মুহাম্মদ আশরাফ আলী: ইসলাম আমাদের সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। এ শিক্ষা ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনেও কাজে লাগাতে হবে। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন এবং অন্য মানুষের সঙ্গে আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও আমাদের সংযমী ও দরদি হতে হবে। অসহিষ্ণুতার মনোভাব ঝেড়ে ফেলতে হবে জীবন থেকে।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম ব্যক্তি যে আপন পরিবার-পরিজনদের কাছে সবচেয়ে উত্তম।’ (ইবনে হেব্বান) আরেক বর্ণনায় আছে, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে নিজ পরিবারের সঙ্গে অধিকতর কোমল আচরণকারী।’
স্বয়ং রসুল (সা.) সহধর্মিণীদের সঙ্গে অত্যধিক নরম-কোমল আচরণ করতেন। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে লোক স্ত্রীর দুর্ব্যবহারে সবর এখতিয়ার করবে সে হজরত আইয়ুব (আ.)-এর মতো পুরস্কার পাবে। আর যে মহিলা স্বামীর দুর্ব্যবহারে ধৈর্য ধারণ করবে সে ফেরাউনের বিদুষী স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিমের মতো পুরস্কারপ্রাপ্ত হবে।’
বর্ণিত আছে, এক লোক হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে স্ত্রীর দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দায়ের করার জন্য হাজির হলো। লোকটি বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে হজরত ওমরের বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকল। এমন সময় শুনতে পেল ওমর (রা.)-এর স্ত্রী তাঁকে শক্ত ভাষায় তিরস্কার করছেন। অথচ তিনি স্ত্রীর কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে চুপ করে সহ্য করছেন। এটা শুনে লোকটি চলে যেতে উদ্যোগী হলো।
সে মনে মনে ভাবল, এমন প্রতাপশালী খলিফার অবস্থাই যখন এই তখন আমি তো কিছুই না। ঠিক সে মুহূর্তে ওমর (রা.) বাইরে এসে দেখলেন লোকটি চলে যাচ্ছে। তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন এসেছিলে, আর দেখা না করে কেনই বা চলে যাচ্ছ?
সে জবাব দিল আমিরুল মোমিনিন! স্ত্রী আমার সঙ্গে যে অসদাচরণ করে, কড়া কথা বলে আপনার সমীপে তার নালিশ জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু শুনতে পেলাম আপনার স্ত্রীও আমার স্ত্রীর মতোই। তাই চলে যাচ্ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম, স্বয়ং আমিরুল মোমিনিনের অবস্থাই যখন এই, তার তুলনায় আমি তো কিছুই না।
তখন ওমর (রা.) বললেন, দেখ ভাই! আমার কাছে তার কিছু অধিকার রয়েছে বিধায় তাকে আমি সহ্য করলাম। সে আমার খাবার পাকায়, রুটি তৈরি করে, কাপড় ধোয়, আমার ছেলেমেয়েদের দুধ পান করায়। অথচ এগুলো তার জন্য অপরিহার্য নয়।
সে এসব কাজ করে দিয়ে আমার মন অবৈধ উপার্জন থেকে বিরত রাখে। এ কারণেই তাকে আমি সহ্য করি। লোকটি তখন বলল, আমিরুল মোমিনিন! আমার স্ত্রীও তো একই রকম করে।
ওমর (রা.) বললেন, তাহলে ভাই! তাকে মেনে নাও। পার্থিব এ জীবন তো কদিনের জন্য মাত্র। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পারিবারিক জীবনে সংযমী হওয়ার সক্ষমতা দান করুন। আমরা যেন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও সংযমী হতে পারি সে তৌফিক দিন।
লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক
কেএল/