শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কোনো বই পাঠের পূর্বে লেখক সম্বন্ধে যা জেনে নেয়া দরকার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।। মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন ।।

যেকোনো দ্বীনী গ্রন্থ পাঠ করার পূর্বে গ্রন্থটির লেখক সম্বন্ধে কিছু বিষয় জেনে নেয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ঐ গ্রন্থের লেখক হবেন পাঠকারির উস্তাদ। পাঠকারী হবে তার ছাত্র। আর কোন উস্তাদ সঠিক জ্ঞানের অধিকারী না হলে তার থেকে জ্ঞান অর্জনকারী ছাত্রের জ্ঞানও সঠিক হয় না। উস্তাদ সঠিক চিন্তাধারার অধিকারী না হলে ছাত্রের মাঝে তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই যেকোনো গ্রন্থ থেকে জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে তার লেখক সম্বন্ধে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই জেনে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে দ্বীনী শিক্ষার বিষয়টি খুবই নাজুক, এ ক্ষেত্রে সাবধানী না হলে, কার থেকে দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে তা বিবেচনায় না রাখলে দ্বীন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। এজন্যই প্রসিদ্ধ তাবিয়ী হযরত ইবনে সিরীন রহ. বলেছেন, إن هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم. অর্থাৎ, ইলম হচ্ছে একটি দ্বীনী বিষয়। অতএব লক্ষ্য রেখো কার থেকে তোমরা তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছো। (মুকাদ্দামায়ে মুসলিম)

অতএব যার গ্রন্থ পাঠ করা হবে তার ব্যাপারে সাবধানী হতে হবে। এ পর্যায়ে যে বিষয়গুলো যাচাই করে নিতে হবে সেগুলো হচ্ছে-
১. কোন দ্বীন-ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ নির্বাচন করতে হলে সর্বাগ্রে যাচাই করে নিতে হয় গ্রন্থটির লেখক হকপন্থী লোক কি না। হকপন্থী নাহলে তার লেখা গ্রন্থ পাঠ করা যাবে না। কারণ লেখক বাতিলপন্থী হওয়ায় সে নিজে গোমরাহ, অন্যদের গোমরাহির কারণ, সে নিজে খেয়াল খুশি মত চলে, সে নিজে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত। অতএব তার কথার অনুসরণ করা যাবে না। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
ولا اتبعوا أهواء قوم قد ضلوا من قبل واضلوا كثيرا وضلوا عن سواء السبيل.

অর্থাৎ, তোমরা ঐসব লোকের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না যারা ইতিপূর্বে নিজেরা গোমরাহ হয়েছে, অন্য অনেককে গোমরাহ করেছে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। (সূরা মায়েদা: ৭৭)

অতএব সাধারণ লোক (অর্থাৎ যারা ধর্মীয় বিষয়ে বিজ্ঞ নন তারা) কোন বাতিলপন্থী লোকের বই তদ্রূপ তাওরাত, ইঞ্জীল, বেদ, উপনিষদ, পূরাণ, ত্রিপিটক প্রভৃতি বিধর্মীদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন। তাদের পক্ষে এরূপ গ্রন্থ পাঠ বিভ্রান্তির আশংকা থেকে মুক্ত নয়।

কেউ বলতে পারেন আমরা ভালটি গ্রহণ করব মন্দটা গ্রহণ করব না, তাহলে তো চলে। এ ক্ষেত্রে কথা হল আপনি যদি ভাল-মন্দ যাচাই বাছাই করার পূর্ণ যোগ্যতা রাখেন, তাহলে ঠিক আছে- আপনি এ ধরনের গ্রন্থ পাঠ করতে পারেন। নতুবা ভাল মন্দ যাচাই করার যোগ্যতায় অভাব থাকার কারণে মন্দটাকেই ভাল বুঝে গ্রহণ করে নিলে আপনি নির্ঘাত বিভ্রান্তির শিকার হবেন। এ কারণেই সাধারণ লোকদের জন্য নীতি হল তারা কোন বাতিলপন্থীর লেখা গ্রন্থ বা ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা থেকে বিরত থাকবে।

২. লেখক যোগ্য আলেম ও নির্ভরযোগ্য কি না জেনে নিতে হবে। যোগ্য আলেম না হলে তার লেখা গ্রন্থ পাঠ করা যাবে না। লেখক আলেম না হলে যদি কোন নির্ভরযোগ্য আলেম বা নির্ভরযোগ্য কিতাবের বরাতে সবকিছু লিখে থাকেন তাহলেও চলতে পারে। লেখক আলেম না হলে বা আলেমের তত্ত্বাবধানে না লিখলে তার লেখা জাহালাত থেকে মুক্ত হবে না। আর সেই জাহালাতের অনুসরণ গোমরাহির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ধরনের লোকদের সম্পর্কেই একটি হাদীছে এসেছে- فسئلوا فافتوا بغير علم فضلوا واضلوا.

অর্থাৎ, তাদেরকে (দ্বীনী বিষয়াদি সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হবে আর তারা ইলম ছাড়াই সমাধান বলে দিবে। ফল এই দাঁড়াবে যে, তারা (নিজেরা তো) গোমরাহ রয়েছে (অন্যদেরকেও) গোমরাহ করল। (বোখারী ও মুসলিম)

৩. লেখকের মধ্যে ইলম অনুযায়ী আমল আছে কি না, লেখক আদর্শবান ব্যক্তি কি না দেখে নিতে হবে। বে-আমল আলেম ও আদর্শহীন ব্যক্তি তার বে-আমলী ও আদর্শহীনতা ঢাকা দেয়ার জন্য যে বিষয়ে তার আমল নেই বা যে বিষয়ে তার আদর্শ ঠিক নেই সে বিষয়ের বর্ণনায় বিকৃতির পথ ধরতে পারে। ইতিহাসে এর বহু প্রমাণ রয়েছে। তাই লেখকের মধ্যে ইলম অনুযায়ী আমল আছে কি না, লেখক আদর্শবান ব্যক্তি কি না দেখে নেয়ার মধ্যেই সতর্কতা। তবে কোন লেখা যদি আমল বা আদর্শের সাথে সম্পর্কিত না হয়, নিছক ইলমী তাহকীক বিষয়ক হয়, সেক্ষেত্রে আমল না থাকার বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ায় এরূপ ক্ষতির দিক নেই।

কোন গ্রন্থের লেখক সম্বন্ধে যেসব বিষয় যাচাই করা প্রয়োজন সেগুলো যাচাই না করে সে গ্রন্থ পাঠ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সেরূপ গ্রন্থ থেকে কোন তথ্য প্রচার করাও ঠিক নয়। তাতে হেদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহী এসে যেতে পারে, হেদায়েত প্রচারের পরিবর্তে গোমরাহী প্রচার হয়ে যেতে পারে। আল্লাহর কাছে আমরা সব ক্ষেত্রে তাওফীক কামনা করি। আমীন!

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ