মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


প্রথম সাময়িক পরীক্ষার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিবে কওমি শিক্ষার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি যুবাইর মাহমুদ রাহমানি: আর কদিন পরেই কওমি শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। এ পরীক্ষাটি সংশ্লিষ্ট বছরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বার্ষিক পরীক্ষার সফল প্রস্তুতির জন্যও আসন্ন পরীক্ষাটি অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে।

পরীক্ষা এলে কিছু ছাত্রের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা ও ভীতি কাজ করে। অথচ পরীক্ষাকে ভয় পাবার কিছু নেই। পরীক্ষা আমাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয়। মূলত আমাদের পুরো জীবনটাই একটা পরীক্ষা। আমরা এ জীবনে দীর্ঘ একটা পরীক্ষার ভেতর রয়েছি। পাক কুরআনে আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা বিষয়টাকে এভাবে বুঝিয়েছেন যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ এবং জীবন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। (সুরা মুলক: ২)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে। আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার ওপরেই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের ওপর মোটেই জুলুম করেন না। (সুরা হা-মিম সিজদা: ৪৬)

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (হাশরের দিন) মানুষের পা একবিন্দু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিকট এই পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা না হবে। এক. নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে? দুই. যৌবনের শক্তি সামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে? তিন. ধন সম্পদ কোথা হতে উপার্জন করেছে? চার. অর্জিত ধন সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে? পাঁচ. এবং (দীনের) যতটুকু ইলম অর্জন করেছে সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে? (জামে তিরমিযী : ৪/২৪১৬)।

আমরা জানি, কবরেও কিন্তু সকল মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। ১. তোমার রব কে? ২. তোমার দীন কী? ৩. এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের মাঝে পাঠানো হয়েছে?

মোটকথা, জীবন মানে পরীক্ষা আর পরীক্ষা ছাড়া জীবনের কোন মানেই হয় না। সুতরাং পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে তা আমাদের জীবনে স্বাভাবিক ব্যাপার মনে করতে হবে। এবং তার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ, পরীক্ষাই আমাদের উন্নতির সোপান। পরীক্ষা না থাকলে ভালো মন্দের মধ্যে মানুষ তফাত করতে সক্ষম হত না। যোগ্য অযোগ্য বাছাই করা যেত না। এজন্য ইতিহাসের বিখ্যাত বীর গাজি সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহিমাহুল্লাহ বলেছেন,الإطمئنان إلى أحد قبل الإختبار حمق পরীক্ষা না করে কারও ওপর আস্থাশীল হওয়া নির্বুদ্ধিতা!

জনৈক দার্শনিক বলেছেন, الإختبار أفضل برهان পরীক্ষা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ!

মনে রাখতে হবে, পরিশ্রম ছাড়া যে বস্তু অর্জন হয়, তার কোনই মূল্য নেই। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সামনে এখন সর্বোচ্চ মেহনত ও পরিশ্রমের সময় এসেছে। এ মুহূর্তে যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর এ অনুভূতি হয়, "আমি আমাকে সবার সামনে প্রতিষ্ঠিত করব, ইনশাআল্লাহ"। যাতে তা আমার মা-বাবার জন্য যুগপৎ গর্ব ও আনন্দের কারণ হয়। কাজেই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আর সবার সেরা হওয়ার সংকল্প করতে হবে।

অতএব, সময় নষ্ট করা যাবে না। সময় হচ্ছে তোমার বন্ধু, যদি তুমি তাকে কাজে লাগাও। কাজেই সময়কে হেলায় ফেলায় নষ্ট করে তাকে শত্রু বানাবে না।

আর হাঁ, ‘একটু পরে পড়া শুরু করব’ বলে সামনের এক মিনিট সময়ও নষ্ট করবে না।

হে শিক্ষার্থী বন্ধু! বিলম্ব না করে তুমি এখনই তড়িৎ উঠে দাঁড়াও। এবং শুরু কর। কারণ, সেরাদেরকে আমরা এমনটাই করতে দেখেছি। সুতরাং তুমিও তাদের একজন হও!

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিআ হোসাইনিয়া মদিনাতুল উলুম, ভোলা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ