শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তোমাকে ভালোবাসি হে নবী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহিবুর রহমান উসামা।।

আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সা. এর উন্নত চরিত্রের প্রশংসা করে বলেন, নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী।

ভালোবাসা মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতিগতভাবে মানুষ পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনকে ভালোবাসে। তবে আত্মীয়তার বাইরেও মানুষ মানুষকে ভালোবাসে তার বিশেষ যোগ্যতা ও গুণের কারণে।

দুনিয়ায় অনেক মানুষ গত হয়েছেন, যারা তাদের বিশেষ গুণ ও অবদানের কারণে দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ভালোবাসার রাজ্য দখল করে আছেন।

ইতিহাসের পাতায় এমন হাজারো কালজয়ী মানুষের নাম পাওয়া যায়, যাদেরকে মানুষ যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। স্মরণীয় মানুষদের মধ্যে নবী-রাসূলদের মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তাদের সঙ্গে জগতের অন্য কারো তুলনা চলে না।

তাদের প্রত্যেকের মাঝে মানবীয় সব গুণ ছিল পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। আর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর মধ্যে প্রত্যেক পয়গম্বরের গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাহার ঘটেছিল।

হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। কারণ, একজন মানুষ যখন কোনো মানুষকে ভালোবাসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ দেখা যায়। এসব কারণে অন্যতম তিনটি কারণ হলো- যোগ্যতা, সৌন্দর্য ও অনুগ্রহ। ভালোবাসার এই কারণগুলো মহানবী সা.-এর মাঝে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।

যোগ্যতা: স্বাভাবিকভাবে মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ সা. জাগতিক কোনো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেননি। সহিহ বোখারির বর্ণনায় রয়েছে, হজরত জিবরাঈল আ. প্রথম যখন এসে মহানবীকে সা. বললেন, ইকরা- (আপনি পড়ুন), রাসূল সা. বললেন, আমি তো পড়তে শিখিনি। তখন জিবরাঈল আ. স্বীয় বুকের সঙ্গে রাসূলকে সা. জড়িয়ে ধরেন। তাতে নবীর সা. এর বক্ষ ঐশী জ্ঞান ধারণের জন্য উম্মুক্ত হয়।

নবী করিম সা. আরও ইরশাদ করেন, আমি জ্ঞানের শহর আর এই শহরের দরজা হলো- আলী রা.।

রাসূলুল্লাহ সা. শুধু জ্ঞানের ক্ষেত্রে নয় বরং তিনি ছিলেন সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ গুণের অধিকারী। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানবিক গুণাবলী অর্জন করা। তাই শিক্ষিত চরিত্রবান ব্যক্তি সবার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়ে থাকেন। প্রিয় নবী সা. ছিলেন উত্তম চরিত্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত।

স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তার উন্নত চরিত্রের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী। -সূরা কলম: ৪

সৌন্দর্য: মহানবীকে সা. যারা দেখেছেন, তারা তার সৌন্দর্যকে চাঁদ ও সূর্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হজরত জাবের ইবনে সামুরাকে রা. জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, নবীর সৌন্দর্য কি তরবারির ন্যায় চকচক করতো? তিনি বললেন, না। বরং তার সৌন্দর্য ছিলো- চন্দ্র ও সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসূল সা.-এর চেয়ে সুন্দর কিছু দেখিনি। তার চেহারায় যেন সূর্য চিকচিক করতো। -শামায়েলে তিরমিজি

হজরত কাব ইবনে মালেক রা. বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সা. যখন আনন্দিত হতেন, তখন মনে হতো তার চেহারায় এক টুকরো চাঁদ হাসছে। -মুস্তাদরাক

অনেকে অবশ্য নবীজির সৌন্দর্যকে চাঁদের সঙ্গে তুলনা করতে পছন্দ করেননি। কেননা তিনি ছিলেন চাঁদের চেয়েও সুন্দর। সুতরাং সৌন্দর্যের কারণে যদি কাউকে ভালোবাসতে হয়- তাহলে এই ভালবাসার সবচেয়ে হকদার বিশ্বনবী সা.।

সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ: অনুগ্রহশীল ব্যক্তির প্রতি স্বভাবগতভাবে মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসা জন্ম নেয়। প্রবাদে আছে, মানুষ অনুগ্রহের দাস। এই বাস্তবতাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার পর মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহকারী হলেন বিশ্বনবী সা.। তার অস্তিত্বই মানবতার জন্য সাক্ষাত করুণা। আল্লাহ তায়ালা তাকে জগতবাসীর জন্য করুণার আধার বানিয়ে প্রেরণ করেছেন। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, আমি আপনাকে জগতবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। -সূরা আম্বিয়া: ১০৭

নবুওয়তপ্রাপ্তির পূর্ব থেকেই রাসূল সা. সমাজের অসহায়, অনাথ এবং দুঃখি মানুষের সেবা করতেন। নিজে উপার্জন করে অভাবি, অনাহারি মানুষের মুখে তুলে দিতেন। বিপদগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতেন। নিজের কাছে টাকা-পয়সা না থাকলে ঋণ করে হলেও মানুষকে দান-খায়রাত করেছেন। এগুলো হলো- নবী করিমের সা. জাগতিক সাহায্য-সহযোগিতার নমুনা।

কিন্তু নবী করিম সা.-এর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো- মানুষকে আখেরাতের বিপদ থেকে রক্ষা করা। জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচানোর চিন্তা তাকে অস্থির করে তুলতো। তাই তো তিনি বলেছেন, আমার দৃষ্টান্ত হলো- ওই ব্যক্তি মতো; যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করেছে। আর সে আগুনে অবুঝ পঙ্গপাল ঝাঁপ দিয়ে মারা যাচ্ছে। সে ব্যক্তি পঙ্গপালকে বাঁধা দিয়ে পারছে না। তেমনি আমিও তোমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁধা দিচ্ছি। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ