সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


হজের মাস: বিধান, ফজিলত ও হাদিসে রাসুল সা.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা আব্দুল্লাহ আল কাউসার: ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির একটি হলো হজ্ব। আসুন হজ্ব সম্পর্কে আলোচনা করি- (১)- কাদের উপর হজ্ব ফরয ?

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন - لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا ؕ وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয। আর কেউ কুফর করলে আল্লাহ তো বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন! —আল ইমরান - ৯৭

(২)- হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। (ক). মুসলিম হওয়া। (খ). আকল থাকা—অর্থাৎ বিবেকবান হওয়া, পাগল না হওয়া।
(গ). বালেগ হওয়া/প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। (ঘ). আজাদ বা স্বাধীন হওয়া—অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না হওয়া।

(ঙ). দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। সামর্থবান বলতে দৈনন্দিন খরচ বাদে হজ্বে আবশ্যকীয় প্রয়োজনে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তথা যাওয়া আসা, সেখানে থাকা খাওয়া ইত্যাদি পরিমাণ টাকা থাকলে ব্যক্তির উপর হজ্ব করা ফরজ হয়ে থাকে। সে হিসেবে দেখতে হবে বর্তমানে হজ্ব করতে গেলে কত টাকা লাগবে। সে টাকা উক্ত ব্যক্তির কাছে থাকলে তার উপর হজ্ব করা আবশ্যক।

(৩)- হজ্ব জীবনে কয়বার ফরয ?

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন -
الحَجُّ مرةً، فمَن زاد فهو تطوُّعٌ.

হজ্ব একবার। এরপর যে বেশি করে তা ঐচ্ছিক!
(আবু দাউদ - ১৭২১ ; নাসায়ী - ২৬২০ ইবনে মা'জা - ২৮৮৬ ; মুসনাদে আহমাদ - ২৩০৪)

(৪)- সামর্থ্যবানদেরকে দ্রুত হজ্ব আদায় করার জন্য তাকীদ দেয়া হয়েছে :

ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন -

مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ ، فَلْيَتَعَجَّلْ ، فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيضُ ، وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ ، وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُ

যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস - ১৮৩৩ ; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস - ২৮৮৩ ; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস - ১৭৩২ ; সুনানে দারিমী, হাদীস - ১৭৮৪ ; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস - ১৬৮৭ ; তবারানী, হাদীস - ৭৩৮)

অন্য বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আববাস রা. বলেন রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন -

تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ, يَعْنِي الْفَرِيضَةَ, فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لا يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ

ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না! কারণ, তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস - ২৮৬৭ ; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/৩৪০)

ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -

اسْتَمْتِعُوا بِهَذَا الْبَيْتِ فَقَدْ هُدِمَ مَرَّتَيْنِ وَيُرْفَعُ فِي الثَّالِثة

তোমরা হজ্ব ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ) গৃহের উপকার গ্রহণ কর। কেননা তা ইতিপূর্বে দু’বার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেওয়া হবে।
(সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস - ২৫০৬ ; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস - ৬৭১৮ ; মুসনাদে বাযযার, হাদীস - ১০৭২ ; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস - ১৬৫২)

(৫)- সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ আদায় না করলে কী হয় ?

উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত -

مَنْ أَطَاقَ الْحَجَّ وَلَمْ يَحُجَّ حَتَّى مَاتَ فَسواء عَلَيْهِ أَنَّهُ مَاتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا

হজ্বের সামর্থ্য থাকা সত্তেও যে হজ্ব করল না, এরপর সে ইহুদি অবস্থায় মারা যাক কী নাসরানী অবস্থায়, সবই তাঁর জন্য সমান!
(তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮)

(৬)- যারা স্বচ্ছল সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও হজ্ব আদায় করে না আল্লাহ্ তাদেরকে হতভাগা ও বঞ্চিত আখ্যায়িত করেছেন।

আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন -

يقول الله عزَّ وجلَّ: إنَّ عَبْداً صَحَّحْتُ لَهُ جِسْمَهُ، وَوَسَّعْتُ عَلَيْهِ فِيِ المَعيشَةِ، تَمْضِي عَلَيْهِ خَمْسَةُ أعْوَامٍ لا يَفِدُ إليَّ لَمَحْرُومٌ

আল্লাহ তা'আলা বলেন- আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম! তার রিযিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।
(সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস - ৩৬৯৫ ; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস - ১০৩১ ; তবারানী, - ৪৯০ ; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৬২ ; মাজমাউয যাওয়াইদ, - ৫২৫৯)

(৭)- হজ্ব পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মুছে দেয় :

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন -

مَنْ حَجَّ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبه

যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১১)

আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত -

مَنْ حَجَّ للهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ

আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল।
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২১ ; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫০ ; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৮১ ; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮১ ; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৪ ; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৪ ; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৪)

আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, (দীর্ঘ এক হাদীসে) রাসূল (সা.) বলেন -

أَمَا عَلِمْتَ يا عَمرو! أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ

হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম (গ্রহণ) পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে ফেলে! হিজরত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং হজ্ব অতীতের পাপসমূহ মুছে দেয়!
(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১;; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৫ ; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৭৭৭ ; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস : ৫০৭)

(৮)- সর্বোত্তম আমল হজ্বে মাবরূর :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ

আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত - নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, হজ্বে মাবরূর বা কবুল হজ্ব।
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৬ ; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৫৯০ ; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৫৮ ; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১৫৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০২৯৬ ; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪২১১)

(৯)- হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান হলো জান্নাত :

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন -

الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ

এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩ ; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪৯ ; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৫৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৩ ; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫ ; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৩৩ ; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৮ ; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮২)

(১০)- নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের জিহাদ হলো হজ্ব ও উমরাহ :

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ نَغْزُوا وَنُجَاهِدُ مَعَكُمْ فَقَالَ ‏ "‏ لَكُنَّ أَحْسَنُ الْجِهَادِ وَأَجْمَلُهُ الْحَجُّ، حَجٌّ مَبْرُورٌ ‏"‏‏.‏ فَقَالَتْ عَائِشَةُ فَلاَ أَدَعُ الْحَجَّ بَعْدَ إِذْ سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏.‏

উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদ করব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জিহাদ হলো হজ্বে মাবরূর। আয়েশা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম থেকে এ কথা শুনার পর হতে আমি হজ্ব ছাড়ি নি।
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৬১ ; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৪৯৭ ; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩২৬)

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -

إِنْ كَانَ قَالَهُ جِهَادُ الْكَبِيرِ وَالضَّعِيفِ وَالْمَرْأَةِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ

বৃদ্ধ, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হলো হজ্ব ও উমরা!
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৪৫৯ ; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৯৭০৯ ; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩; তবারানী আওসাত, হাদীস : ৮৭৪৬ ; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩৫০)

হুসাইন বিন আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন -

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي جَبَانٌ وَإِنِّي ضَعِيفٌ قَالَ: هَلُمَّ إِلَى جِهَادٍ لَا شَوْكَةَ فِيهِ الحَجُّ

এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমি ভীরু ও দুর্বল (জিহাদে যাওয়ার শক্তি-সামর্থ্য নেই)। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি অস্ত্র ও শত্রুর সাথে লড়াইবিহীন জিহাদ, 'হজ্ব' পালন করতে এসো।
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮০৯ ; তবারানী, হাদীস : ২৯১০; সুনানে সাঈদ ইবনে মনসূর, হাদীস : ২৩৪২ ; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৫৮)

(১১)- হজ্ব ও উমরাকারীর দু'আ কবুল করা হয় :

ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -

الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللَّهِ دَعَاهُمْ فَأَجَابُوهُ وَسَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী (গাযী), হজ্ব ও উমরা আদায়কারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দুআ করলে দুআ কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেওয়া হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৯৩ ; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪৬১৩)

(১২)- হাজীদের গুনাহ মাফ হয় এবং তারা যাদের গুনাহ ক্ষমা চায় তাঁদেরকে মাফ করা হয় :

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন -

يُغْفَرُ لِلْحَاجِّ وَلِمَنِ اسْتَغْفَرَ لَهُ الحاجّ

হাজীদের গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং হাজী যাদের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করেন, তাঁদেরকেও ক্ষমা করা হয়। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১১৫৫ ; তবারানী সগীর, হাদীস : ১০৮৯ ; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৬ ; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৫৪)

(১৩)- হজ্ব ও উমরার জন্য খরচ করার ফযীলত :

বুরাইদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন -

النَّفَقَةُ فِي الْحَجِّ كَالنَّفَقَةِ فِي سَبِيلِ اللهِ بِسَبْعِمئةِ ضِعْفٍ

হজ্বের জন্য খরচ করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মতই, যার সওয়াব সাতাশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৩০০০ ; শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী, হাদীস : ৪১২৫ ; তবারানী আউসাত, হাদীস : ৫২৭০)

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত -

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهَا فِي عُمْرَتِهَا. إِنَّ لَكِ مِنَ الأَجْرِ عَلَى قَدْرِ نَصَبِكِ وَنَفَقَتِكِ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করার সময় তাকে তার উমরা সম্পর্কে বলেছেন, তুমি তোমার পরিশ্রম ও খরচ অনুপাতে নেকি পাবে। (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৭৭৬ ; সুনানে দারাকুতনী, ২/২৮৬)

(১৪)- হজ্ব ও উমরা পালনকালে মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত :

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -

مَنْ خَرَجَ حَاجًّا فَمَاتَ كُتِبَ لَهُ أَجْرُ الحاجِّ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ خَرَجَ مُعْتَمِرًا فَمَاتَ كُتِبَ لَهُ أَجْرُ الْـمُعْتَمِرِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

যে ব্যক্তি হজ্বের উদ্দেশ্যে বের হলো, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কিয়ামত পর্যন্ত তার হজ্বের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি উমরার উদ্দেশ্যে বের হলো, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হল কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য উমরার সওয়াব, লেখা হবে। যে ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হলো, এবং তাতে তার মৃত্যু হল, কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মুজাহিদের সওয়াব লেখা হবে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৬৩৫৭ ; তবারানী আউসাত, হাদীস : ৫৪৮০ ; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ৫২৭৪)

(১৫)- বাইতুল্লাহ তাওয়াফের ফযীলত :

ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি -

مَنْ طَافَ أُسْبُوعًا يُحْصِيهِ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَ لَهُ كَعَدْلِ رَقَبَةٍ قَالَ : وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ : مَا رَفَعَ رَجُلٌ قَدَمًا وَلَا وَضَعَهَا : إِلَّا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرُ حَسَنَاتٍ ، وَحُطَّ عَنْهُ عَشْرُ سَيِّئَاتٍ ، وَرُفِعَ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ.

যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব হয়। তাওয়াফের প্রতি কদমে আল্লাহ তার একটি করে গুনাহ মাফ করেন, একটি করে নেকী লেখেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৪৪৬২ ; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৫৯ ; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭৫৩ ; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৮৪২ ; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৫৬৮৮ ; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ১২৮০৬)

মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন -

مَنْ طَافَ بِالبَيْتِ أُسْبُوعًا لاَ يَلْغُو فِيهِ كَانَ كَعَدْلِ رَقَبَةٍ يَعْتِقُهَا

যে ব্যক্তি সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে, তাতে কোনো ধরনের অনর্থক কাজ করবে না, তবে তাঁর একটি গোলাম আযাদ করার সমপরিমাণ সওয়াব হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ১২৮০৭ ; তবারানী, হাদীস : ৮৪৫ ; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ৫৫০৪)

ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন -

ينزل الله كل يوم على حجاج بيته الحرام عشرين ومائة رحمة : ستين للطائفين وأربعين للمصلين وعشرين للناظرين.

আল্লাহ তাআলা বায়তুল্লাহর হজ্বকারীদের উপর প্রতিদিন একশত বিশটি রহমত নাযিল করেন, তার ষাটটি তাওয়াফকারীদের জন্য, চল্লিশটি মুসল্লীদের জন্য এবং বিশটি দর্শকদের জন্য। (শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৪০৫১ ; তারগীব ১৭৮৬)

(১৬)- হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার ফযীলত :

ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন -

سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, হাজরে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানীর স্পর্শ পাপসমূহকে মুছে দেয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৫৯ ; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৫৭০১ ; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৯ ; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৮৪২)

ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -

وَاللَّهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللَّهُ يَوْمَ القِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا ، وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ ، يَشْهَدُ عَلَى مَنْ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ

অবশ্যই আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে উঠাবেন। তার দুটি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখতে পাবে। একটি জিহবা বা মুখ থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যারা তাঁকে যথার্থভাবে স্পর্শ করেছে তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৬১ ; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৫ ; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭২৫ ; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৯৪৪ ; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৭২৩)

ইবনে আববাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - হাজরে আসওয়াদ হলো জান্নাতের পাথর, তা দুধের চাইতেও বেশি সাদা ছিল, কিন্তু আদমসন্তানের গুনাহ একে কালো করে দিয়েছে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮৭৭ ; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭৩০ ; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৯২৫)

শিক্ষক: দারুল আরকাম মাদ্রাসা, দেবিদ্বার, কুমিল্লা ।
খতীব: চরবাকর ব্যাপারী বাড়ি আল-আমীন হাফিজিয়া মাদ্রাসা জামে মসজিদ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ