ফতোয়া দিয়েছেন ।চাই তা নামাজের ভেতরে হোক বা বাহিরে হোক ।আবার কেউ কেউ নামাজের ভেতরে সেজদারত অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে না বলে ফতোয়া দিয়েছেন ।চাই সুন্নাত তরিকায় সেজদা করুক বা না করুক।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন ফতওয়ার উপর আমল করা অধিক যুক্তিযুক্ত?
অনেক মাসআলা এমন থাকে যা জমানার ব্যবধানে তার মধ্যে পরিবর্তন হয়। মানুষের অভ্যাস ও পারিপার্শ্বিকতা পরিবর্তনের কারণে মাসালায় ও পরিবর্তন সাধিত হয়।
আমাদের আলোচ্য বিষয়টিও এমনই। ফাকীহুন নফস গাঙ্গুহী রহ.এবং ইমামুল আসর আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ.বলেন, বর্তমানে যেহেতু মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল এবং তারা প্রচুর পরিমাণে আহার করে থাকে ফলে পেটের ভেতর গ্যাস ইত্যাদি সৃষ্টি হয় এবং ঘন ঘন বায়ু বের হয় তাই ঘুমিয়ে পড়লে কখন যে তার বায়ু বের হয়ে যায় সে টেরও পায় না।
এজন্য এই ফতোয়া দেওয়াটাই সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে গণ্য হবে যে, নামাযের ভেতর দাঁড়িয়ে বা বসে যে কোন অবস্থায় গভীর ঘুম হলে বা সেজদা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। চাই সুন্নত তরিকায় সেজদা করুক বা না করুক। এবং নামাজের বাহিরে ইমাম তাহাবী রহ.এবং কুদুরী রহ. এর মতামত অনুযায়ী ফতোয়া দেওয়াই সর্তকতা হিসেবে বিবেচিত হবে অর্থাৎ কেউ যদি জমিন বা যানবাহনের আসনে বসে এমনভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে,হেলান দেয়া বস্তু সরিয়ে ফেললে সে পড়ে যাবে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। রশিদ আহমদ গাংগুহী রহ.বলেন
لكن لا ينبغي لاحنا ف زماننا ترك مذهبهم القديم من انه اذا نام على الهيئة الصلاتية لم تنتقض طهارته إذا كثيرا ما راينا من الناس احدث في نومه جالسا متربعا ولم يشعر به1/50 অর্থাৎ আমাদের এই বর্তমান সময়ের হানাফী মাযহাব অনুসারীদের জন্য উচিত হবে, তাদের মাযহাবে গৃহীত পূর্ব সিদ্ধান্ত— নামাজের হালতে ঘুমালে অজু ভঙ্গ হবে না–থেকে সরে আসা। কেননা আমরা অনেক মানুষকে দেখেছি আসন পেতে ঘুমন্ত অবস্থায় তার ওযু ছুটে গেছে অথচ সে তা টেরই পায়নি। আলকাউকাবুদ্দুররী ১/৫০
ইমামুল আসর আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ.বলেন:
وظاهر الرواية فيه ان النوم عند تمكن المقعد لا يفسد ويفسد عند التجافي واما الهيئة التي في كتب الفقه فاول من فصلها الطحاوي ثم تبعه القدوري ثم تبعه الناس وفي الدر المختار ان تمكن مقعده ونام لا يفيد وان طال وفي عبارة وان جلس مستندا فهذا هو المذهب اما الفتوى فانها تبنى على المصالح واختلاف الزمان والمكان فلا يوسع فيها في هذه الايام فانها ايام ياكل فيها الناس كثيرا فيحدثون ما تمكن المقعد
فيض البا ري 1/408 المكتبة الاشرفية
ঘুম ওযু ভঙ্গকারী হওয়ার ব্যাপারে জাহিরুর রেওয়ায়া হলো জমিনে নিতম্ব স্থির রেখে ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে না।নিতম্ব জমিন থেকে সরে গেলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। ফিকহের কিতাবসমূহ ঘুমের যে বিভিন্ন অবস্থা বর্ণিত হয়েছে তা সর্বপ্রথম ইমাম তহাবী রহ.উল্লেখ করেছেন তারপর ইমাম কুদুরী রহ. তার অনুসরণ করেছেন। অতঃপর অন্যান্য ফুকাহায়ে কেরাম তাদের অনুসরণে স্ব-স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
যেমন আল্লামা হাসকাফী রহ. আব্দুররুল মোখতার কিতাবে লেখেন, জমিনে নিতম্ব স্থির রেখে ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে না যদিও ঘুম অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত হয়।অন্যত্র তিনি বলেন,যদিও সে কোন কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমায়।
কাশ্মীরী রহ. বলেন, স্থান-কাল ও পাত্র ভেদে এবং মানুষের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ফতোয়া প্রদান করা হয়। তাই বর্তমান যুগে ঘুম ওযু ভঙ্গকারী হওয়ার বিষয়ে পূর্ববর্তী ফুকাহায়ে কেরামের ন্যায় বেশি ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই ।কারণ এ যুগের লোকেরা অধিক পরিমাণে আহার করে থাকে (যার দরুন পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয় এবং ঘন ঘন বায়ু বের হয়) ফলে নিতম্ব জমিনে স্থির থাকা অবস্থায়ও তাদের ওযু ছুটে যায়।
ফয়যুল বারী ১/৪০৮(মাকতাবায়ে আশরাফিয়া)
এবং নামাজের বাহিরে ইমাম তাহাবী রহ.এবং ইমাম কুদুরী রহ. এর মতামত অনুযায়ী ফতোয়া দেওয়াই সর্তকতা হিসেবে বিবেচিত হবে অর্থাৎ কেউ যদি জমিন বা যানবাহনের আসনে বসে এমনভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে,হেলান দেয়া বস্তু সরিয়ে ফেললে সে পড়ে যাবে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
তাছাড়া বাকি ইমামদের নিকট ও নামাযের ভেতর দাঁড়িয়ে বা রুকু কিংবা সেজদা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই তাই আমাদের জন্য ও ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথা বলাটাই অধিক সতর্কতা মূলক হবে বলে মনে হয়।
ইমাম শাফেয়ী রহ.এর মতে দাড়িয়ে অথবা রুকু কিংবা সেজদা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।আর বসা অবস্থায় ঘুমালে যদি কোমর সোজা থাকে তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে না।আর সোজা না থাকলে ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ইমাম আহমদ রহ.এর মতে দাঁড়িয়ে বা রুকু কিংবা সেজদা অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইবনে কুদামা হাম্বলী রহ. এটিকে ই প্রাধান্য দিয়েছেন।আর বসে ঘুমালে যদি ঘুম গভীর হয় তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে অন্যথায় ভঙ্গ হবে না।
قال الامام الشافعي رحمه الله تعالى
وان نام قاعدا مستويا لم يجب عليه عندي الوضوء- - -وان زال عن حد الاستوائ في القعود نائما وجب عليه الوضوء لان النائم جالسا يكل نفسه الى الارض ولا يكاد يخرج منه شيء الا ينتبه واذا زال كان في حد المضطجع بالموضع الذي يكون منه الحدث
قال واذا نام راكعا او ساجدا وجب عليه الوضوء لانه احرى ان يخرج منه الحدث فلا يعلم به من المضطجع قال ومن نام قائما وجب عليه الوضوء لانه لا يكل نفسه الى الارض - - - -
قال والنوم الذي يوجب الوضوء على من وجب عليه الوضوء بالنوم الغلبة على العقل كائنا ذلك ما كان قليلا او كثيرا فاما من لم يغلب على عقله من موضطجع وغير ما طرق بنعاس وحديث نفس فلا يجب عليه الوضوء حتى يستيقن انه احدث
والاحتياط في المسألة الاولى كلها ان يتوضؤوعليه في الرؤيا ويقين النوم وان قل– الوضوء
قال واذا نام الرجل قاعدا فاحب الي له ان يتوضا قال ولا يبين لي ان اوجب عليه الوضوء
موسوعة الام للشافعي1/38-39 المكتبه التوفيقية
قال العلامة ابن قدامة
فصل والنوم ينقسم ثلاثه اقسام نوم المضطجع ينقض الوضوء يسيره وكثيره في قول كل من يقول بنقضه بالنوم الثاني نوم القاعد ان كان كثيرا نقض رواية واحدة وان كان يسيرا لم ينقص- - - - الثالث ما عداهاتين الحالتين وهو نوم القائم والراكع والساجد فروي عن أحمد في جميع ذلك روايتان احداهما ينقض والثانية لا ينقض الا اذا كثر- - -قال ابن قدامة: والظاهر عنه في الساجد التسوية بينه وبين المضطجع لانه ينفرج محل الحدث ويعتمد باعضاؤه على الارض ويتهيا لخروج الخارج فاشبه المضطجع وقال ايضا والظاهر عن احمد التسوية بين القيام والجلوس لانهما يشتبهان في الانخفاض واجتماع المخرج وربما كان القائم ابعد من الحدث لعدم التمكن من الاستثقال في النوم فانه لو استثقل لسقط
المغني 1/166(دار الكتب العلمية)
নিচে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গাঙ্গুহী রহ. ও কাশ্মীরী রহ. এর পূর্ণ বক্তব্য এবং দারুল উলুম দেওবন্দ ,করাচি এর ফতোয়া উল্লেখ করা হলো:
قال الامام رشيد احمد الكنكوهي: لا خلاف في ان النوم ليس سببا لنقض الوضوء بنفسه وانما القول بانتقاض الطهارة بالنوم مبني على كونه علة للاسترخاء الداعي للخروج وانما الخلاف بينهم في المقدار المعتبر في ذلك الاسترخاء وهو الغلبة على العقل فكل منهم عبر عنه بما كان معتبرا عنده في الغلبة على العقل فالاختلاف في تحديد النوم المعتبر في نقض الطهارة اختلاف تجربة وزمان لا
اختلاف حجة وبرهان وعلى هذا
لا تخالف بين الاقوال التي ذكرها الترمذي هاهنا فان الغلبة على العقل وذهاب الاستمساك جربه بعضهم بالرؤيا وبعضهم بالاضطجاع والمعنى المقصود واحد لكن ينبغي لاحنا ف زماننا ترك مذهبهم القديم من انه اذا نام على الهيئة الصلاتية لم تنتقض طهارته إذا كثيرا ما راينا من الناس احدث في نومه جالسا متربعا ولم يشعر به
الكوكب الدري1/150
وقال الكشميري
وظاهر الرواية فيه ان النوم عند تمكن المقعد لا يفسد
ويفسد عند التجافي واما الهيئة التي في كتب الفقه فاول من فصلها الطحاوي ثم تبعه القدوري ثم تبعه الناس وفي الدر المختار ان تمكن مقعده ونام لا يفسد وان طال وفي عبارة وان جلس مستندا فهذا هو المذهب اما الفتوى فانها تبنى على المصالح واختلاف الزمان والمكان فلا يوسع فيها في هذه الايام فانها ايام ياكل فيها الناس كثيرا فيحدثون ما تمكن المقعد فيض البا ري1/408 المكتبة الاشرفية
سوال نمبر: 67138
عنوان:نوم کی کون کون سی شکلیں ناقض وضو ہیں؟
سوال:نوم کی کون کون سی شکلیں ناقض وضو ہیں، بالتفصیل جواب عنایت فرمائیں. مثال کے طور پر؛ (1) دونوں گھٹنے کھڑے کرکے اور ان کو ہاتھوں سے حبوا بنا کر سونا (2) دایاں پیر کھڑا کرکے اور بایاں پیر ترچھا بچھا ہو, جبکہ بائیں ہاتھ سے آدمی نے سہارا لیا ہو، نوم کے ناقض وضو ہونے کے حوالے سے کوئی ضابطہ ہو تو ضرور بیان فرمائیں۔ جواب مدلل ہو تو مفید ہوگا, تاکہ بوقت ضرورت اصل کتاب تک رجوع کیا جا سکے ۔
جواب نمبر: 67138
بسم الله الرحمن الرحيم
سونے کی صورت میں اگر مقعد زمین پر قائم رہے تو وضو نہیں ٹوٹتا پس سوال میں مذکور دونوں ہیئتوں کے مطابق سونے سے وضو نہیں ٹوٹے گا یہی حکم چار زانو سونے یا سجدہ کی مسنون ہیئت پر سونے کا ہے؛ البتہ اگر آدمی اس طرح سوجائے کہ اس کے اعضا ڈھیلے پڑجائیں اور قوتِ ماسکہ (خروج ریح کو قابو میں رکھنے والی صلاحیت) زائل ہوجائے مثلاً لیٹ کر یا کسی چیز پر ٹیک لگا کر اس طور پر سوئے کہ اگر وہ چیز ہٹا دی جائے تو آدمی گر جائے تو ان صورتوں میں وضو ٹوٹ جائے گا۔ تفصیل کے لیے ملاحظہ ہو شامی زکریا: ۱/۲۷ تا ۲۷۳، احسن الفتاوی: ۲/۲۲، فتاوی محمودیہ: ۵/۶۳) واضح رہے کہ اس دور میں چونکہ کثرتِ اکل کا عام رواج ہے اور آدمی مقعد کے زمین پر استقرار کے باوجود حدث کردیتا ہے؛ ا س لیے اس دور میں ہر اعتبار سے گہری نیند سے سونے کی صورت میں وضو کے ٹوٹ جانے کا حکم لگا دینا مناسب اور مبنی بر احتیاط ہے۔ قال في فیض الباري وظاہر الروایة فیہ: أن النوم عند تمکن المقعدة لایفسد ، ویفسد عند التجافي ․․․․․ وفي الدر المختار: إن تمکن مقعدہ ونام وإن طال وفي عبارة وإن جلس مستندا فہذا ہو المذہب أما الفتوی فإنہا تبتني علی المصالح واختلاف الزمان والمکان فلا یوسع فیہا في ہذہ الأیام فإنہا أیام یأکل فیہا الناس کثیراً فیحدثون مع تمکن المقعدة ․ (فیض الباری)
واللہ تعالیٰ اعلم
دارالافتاء،
دارالعلوم دیوبند
فتوی نمبر :29/2168
উত্তর প্রদানে
মুফতি সাদেকুর রহমান
মুশরিফ
ফতওয়া বিভাগ
শেখ জনূরুদ্দীন র.দারুল কুরআন মাদ্রাসা চৌধুরীপাড়া,ঢাকা।
তারীখ ২৪/৮/২২ ঈসাঈ
-এটি