|| কাউসার লাবীব ||
চলছে তীব্র গরম। গরমে হঠাৎ গরম হয়ে যায় ডিমের দাম। গরমের সিজনে সাধারণত ডিমের দাম কমে। বাড়ে শীতের সময়। কারণ গরমের দিন ডিম দ্রুত পচে যায়। আড়তে রাখা কঠিন। কিন্তু কিছুদিন আগে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার পর পাল্লা দিয়ে বাড়ে ডিমের দাম। অনেকের মনে প্রশ্ন, ‘মুরগি কি ইদানিং তেল খাইয়া ডিম পাড়ে?’
ডিমের চড়া বাজারের লাগাম টানতে বানিজ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ‘প্রয়োজনে ডিম আমদানি করবো’। এরপরের দিন হালিতে ডিম কমে ১০ টাকা। তাছাড়া শোনা যাচ্ছে ডিমের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার পর চাহিদা কমায় বিপাকে পড়েছে খামারিরা।
চলমান আন্ডার বাজার নিয়ে কিন্তু ফেসবুক খুব গরম। বোঝা যায়, লেখক, গবেষক, সেলিব্রেটি, সাংস্কৃতিমনা সবাইকেই ভোগাচ্ছে বিষয়টি।
লেখক গবেষক শরীফ মুহাম্মদ ডিমের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে লিখেন, ‘একটু আগে ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেলাম; প্রায়ই খাই। অনেক বেশি স্বাদ লাগলো। কারণ কী? কারণ চড়ামূল্য তাকে করেছে মহীয়ান। ৮০'র দশকে একটি মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ১৫ টাকা, মনে পড়ে। আজকে ডিম খাওয়ার সময় মাথায় ঘুরছিল, এক অর্থে একটি মুরগির বাচ্চাই তো খাচ্ছি। মুরগির বাচ্চা কিংবা চড়ামূল্যের অনুভূতি মিলিয়ে দেখবেন, ডিমের স্বাদটা কত বেশি লাগে! আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাআলার শোকর, দরকার হলে একটি ডিম আমরা এখনও খেতে পারছি।’
ভাষাবীদ, গবেষক মুহিউদ্দীন ফারুকী লিখেন, ‘ডিম পচনশীল দ্রব্য। দাম না কমা পর্যন্ত ডিম খাওয়া বর্জন করুন। দেখবেন দাম হু হু করে কমে যাবে। অনেকেই বলবেন, সবকিছুর দাম বেশি। ভাই, দাম কমলেও এরা অনেকসময় কমায় না। একটা সিন্ডিকেট করে এরা আমাদেরকে বন্দী করে রেখেছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে এমন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
লেখক, সাংবাদিক মুফতি এনায়েতুল্লাহ লিখেন, ‘ডিম মানে আন্ডা। আরবিতে বলে বয়জা। এটা পোলাপাইনের পছন্দের খাওন। তো এই আন্ডা নিয়ে চলছে তুঘলকি কায়-কারবার। এখন বয়জার হালি ৭০ টাকা। কিন্তু জনাব! আপনি কি জানেন, ডিম শীতকালে ৭-১০ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো থাকে। গরমকালে সেই মেয়াদটা এসে ঠেকে ৩-৪ দিনে। এর পরে সময় পেরিয়ে গেলেই ডিম খারাপ হতে শুরু করে। অন্যদিকে ফ্রিজে রেখে ডিম ১৫ দিনের বেশি খাওয়া উচিত নয়। মোদ্দা কথা, কষ্ট করে মাত্র ১৫ দিন আন্ডা খাওয়া ছাইড়ে দিলে বয়জা তেজারতদের ১৬টা বাজবে। আসুন না, ১৫ দিন একটু কষ্ট করে দেখি, কামডা করণ যায় কিনা।’
শরিফুল ইসলাম রনি নামে একজন শ্যোসালিস্ট লিখেন, ‘ডিম কিন্তু পচনশীল জিনিস আমরা সবাই যদি ১ থেকে ২সপ্তাহ ডিম কিনা বন্ধ করি তাহলে ডিমের দাম কিন্তু অটোমেটিক কমে যাবে। এই গরমে ২ সপ্তাহ আরতে ডিম থাকলে পচে গলে যাবে আর খামারের প্রতি দিনের এতো প্রডাকশন কই যাবে? ডিম বিক্রি না হলে খামারিরা মুরগির খাদ্য কিনবে কিভাবে? যে পণ্য গুলোর দাম বেড়ে চলেছে ওই পণ্যটি আমাদের উচিত কিছুদিন এভয়েড করে চলা। তাহলে আস্তে আস্তে প্রত্যেকটি পণ্যর দাম সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে।’
এদিকে সাপের ডিমের ছবি দিয়ে একজন লিখেন, ‘১ দিন বা এক সপ্তাহ নয়, এক বছর ডিম না খেলেও মানুষ মরে যাবে না। ডিম পচনশীল দ্রব্য এটা এক সপ্তাহ কেনা বন্ধ করে দিন দেখবেন এর দাম কমে গেছে, চলেন তাই করি।’ শেষে লিখেন, পিক ফর এটেনশন।
তবে এসব পরিস্থিতিতে যে ডিম ব্যবসায়ীরা ধীরে বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন তার নমুনা আরিফুল ইসলাম নামে এক ডিম ব্যবসায়ীর পোস্টে পাওয়া যায়। তিনি লিখেন, ‘দোকানে গিয়ে দোকানিকে বলেছেন একটা ডিম দাও দোকানির কাছে ১২ টাকা দাম শুনে বলছেন খাবো না ডিম একটা সিগারেট দাও ১৭ টাকার । বাসায় ফিরে মোবাইল হাতে নিয়ে সিগারেট টানতে টানতে ফেসবুকে লিখেছেন ডিম বয়কট করলাম। একবার এসে দেখে জান কতটা কষ্ট করতে হচ্ছে এই ডিম উৎপাদনের জন্য ।বয়কট করছেন সাথে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত গরিব কর্মীদের বুকে লাথি মারছেন । আমি না হয় খামার বন্ধ করলাম কিন্তু এই লোক গুলির কি হবে?’
কেএল/