আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: এইডস হচ্ছে বর্তমান সময়ের আলোচিত মারাত্মক মরণ ব্যাধি। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক (টিকা বা ভ্যাকসিন) আবিষ্কার করতে পারেনি। যা ১৯৮১ সালের ৫ জুন সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়।
এশিয়ার মধ্যে ১৯৮৪ সালে থাইল্যান্ডে, ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯৮৬ সালে এবং বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে এ রোগ শনাক্ত হয়। তাই এইডস-এর মতো ভয়াবহ ব্যাধির প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে ‘১ ডিসেম্বর’ বিশ্ব এইডস দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সব রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর শুরু থেকেই শৃংখলিত জীবনের তাগিদ দিয়ে আসছেন।
আল্লাহ মানুষকে রোগ-ব্যাধি দিয়ে থাকেন। কিন্তু কোনো কোনো রোগ মানুষের পাপ তথা সীমালংঘনের কারণেও হয়ে থাকে। যা মানুষের জন্য অভিশাপ। এইডস-এর মতো মরণব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে এবং জাতিকে মুক্ত রাখতে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার বিকল্প নেই। এইডস সম্পর্কিত তথ্য সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। তাই পাঠকদের উপকারার্থে আওয়ার ইসলাম 24 নিউজে তা তুলে ধরা হলো-
সচেতনতা সৃষ্টি করা- এইডস কি? কেন এবং কিভাবে এ রোগের সৃষ্টি হয়? কিভাবে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে? এর পরিণাম কি? এ বিষয়গুলো মানুষকে অবহিত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলেই এইডস-এর মতো মরণ ব্যাধি থেকে সমগ্র জাতি মুক্তি লাভ করতে পারবে।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা- যারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে তুলনামূলকভাবে তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে ৫০% এইডস রোগীর বয়স ১৫-২৪ বৎসরের মধ্যে। সুতরাং প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত তাঁর সন্তান কোথায় যায়, কি করছে এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া। ১৫ বছরের পূর্বে সন্তানরা সাধারণত বাবা-মায়ের সঙ্গেই বেশি থাকে।
তাই তাদেরকে ধর্মীয় জীবন-যাপনের প্রতি জোর দেয়া বাবা-মায়ের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন- হে মুমিনগণ!, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬) যেহেতু পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে, তরুণ-তরুণীরা এইডস ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত।
তাই প্রত্যেক বাবা মায়ের উচিত তাদের সন্তানকে এইডস বিষয়ে সচেতন করে তোলা। তাদের খোঁজ-খবর নেয়া এবং তারা যেন কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা।
যিনা-ব্যভিচার না করা- যিনা-ব্যভিচার ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা যিনার কাছেও যেও না। কেননা এটি অত্যন্ত অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা: আয়াত ৩২)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী স্থান (জিহ্বা) আর দুই ঊরুর মধ্যবর্তী স্থানের (যৌনাঙ্গের) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেব।’ অবাধ যৌনাচার এইডস রোগ হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। তাই আল্লাহর নির্দেশ মেনে অবাধ যৌনাচার থেকে মুক্ত থাকাই কুরআন ও হাদিসের অকাট্য নির্দেশ।
পর্দা মেনে চলা- ইসলামে নারী-পুরুষ সবার জন্য পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে। বেপর্দার কারণে অপর নারীর সৌন্দর্য যেন কাউকে যিনার দিকে প্ররোচিত না করে, সে জন্য ইসলাম বেপর্দায় কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ আবার পরের আয়াতে বলেন, ‘আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে আর তারা যেন তাদের মাথার ওড়না দ্বারা স্বীয় বক্ষ আবৃত করে রাখে। (সুরা নুর : আয়াত ৩০-৩১)
সমকামিতা বন্ধ করা- ইসলামে সমকামিতা নিষিদ্ধ। কুরআনে এসেছে, ‘তোমরা কি তোমাদের যৌন তৃপ্তির জন্য স্ত্রীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষের কাছে আসবে? কুরআনের অন্যত্র এসেছে, ‘তোমরা কামবশত পুরুষদের কাছে গমন করো স্ত্রীদের ছেড়ে, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ আল্লাহর এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে পূর্ববর্তী (কাওমে লুত) জাতিকে, তাদের জনপদকে উল্টিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন।
আজ পর্যন্ত সেই মৃত সাগরে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এছাড়াও সমাজ থেকে নারী-পুরুষের অবাধ যৌনাচার, পতিতালয়, বহুগামিতা ও পরকীয়াসহ সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে শৃংখলাবদ্ধ জীবন-যাপন করার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।
সুতরাং এইডসমুক্ত দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো পালন করা একান্ত জরুরি। এইডসমুক্ত জীবন ধারণে এর কোনো বিকল্প নেই।
ক. ধর্মীয় ও আদর্শ অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামিক স্কলারগণও এ বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন।
খ. এইডসের কুফল গণমাধ্যমে তুলে ধরা। বিশেষ করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে খ্যাত মসজিদের ইমামদেরকে এইচআইভি/এইডসের ওপর বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজে লাগানো। এ ক্ষেত্রে মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার ধর্মীয় যাজকগণকেও এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা।
গ. সব ধরনের অনৈতিক, অবৈধ ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক বর্জন করা। ঘ. যৌন কৌতূহল জাগে বা যৌনকর্ম সম্পাদনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, এমন কাজ বন্ধ করা। যেমন যৌন আবেদনময়ী অশ্লীল উপন্যাস, নোংরা যৌন পত্রপত্রিকা, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর নগ্ন দেহ প্রদর্শনী প্রভৃতি বন্ধ করা।
ঙ. পতিতাপল্লী তথা দেহ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। চ. বিবাহে সক্ষম ব্যক্তিদেরকে বিবাহের প্রতি উৎসাহিত করা। নচেৎ সংযম অবলম্বন করা।
ছ. উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের প্রতি অভিভাবকদের সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা। বয়ঃসন্ধিকালে তাদেরকে ধর্মীয় অনুরাগ ও ধর্মীয় নীতি-আদর্শ মেনে চলার ব্যবস্থা করা। জ. জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে এইআইভিমুক্ত রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া।
ঝ. অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করা। ঞ. দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরকে এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করানো হতে বিরত রাখা।
এইডস আক্রান্তদের প্রতি করণীয়: যারা এইডস আক্রান্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। কারণ এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। সুতরাং তাদের প্রতি সদয় হওয়া, সুস্থ্য জীবন-যাপনে তাদের সহযোগিতা করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই।’
পরিশেষে আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে সুস্থ-সুন্দর-সুনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের জন্য গাইড হিসেবে দিয়েছেন আল কুরআন। এতে রয়েছে বান্দার কল্যাণের পথ নির্দেশ আবার অকল্যাণের কথাও রয়েছে। সুতরাং কুরআন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতের মুক্তি সুনিশ্চিত।
এ বিধান মেনে চলার মাঝেই রয়েছে এইডস-এর মতো মরণ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার উত্তম উপায়। আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে এইডস মুক্ত রাখুন। আমিন।
লেখক: আল মারকাজুল ইসলামী (এ এম আই)
-এটি