শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


পৃথিবীতে অশান্তির মূল কারণ আমাদের আমলই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ।
কাতার থেকে>

ইসলামের বিজয়, সামাজিক সৃঙখলা, পারিবারিক শান্তি সবই আটকে দিয়েছি আমরা নিজেরাই নিজেদের আমল দ্বারা। গোটাবিশ্বেই মুসলিমরা নির্যাতিত। সমাজে অনৈতিক কর্মকান্ডের ছড়াছড়ি। ঘরে ঘরে বিরাজ করছে অশান্তি। অন্যকে কষ্ট দেয়া কত বড় গোনাহ সেদিকে আমাদের খেয়াল নাই। ইসলামী জীবন কেমন? কোন কাজে শরিয়তের বিধান কী? আমরা জানি না।

আখেরাতে আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাব দিতে হবে, এই কথা স্মরণ আছে বলে মনে হয় না আমাদের কাজকর্মে। একে অন্যকে কীভাবে ঠকাবো, কীভাবে যেকোনোভাবেই সম্পদের মালিক হব? এই চিন্তা আমাদের মাথায় ঘুরে। নিজেরাই নিজেদের কাজ দিয়ে সমাজ ও পরিবারে অশান্তি ডেকে এনেছি। নিজের আমলের দিকে নজর দেয়ার সময় কারো নাই। আমরা শুধু দোষ দিচ্ছি অন্যের।

কিন্তু দোষ আসলে কার? আল্লাহ তায়ালা বলেন وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। সুরা আশ শুরা, ৩০।

আমরা অনেকেই নিজের দোষ দেখি না। সব কিছুই অন্যের কারণে হচ্ছে বলে মনে করি। তাই সমাজের বাস্তব চিত্রের দিকে একটু নজর দেয়া যাক।

গরুর দুধ যারা বিক্রি করেন তাদের মধ্যে শতকরা কতজন আছেন যারা পানি মেশান না? যারা গরুর গোস্ত বিক্রি করেন, তাদের মধ্যে শতকরা কত জন আছেন যারা ওজনে কম দেন না?

যারা স্বর্ণের ব্যবসা করেন, তাদের মধ্যে শতকরা কতজন আছেন যারা ভেজাল করেন না? যারা কাপড় বিক্রি করেন, যারা মাছ বিক্রি করেন, যারা তরকারি বিক্রি করেন তাদের মধ্যে শতকরা কতজন আছেন যারা খারাপটাকে ভাল বলে বিক্রি করেন না? যারা খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করেন, তাদের মধ্যে শতকরা কতজন আছেন যারা ভেজাল করেন না?

যারা বিচার করেন ও নেতাগিরী করেন তাদের মধ্যে শতকরা কতজন আছেন যারা প্রভাবশালীদের পক্ষে রায় দেন না? দেশে ভেজাল ছাড়া জিনিসপত্র শতকরা কতভাগ আছে? ব্যবসায়ীদের মধ্যে অবৈধভাবে দাম বাড়িয়ে দেন না এমন কতজন আছেন?

মিথ্যা বলে স্বার্থসিদ্ধি করেন না এমন মানুষ কতজন আছেন সমাজে? ছোগলখুরি করেন না, গীবত করেন না, অন্যের ক্ষতিসাধনের চিন্তায় থাকেন না, এমন মানুষ কতজন আছেন সমাজে? নামাজ ঠিক মত আদায় করেন এমন কতজন আছেন? ফজরের নামাজে কতজন হাজির হন? প্রতিদিন কোরান মজিদ পড়েন ও জিকির আজকার করেন এমন মানুষ সমাজে শতকরা কতজন আছেন?

উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর শতকরা ১০ বা ৫ হবে। এর চেয়ে বেশি হবে না। তাহলে আমরা কীভাবে আশা করতে পারি আমাদের দেশে, সমাজে ও পরিবারে শান্তির?

উপরেই কোরান মজিদের আয়াত উল্লেখ করেছি, যেখানে বলা হয়েছে সবখানে আজ অশান্তির কারণ আমাদের আমল।

আমরা যদি আমাদের আমল শুদ্ধ করে নেই, যদি কোরান ও হাদিস মত চলি, যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত মত আমল করি তাহলে আমাদের দেশে, সমাজে ও পরিবারে শান্তির সুবাতাস বইবে আজো। আল্লাহ তায়ালা বলেন وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। সুরা আ'রাফ, ৯৬।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। সুরা নূহ, ১০ থেকে ১২।

কোরান মজিদের আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের মধ্যে অশান্তির কারণ হলো আমাদের আমল। আর যদি আমরা আমাদের আমল শুদ্ধ করে নেই, ইস্তেগফার ও তাওবাহ করি, তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য শান্তি, সম্পদ, নিরাপত্তা ইত্যাদি দান করবেন।

এখন কথা হল আমরা অনেকেই এইসব কথা জানি, অনেকেই ওলামায়ে কেরামের কাছে শুনেছি। তবুও নিজেকে সংশোধন করতে পারছি না। কীভাবে আমরা আমাদের আমল শুদ্ধ করবো? কীভাবে গোনাহ ত্যাগ করবো? অনেকে আবার বুঝতেও পারি না যে, আমি ভুলের মধ্যে আছি। নিজের আমলের প্রতি কখনো নজর দেয়ার সুযোগ হয় না।

শুধু অন্যের দোষ তালাশ করি। আজ নয় কাল শুদ্ধ হবো বলে বলে মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছি। কেন নিজেকে শোধরাতে পারছি না? কীভাবে পারবো? এইসব প্রশ্নের একমাত্র উত্তর হলো কোনো আল্লাহ ওয়ালা নেককার আলেমের হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহণ করা। নিজেকে শোধরানোর জন্য এর চেয়ে ভাল কোনো পদ্ধতি নাই।

হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. বলেন এক বছর কিতাব পড়ে যে ফায়দা অর্জন করা যায়, তার চেয়ে বেশি ফায়দা অর্জন করা যায় নেককার ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে এক দিন থাকার মধ্যে।

তাই আমাদের উচিত নিজেকে কোনো নেককার আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তির কাছে সোপর্দ করা। তার কাছে নিজের আমলের কথা বলা ও সমাধান চাওয়া। উনার বলে দেয়া আমলগুলো ঠিক মত আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক: সাহেবজাদা, শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসহাক রহ.

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ