আবু তালহা রায়হান
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট।পানির অপর নাম জীবন,অথচ সেই পানিই আজ সিলেটবাসীর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে! তিনদশকের ইতিহাসে সিলেটবাসী এমন বন্যা অতীতে আর দেখে নি।মরণঘাতি করোনার থাবায় লণ্ডভণ্ড অর্থনীতি।করোনার দুঃসময় কাটিয়ে মাথা ঘুরে দাঁড়াতেই নতুন বিপর্যয়ের মুখে পড়ল সিলেট।
একসঙ্গে এক বিভাগের ৮০ শতাংশ ডুবে যাওয়ার ইতিহাস দেশে নতুন আতঙ্কের জন্ম দিল।আকস্মিক বন্যার বৃদ্ধিতে অবাক হয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জায়নামাজে বসে এমন ভয়াবহতায় সিলেটবাসীর মুক্তির জন্য কেঁদেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
ভয়াবহ বন্যার শিকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও জায়গা পাচ্ছেন না।কারো ঘর নদীগর্ভে বিলীন,কেউ হারিয়েছেন কলিজার টুকরো সন্তান,প্রিয়তমা স্ত্রী,বটছায়া বাবা,আবার কেউ হারিয়েছেন গৃহপালিতপশু—এমনসব অপ্রাপ্তির গল্পে ভরে ওঠেছে সিলেটবাসীর জীবন!
বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে জেলার সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপেজলা অন্যতম। এজনপদের লক্ষাধিক মানুষজন পানিবন্দি। বাজারঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম খাদ্যাভাব ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।সম্প্রতি গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ঘরবাড়ি হারানো নিরুপায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রেই দিনরাত পার করছে এখনো।
এমন নাজুক পরিস্থিতিতে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে 'ইত্তেহাদুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন।' প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা সফর করে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নিচ্ছেন সংগঠনটির কর্মীরা।সাধ্যানুযায়ী প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা দিচ্ছে বন্যার্তদের।শুকনো খাবার,ওষুধ সামগ্রী, চাল-ডাল—যেখানে যা প্রয়োজন তা নিয়ে-ই হাজির হচ্ছেন তারা।ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি মেরামতে স্বশরীরেই সেবা প্রদান করছেন।
বন্যাগ্রস্ত বিভিন্ন গ্রামের মানুষজনদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান—' টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বসতঘর ডুবে গিয়ে চরম বিপাকে দিন পার করছি।পানিবন্দি জীবনে বাজারে যেতে না পারায় খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। কঠিন এই দুঃসময়ে জনদরদি তরুণ আলেম সুলতান মাহমুদ নিজ কাঁধে করে খাদ্য নিয়ে আমাদের দরজায় দরজায় হাজির। তাঁর এমন সেবায় আমরা কৃতজ্ঞ।আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দিক!'
সংগঠনটির চেয়ারম্যান তরুণ আলেম মাওলানা সুলতান মাহমুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান—'বন্যায় প্লাবিত মাতৃভূমি সিলেটের অন্যান্য এলাকার মত ভাল নেই গোয়াইনঘাটও। পানিবন্দি মানুষজন না খেয়ে মৃতপ্রায় জীবন পার করছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার বন্যার সম্মুখীন সিলেট। গতবারের মত এবারো কঠিন এ পরিস্থিতিতে মানুষের খেদমত করার চেষ্টা করছি।'
কাজের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে মানুষের দেখভাল করছি। প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে ইত্তেহাদুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন টিম। স্থানীয় আলেমরাও কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমাদের গোয়াইনঘাট উপজেলার আলেম ও তরুণ সমাজ আমার সঙ্গে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
আমরা যতটুকু পারি মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের কার্যক্রম দেখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলেও শুনেছি। এটিই আমার বড় পাওয়া।
প্রসঙ্গত,অলাভজনক বহুমুখী সেবা প্রতিষ্ঠান ইত্তেহাদুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।বিশ্ব মানবতার আইডল হজরত মুহাম্মদ সা.-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থান তৈরি, দারিদ্র্য বিমোচন, ইসলামি তমদ্দুনের প্রসার, বহুমুখী শিক্ষায়ন প্রকল্প পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণসহ মাদকবিরোধী ও যৌতুকবিরোধী পরিচ্ছন্ন সমাজ গঠনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
-এটি