সাঈয়েদা হাবিবা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীরা বড় ভূমিকা পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যে দলই ক্ষমতায় এসেছে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নারী। আবার এ সময়ে বিরোধী দলের ভূমিকাতেও ছিলেন নারী। বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী ও স্পিকার সবাই নারী। এ ছাড়া প্রত্যেকে দলেরই নারী শাখা পূর্ণমাত্রায় সচল। শুধু নারী শাখাই নয়, মূল দলেরও রয়েছে নারীদের যথেষ্ট পদচারণা। পক্ষান্তরে ইসলামি দলগুলোর নারী শাখার কার্যক্রম খুব একটা দৃশ্যমান নেই বললেই চলে। এমনিক স্বাধীনতার পর থেকে কোনো একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। এমনকি কোনো ইসলামি রাজনৈতিক দলের নারী নেত্রীকে সমাজে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করতেও দেখা যায়নি।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানের নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাবলিগ জামাতের নারীরা তাদের কাছে দাওয়াত নিয়ে আসলেও ইসলামি কোনো রাজনৈতিক দলের দাওয়াত তারা পান না। এছাড়াও অনেক এলাকাতেই তাবলিগ জামাতের নারীদের সাপ্তাহিক কার্যক্রম নিয়মিত চললেও ইসলামিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিয়মিত চলে কিনা সেটা জানা যায়নি। আদমশুমারি ২০২২ রিপোর্টে বলা হয়, দেশে এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪। নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। এবারই প্রথম বাংলাদেশ পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। আগের আদমশুমারিতে নারীর সংখ্যা বেশি না হলেও প্রায় সমান সমান ছিলো। সুতরাং কোনো ইসলামি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে চাইলে তাদেরকে অবশ্যই নারীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যান অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চলে। আমি ছোট থেকেই ইসলামি পরিবারে বড় হয়েছি। কোনো একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে কাজ করতে আমার ইচ্ছা করে। কিন্তু ইসলামি রাজনৈদিক দলের সচল কোনো নারী শাখা আমি দেখতে পাই না। অনেক বই পড়েছি। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম এটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের আলেম সমাজ অথবা ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো এই পূর্ণাঙ্গ দিকটিই তুলে ধরতে পারছে না বলে আমার মনে হয়।
ইসলামি একটি রাজনৈতিক দলের সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো মূলত তাদের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতাই শুধু পূর্ণ করে। এক্ষেত্রে তাদের স্বতঃস্ফুর্ত কোনো কাজ নেই।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, আমাদের দলের নারী শাখা সচল। তারা দাওয়াত কাজ করে চলছে। রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি তারা তালিম-তারবিয়া ও সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব ও ঢাকার ইসলামবাগ মাদরাসার শাইখুল হাদিস ও প্রিন্সিপাল, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, আমাদের মূল দলে নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে ৩৩ শতাংশ নারী রাখা হয়েছে। এছাড়াও নারীদের মাঝে চলছে পরিপূর্ণ মাত্রায় দাওয়াতি কাজ। ভবিষ্যতে এ কাজের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
ইসলামি অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো যদি নারীদের দাওয়াতি কাজর্যক্রেমের উপর জোর দেয় তাহলেই তাদের ক্ষমতায় আসা অনেক সহজ হয়ে যাবে। ইসলাম একজন নারীকে যে অধিকার ও নিরাপত্তা দিয়েছে সেটা আর কেউই দেয়নি। দিতেও পারবে না। সুতরাং ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে ইসলামি দলগুলোর ক্ষমতায় আসা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ২০০২ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। তার ক্ষমতায় আসা ও টিকে থাকার পিছনে নারীরা বড় ভূমিকা রেখেছেন বলে ধারণা করা হয়। কারণ তিনি রাজনীতিতে আসার পর থেকেই নারীদের নিয়ে অনেক কাজ করে আসছেন।
-কেএল