আব্দুল মান্নান: মহান আল্লাহ তায়ালার অপরুপ সৃষ্টির মাঝে প্রতিটি মানুষের যেমন রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য। ঠিক তেমনি রয়েছে স্বভাব, চরিত্র, আচার, আচরণেও নানা পার্থক্য।
পাশাপাশি এক বিশাল ভিন্নতা গড়ে উঠেছে রুচি ও সখের মাঝেও। পত্র-পত্রিকা, বিভিন্ন সেমিনার, ক্লাসে শিক্ষকের সামনে ছাত্রের ‘প্রিয় সখ’ টপিকে অনেক লেখালেখি পড়েছি, সরাসরি বিভিন্ন সেমিনারে প্রত্যক্ষও করেছি। প্রিয় সখ বলতেই আমাদের স্মৃতির পাতায় যে বিষয়গুলো ভেসে ওঠে তা হলো- ১. কারও প্রিয় সখ বাগান করা। ২. কারও বা মাছ ধরা। ৩. কেউ বলে ভ্রমণ করা। ৪. আবার অনেকেই বলে আমার প্রিয় সখ বই পড়া।
ছোট বেলা থেকেই বই পড়া ছিল আমার অত্যন্ত ভালো লাগার। তবুও প্রিয় সখের তালিকায় কাউকে বই পড়া নিয়ে লেখালেখি বা কোন সেমিনারে বক্তব্য দিতে দেখলে খুব হাসি পেত। ভাবতাম বই পড়াও কি কারও সখ হতে পারে?
অতঃপর বইয়ের সঙ্গে যখন ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হল, বুঝলাম,নানা সখের মাঝে বই পড়াও অন্যতম একটি সখ। মাছ ধরা, বাগান করা,ভ্রমণ করার মাঝে যেমন আনন্দ রয়েছে, ঠিক তেমনি বইয়ের মাঝেও লুকিয়ে আছে আনন্দ ও মজা। অবশেষে আজ এই আনন্দ ও মজার গভীরতা বুঝতে যখনই নিজেকে হারালাম বইয়ের পাতায়,ডুব দিলাম অতল গহ্বরে, ছুঁতে চেষ্টা করলাম গহীন তলদেশ, ঠিক তখনই ভাবনার পরিবর্তন।
নিজেকে প্রশ্ন করলাম, বই পড়া কি আসলেই সখের হতে পারে ? বই পড়া আমাদের সখের তালিকায় রাখা কতটুকু কাম্য ?
আমার আপনার কাছে মাছ ধরা সখের হলেও জেলের কাছে কিন্তু নয়। ফুল, ফল ও নানা শাক-সবজির বাগান করা আমাদের সখ হলেও কোন মালীর কাছে নয়। ঠিক তেমনি আমাদের সকলের কাছেই ভ্রমণ করাটা সখের বটে কিন্তু নিশ্চয়ই কোন পেশাদার চালকের কাছে নয় ?
আমার বলার জায়গাটা হলো, একজন জেলের কাছে মাছ ধরা, মালীর কাছে বাগান করা ও বাগানের পরিচর্যা করা,তেমনি একজন চালকের কাছে ভ্রমণ করাটা যেমন সখের নয়,এটা তাদের পেশা।
ঠিক তেমনি একজন ছাত্র, একজন শিক্ষক, আলেম, আলেমা,জ্ঞানী গুণী, শিক্ষিত বা চাকুরিজীবী সর্বোপরি আমরা যারা বই পড়তে জানি সকলের কাছেই বই পড়াটা সখ নয়, নেশা বা পেশা হওয়া উচিৎ।
তাই বলি আসুন, বই পড়াটা আমাদের সখের তালিকায় না রেখে দৈনন্দিন জীবনে আমরা রুটিন করে নিই।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া আযমিয়া দারুল উলূম রামপুরা, বনশ্রী, ঢাকা।
-এটি