আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাখা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি কনটেইনার থেকেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ডিপো কর্তৃপক্ষ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডবাহী ৩৭টি কনটেইনার দীর্ঘদিন ধরে ইয়ার্ডে রাখায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। দুর্ঘটনার জন্য ডিপো মালিক, শিপিং এজেন্ট ও সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী।
দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটির তদন্তে এসব বিষয় ওঠে এসেছে। আগামীতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য ২০টি সুপারিশ করেছে কমিটি। দুর্ঘটনার কারণ, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ ও এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করেছে কমিটি।
লাইসেন্স প্রধানকারী ২৫টি প্রতিষ্ঠানের সদস্যকে আইসিডি নীতিমালার তদারক কমিটিতে অন্তভভূক্ত ও ডিজি গুডস সংশ্লিষ্ট ১৯৫৩ সালের আইন পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে কমিটি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ২৫৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ ১৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এ সময় কমিটির অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এক মাস একদিন পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদন এখনো খোলা হয়নি, তাই প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা কেবিনেটে পাঠাব। সেখান থেকেই এ বিষয়ে জানানো হবে।’
কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের ১৩টি সংস্থা কমিটিতে কাজ করেছে। পাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শীসহ ২৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছে। তিনটি ল্যাবে দুর্ঘটনার ১৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা সম্ভভ হয়নি। দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১৩ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ ও দায়-দায়িত্ব নির্ণয় এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে। কমিটি ঘটনার কারণ ও দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে ২০টি সুপারিশ করেছে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে দুর্ঘটনা ঘটেছে। মালিক, শিপিং এজেন্ট ও সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থা দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।
জানা গেছে, বিএম ডিপোতে মোট ৩৭টি কনটেইনার ছিল। প্রতি কনটেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি ৬৮০টি জেরিকেন ছিল। প্রত্যেক জেরিকেনে ৩০ লিটার করে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাখা হয়েছিল।
সেই জারও উৎপাদন হয়েছে আল রাজি ক্যামিকেল কমপ্লেক্সে। কিন্তু তাদের ইউএন সনদ ছিল না। সেখানে বেশ কয়েকটি কনটেইনার ৪০ দিন ধরে পড়েছিল। ফলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় উত্তাপ থেকে বিস্ফোরণ এবং পরে আগুন লাগে। এসব পণ্য ডিপো মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড রপ্তানি করছিল। মার্কস লাইন ও ওয়ান লাইন শিপিং নামে দুটি শিপিং এজেন্ট পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে ছিল। নির্ধারিত সময়ে প্রথমবার রপ্তানিকারক জাহাজে তুলতে পারেনি। পরে শিপিং প্রতিষ্ঠান বারবার সময়ক্ষেপণ করেছে।
তদন্ত কমিটি ২৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করলেও বিএম ডিপোর তদন্ত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে পায়নি তদন্ত কমিটি। বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হলেও শুনানিতে হাজির হননি, লিখিত কোনো বক্তব্যও দেননি। এর মধ্যে বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জিয়াউল হায়দার বিদেশে অবস্থান করছে বলে জানতে পেরেছে তদন্ত কমিটি। জিএম মার্কেটিং নাজমুল আকতার খান বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের মামলায় এহজারভুক্ত আসামি, তিনিও পলাতক রয়েছেন।
গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ৪৯ জন নিহত হন। সবশেষ আরও দুজনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। ৫ জুন ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, বন্ড কমিশনারেট, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কোনো কমিটি প্রতিবেদন জমা দিল।
-এটি