সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ক্যানভাসে ফিলিস্তিনি তরুণীর দুঃখের রেখা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উম্মে জাওয়াদ হাবিবা।।

জয়নব আল-কুলাক। ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া একজন ফিলিস্তিনি তরুণী। নিজের দুর্বিষহ জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন রংতুলির আঁচড়ে। সম্প্রতি তাঁর আঁকা ৯টি ছবি প্রদর্শিত হয়েছে ‘দ্য ইউরো-মেডিটেরানিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর’-এর উদ্যোগে।

সংস্থাটিকে সহযোগিতা করেছে ‘দি ইউনাইটেড নেশনস উইমেন’-এর গাজা অফিস। জয়নব তাঁর সিরিজ চিত্রকর্মের শিরোনাম দিয়েছেন ‘আমার বয়স ২২ বছর এবং আমি ২২ স্বজনকে হারিয়েছি। ’ তাঁর সমগ্র চিত্রেই যেন দুঃখের সুর। বিধ্বস্ত ভবন, ইসরায়েলি গাড়ি, মৃত মানুষের কঙ্কালসহ প্রতিটি ছবি দর্শনার্থীদের মনে শিল্পীর দুঃখের ছাপ ফেলে যায়।

রকেট হামলার অভিযোগে ২০২১ সালের মে মাসে গাজা উপত্যকায় ১১ দিনব্যাপী সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় তারা ২০ লাখ মানুষের আবাসস্থল গাজায় শতাধিক বিমান হামলা চালায়। এতে নিহত হয় ২৬০ জন এবং আহত হয় দুই হাজারের বেশি মানুষ। ১৬ মে ২০২১ ইসরায়েলি বিমানগুলো গাজার আল-ইহদা সড়কের আবাসিক ভবনগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলা শুরু করে। যার মধ্যে আল-কুলাকদের বাড়িটিও ছিল। হামলায় জয়নব তাঁর মা ও তিন ভাইসহ পরিবারের ২২ সদস্যকে হারান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ছবি একেকটি দুর্বিষহ মুহূর্তকে মূর্ত করে তোলে, যা নিয়ে আমি বেঁচে আছি। আর এটা হয়েছে ইসরায়েলের অপরাধকাণ্ডের জন্য, যা করা হয় কোনো প্রকার সতর্কতা ছাড়া। ’

তিনি আরো বলেন, ‘হামলার কয়েক মিনিট আগেও আমি আমার পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে ছিলাম। আমরা কেউ একবারের জন্যও ভাবিনি আমাদের ওপর আক্রমণ করা হবে। আমাদের সব প্রতিবেশীই ছিলেন সাধারণ মানুষ। তাদের কেউ সামরিক তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। হঠাৎ আমরা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। আমার মা বলেন, দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এরপর আমি নিজেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আবিষ্কার করি। ’

জয়নবকে ১২ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য মারা যান। বেঁচে গেলেও স্বজন হারানো ভয়াবহ স্মৃতি তাঁকে তাড়া করে ফেরে। জয়নবের বাবা সুকরি আল-কুলাক বলেন, ‘আমার মেয়ে এখনো ঘুমালে দুঃস্বপ্ন দেখে। সে আগেও ছবি আঁকত। তখন তার ছবির মুখ্য বিষয় ছিল প্রকৃতি এবং তার সৌন্দর্য। ইসরায়েলি হামলার শিকার হওয়ার পর সে ছবিতে গাজা উপত্যকার দুঃখগাথা ফুটিয়ে তুলতে চাইছে। তার সব কিছু ছেয়ে গেছে দুঃখ ও মৃত্যুতে। ’ ইউরো-মেডিটেরানিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের মুখপাত্র মাহা আল-হুসাইনি বলেন, কুলাক পরিবারের ঘটনা এমন একমাত্র ঘটনা নয় যার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোকপাত করা প্রয়োজন, যা শোনা ও দেখা প্রয়োজন। বরং এখানে নারী, কিশোরী, শিশু ও সাধারণ মানুষের এমন লাখো গল্প আছে, যা এখনো দেখা বা শোনা হয়নি। অথচ তা আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছানো প্রয়োজন।

দর্শনার্থী হিবা আল-শাতিল বলেন, ‘জয়নব তাঁর ছবিতে তাঁর দুঃখগাথা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। যখন আমি তা দেখি, তখন গভীর দুঃখবোধ ও ভয় অনুভব করি। যদিও আমি এখানে যা হচ্ছে তা দেখে অভ্যস্ত। ’

সূত্র : আল-আরাবি ডটকম ও টিআরটি ওয়ার্ল্ড

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ