।। আব্দুল্লাহ আফফান ।।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অস্থিতিশীল পুরো বিশ্ব। বেড়েছে ডলার ও জ্বালানি তেলের দাম। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। তবে গত শুক্রবার হঠাৎ করেই ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সেই সাথে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। এনিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া দাম এবং ভারতে তেল পাচারের ঝুঁকি কমানো। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে বলেছেন, অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা এডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।
‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি’ বিষয়টি কীভাবে দেখছে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।
হঠাৎ করে ডিজেল ও কেরোসিনের ৪২.৫ শতাংশ অকটেন ও পেট্রলের ৫১শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি নজির বিহীন ও হতাশা জনক আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে পরিবহন,শিল্প- বানিজ্যসহ নিত্যপণ্যের বাজারে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। জনগণ দিশেহারা হয়ে গেছে। জনসাধারণের জীবন জীবিকা অনেকাংশেই অচল হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। অবিলম্বে জ্বালানি তেল,চাল,ভোজ্য তেল,ঔষধও নিত্যপণের মূল্য জনগনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য তিনি আহবান জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশ মহাসঙ্কটে পড়বে। উন্নয়নের চাকা স্থবির হয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ করে তুলবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দাম যেদিন কমলো, সেদিন বাংলাদেশে বাড়লো অস্বাভাবিক ভাবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেও বর্তমানে তেলের বাজার নিম্নমুখী। এই সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে, কেবল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী।
ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী জানিয়েছে, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সরকার জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি করায় বিপাকে পড়েছে সকল পেশার মানুষ। মাস খানেক ধরে বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং তার সাথে নতুন যোগ হলো জ্বালানি তেলের দাম। এর প্রভাব পড়েছে সকল পেশার মানুষের উপর। সকল প্রকার পণ্যের দাম বেড়েছে। পরিবহনের যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ অর্থ।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, সরকারের জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। জ্বালানী তেলের দাম একলাফে প্রতি লিটারে ৩৪-৪৬ টাকা বৃদ্ধি কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বর্তমানে গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম। এ অবস্থায় এভাবে তেলের মূল্যবৃদ্ধি জনগণের উপর চরম জুলুম। দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় উচ্চমূল্যের মধ্যে নতুন করে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সবকিছুর দাম আরো বাড়বে। অবিলম্বে জ্বালানী তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করতে হবে।
ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, হঠাৎ করে ৫১ শতাংশেরও বেশি পর্যন্ত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, জ্বালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। অবিলম্বে জনদূর্ভোগের কথা চিন্তা করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, বিদ্যুৎ লোডশেডিং এ মানুষ বিপর্যস্ত, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিপত্রের দাম বেড়েই চলছে। কোনোভাবেই সরকার নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না, এর মধ্যে সবধরণের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। সরকার গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছিলেন। তখন দাম নির্ধারণ করা হয় ৮০ টাকা লিটার। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর বাস ভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ, লঞ্চ ভাড়া বাড়ানো হয় ৩৫ শতাংশ যা তেলের দাম বাড়ানো হারের চেয়ে অনেক বেশি।
কেএল/