মাহমুদা খাতুন তামান্না।।
মায়ের বিয়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন পুত্র। বাবা মারা গেছেন। বড় ভাই বিবাহিত। সে নিজেও কিছুদিন পর বিয়ে করবে। মা একাকী থাকবেন৷ তাই মাকে বিয়ে দিতে ধার্মিক সৎ পাত্র খুঁজছেন ছেলে। মন ছুঁয়ে যাওয়া একটি বিষয়। আমি মনে করি ছেলেটির চিন্তা ভাবনা অতি উত্তম। নিঃসঙ্গ বিধবা মায়ের জন্য বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং পরিবার খুঁজছেন। ইসলাম আমাদের এমনটাই শিক্ষা দেয়। মায়ের জন্য পাত্র দেখা সন্তানকে মোবারকবাদ জানাই।
বিধবা নারীকে বিয়ে করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। প্রিয়নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম বিয়ে করেন তাঁর থেকে প্রায় অধের্ক বয়স বেশি ৪০বছর বয়স্কা বিধবা নারী আম্মাজান হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা. কে। খাদিজা রা. এর ইন্তেকালের পর ক্রমান্বয়ে দশজন নারীকে বিবাহ করেন। যাদের আটজনই ছিলেন বিধবা নারী।
তারা হচ্ছেন, ১. হযরত হাফসা রা. ২. হযরত সওদা রা.। ৩. উম্মুল মাসাকীন হযরত জয়নব রা. ৪. হযরত উম্মে সালমা রাঃ ৫. হযরত জুআইরিয়া রা. ৬. হযরত উম্মে হাবীবা রা. ৭. হযরত মাইমুনা রা. ৮. হযরত সফিয়্যা রা.।
প্রিয়নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামাজিক ও মানবিক কারণে, ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে তৎকালীন আরবের কুসংস্কার উচ্ছেদ করার জন্য এসব বিয়ে করেছিলেন।
বর্তমান সমাজে স্বামী মারা যাবার পরে স্ত্রীকে নিয়ে কেউই চিন্তা করেন না। যেন সেও মৃত্যুপথযাত্রী। অথচ মানবতার ধর্ম ইসলাম কতই না উত্তম সমাধান দিয়েছে!
আর কুমারী নারীর চেয়ে বিধবা নারীর বিয়ে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার বিয়ে না হলে অনেক সময়ই শারীরিক সুস্থতা, ইজ্জত, কখনো দ্বীন ধর্ম এমনকি সবকিছুই বরবাদ হয়ে যায়। (তাফসিরে ইবনে কাছির (সুরা নুর : ৩২) ৩/২৮৭; তাফসিরে তাবারি : ১৮/১২৫)
বিধবা হওয়ার পর নারীকে সামাজিক মর্যাদা এবং নিরাপত্তার জন্য ফের বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। হারাম সম্পর্কে জড়ানোর চেয়ে বিয়ে উত্তম। হাদিস শরীফে এসেছে, যখন কোনো সমাজে ব্যাপকভাবে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পরে, তখন আল্লাহ তায়ালা মহামারী পাঠান। ( ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা (অশ্লীলতার প্রচার করে) এবং চায় ঈমানদারদের মাঝে ব্যভিচারের প্রসার ঘটুক তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা নুর)
বিধবা বিয়ে সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে বিভিন্ন উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম কোনো বিধবাকে অবজ্ঞার চোখে দেখে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের নিজেদের স্ত্রীদের রেখে যাবে, সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা (ইদ্দত পালন) করবে। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোনো পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’ {সূরা আল বাকারা : ২৩৪}
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, বিধবা এবং মিসকিনের সহযোগিতাকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায়, বা সর্বদা রাতে নামাযরত ও দিনের বেলা রোযাদার ব্যক্তির মতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৩৮,৫৩৫৩}
বিয়ে ছাড়া থাকা ইসলাম পছন্দ করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও।’ (সুরা নুর : ৩২)
আয়াতে উল্লেখিত ‘আইয়াম’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রত্যেকটি এমন নর ও নারী, যার বিবাহ বর্তমান নেই। অর্থাৎ, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত অথবা বিধবা। এমন নর ও নারীদের বিবাহ সম্পাদনের জন্যে তাদের অভিভাবকদের আদেশ করা হয়েছে। এখানে শরিয়তের চাহিদা হচ্ছে, কোনো পুরুষ বা নারী যেন বিয়ে ছাড়া না থাকে। এতে করে বিপথগামীতা ও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার রাস্তুা বন্ধ হয়ে যায়।
-এটি