।। মুফতি আব্দুল মাজিদ ।।
মানুষের জীবনের দুটো পার্ট, একটি পার্টে তার শরীর নির্মাণ হয় ( মাতৃগর্ভে) ৷ আরেকটি পার্টে নির্মিত দেহ নিয়ে আশি বছরের জীবন পার করতে হয় ৷ নির্মাণ হয় মাত্র ১০ মাসে চলতে হয় দীর্ঘ ৮০ বছর ৷ নির্মাণের সময় সে যদি কোন ঘাটতি বা শুণ্যতা নিয়ে বের হয় তাহলে পরবর্তীতে কোনভাবেই সে ঘাটতি পূরণ হওয়া সম্ভব হয় না ৷
যেমন আমারা দেখি, কোন বাচ্চা মায়ের গর্ভে তার দেহ যখন নির্মাণ হয়েছে তখন সে পা না নিয়ে বেরিয়েছে, পৃথিবীর কোন গবেষণাগার বা ল্যাবরেটরির তৈরি পা মায়ের গর্ভে তৈরি হওয়া পায়ের প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারবে না, বা আল্লাহ প্রদত্ত পায়ের বিকল্প হবে না ৷
ঠিক তেমনি ভাবে একজন ছাত্র ভাইয়ের মাদ্রাসা বা স্কুলের ছাত্র জীবনটা হচ্ছে যোগ্যতা বিনির্মাণের জীবন ৷ এখানে যদি সে যোগ্যতার লাইনে কোন ঘাটতি নিয়ে সময়টা পার করে চলে যায় পরবর্তীতে কোন ধরনের কোন চেষ্টা তার এই ঘাটতিকে পূর্ণ করতে পারেনা ৷ যেভাবে সদ্য ভুমিষ্ট বাচ্চার জন্য কোন প্লাস্টিক বা লোহা বা স্টিলের পা মায়ের গর্ভের পায়ের বিকল্প হতে পারে না।
প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা ! আমরা আরোএকটি ধোকার মধ্যে আছি, সেটা হচ্ছে আমরা যারা জীবন ও সময়ের সাথে ছিনিমিনি খেলছি তারা এর কুফলটা সাথে সাথে দেখতে না পারার কারণে ভাবছি যে , কই আমি সময় নষ্ট করলাম তাতে কি হল ?
কিন্তু মনে রাখতে হবে এইমাত্র জন্ম নেয়া শিশুটি পা না নিয়ে আসলে বা মায়ের পেট থেকে হাত না নিয়ে আসলে সে যেমন বুঝতে পারে না যে কি অপূর্ণতা তার মধ্যে আছে ৷ দুই বছর পরে যখন হাটতে বা দৌড়াতে যাবে তখন সে বুঝতে পারবে কি ঘাটতি আর অপূর্ণতা নিয়ে সে দুনিয়াতে আসছে ৷ অর্থাৎ প্রতিটা ঘাটতি সৃষ্টি হয় এক জায়গায় উপলব্ধি হয় আরেক জায়গায় ৷
তো ঠিক মাদ্রাসার জীবন শেষ করার পরে কর্ম ও বাস্তব জীবনে যখন আপনি বের হবেন তখন ওই শিশুটির মতো আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার ঘাটতি গুলো আপনাকে ও আপনার গ্রহনযোগ়্যতাকে কিভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে ৷ আপনাকে একজন অযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে সমাজ তুলে ধরছে ৷
তাই আপনার অলসতা উদাসীনতার পরিণতি এই মুহূর্তে চোখে না দেখতে পারার কারণে আপনি ধোকার মধ্যে পড়বেন না ৷ ছাত্র জামানা শেষ হওয়ার পর অবশ্যই দেখতে পাবেন ৷
সেজন্য অপূর্ণতা নিয়ে জন্ম নেয়া সদ্য ভুমিষ্ট বাচ্চা যেমন বেমালুম জানে না কি ভয়াবহ ঘাটতি তার মধ্যে আছে, কত মস্ত বড় বিপদের মধ্যে তাকে পড়তে হবে ৷
বরং অন্য দশটা বাচ্চার মত দুধ খেতে থাকে আর খেলতে থাকে, আপনিও তার মত ভুলে গেছেন ৷ আপনার মোবাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকা আপনাকে কি ধরনের সমস্যার মধ্যে ফেলছে বা ফেলবে ফারিগ হওয়ার পর আপনি হাড়ে হাড়ে বুঝবেন ৷
কর্মজীবনে দৌড়ানোর জন্য যে যোগ্যতারপা দরকার সেটা আপনি না নিয়েই নির্মাণের সময়টা পার করে ভূমিষ্ঠ হচ্ছেন যা আর পুরণ হওয়ার নয় ৷ তাই পা ওয়ালারা দৌড়ে অনেকদূর চলে যাবে আর পা না থাকার কারণে আপনি অনেক পিছনে পড়ে যাবেন ৷ অথচ যাত্রা একই সাথে শুরু হয়েছিল ৷
ফলে এখন বাচ্চার মত আপনি না বোঝার কারণে ধোকার মধ্যে পড়বেন না, কাল বা আগামী সপ্তাহে অবশ্যই বুঝে যাবেন ৷
এই দরদ মাখা কথাগুলো আশা করি তালবে ইলিম ভাইরা শুনবে বুঝবে এবং মানবে ৷
আল্লাহ আপনাদেরকে আগামী দিনের উম্মতের যোগ্য কান্ডারী হিসাবে কবুল করেন ও উম্মতের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ইলমী উপাদান গ্রহণ করে নির্মাণের টাইম পার করার তৌফিক দিন ৷ সব ঘাটতি দূর করে পূর্ণতা নিয়ে বের হওয়ার তৌফিক দান করেন ৷ আমিন ৷৷
লেখক: শিক্ষক, গবেষক ও দাঈ।
-কেএল