আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সংকটাপন্ন শ্রীলঙ্কায় ফুরিয়ে গেছে পেট্রল, জরুরি আমদানিতে অর্থায়নের জন্য নেই ডলারও। সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা জানান দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
সেই জ্বালানি সংকট থেকেই এবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশটির সব স্কুল। অফিসে না আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের।
শুক্রবার (২০ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র জ্বালানি সংকট ও পরিবহন সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা ছাড়া বাকি সব সরকারি কর্মকর্তাকে কাজে না আসার নির্দেশনা দিয়েছে শ্রীলঙ্কার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পেট্রলসহ অন্য জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতির মুখে শ্রীলঙ্কার সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত বেসরকারি স্কুলগুলোও শুক্রবার (২০ মে) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। স্কুল-অফিস পুনরায় কবে খোলা হবে, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
৭০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ঋণ পরিশোধে দেশটিকে ৩০ দিনের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলেও বুধবার (১৮ মে) সে সময় পার হয়ে গেছে। অপরিশোধিত আছে ৭৮ মিলিয়ন ডলারের ঋণ।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানান, দেশটি এখন ‘প্রি-এমটিভ ডিফল্ট’ হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিশ্বের শীর্ষ দুই ঋণ রেটিং সংস্থাও শ্রীলঙ্কার ঋণখেলাপি হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে।
কোনো সরকার যখন ঋণদাতাদের ঋণের কিছু অংশ বা পুরোটা পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তখন সেই সরকারকে খেলাপি বলা হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশটির সুনাম নষ্ট হয়, প্রয়োজনের সময় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহ কঠিন হয়ে যায়। এতে দেশটির মুদ্রা এবং অর্থনীতির আরও বেশি ক্ষতি হয়।
শ্রীলঙ্কা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে কি না–জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বীরসিংহে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা বলেছি, যতক্ষণ তারা (ঋণদাতারা) ঋণ পুনর্গঠনের আওতায় না আসবে, ততক্ষণ আমরা তা পরিশোধ করতে সক্ষম হব না। এখন যা হচ্ছে তা প্রি-এমটিভ ডিফল্ট বলা যেতে পারে।’
এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে নেওয়া ৫০ বিলিয়নের বেশি ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করতে চাইছে। তাদের দাবি, ঋণ পরিশোধের শর্ত তাদের জন্য আরও বেশি সহজ করতে হবে।
এদিকে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভায় নয়জন নতুন মন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২০ মে) তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সামনে শপথ নেন তারা।
রিজার্ভ ফুরিয়ে আসায় জ্বালানি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছে না বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। এ অবস্থায় আরও এক শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধও আমদানি করতে পারছে না সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারিতে পর্যটন খাত থেকে আয় শূন্যে নেমে যাওয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং জনগণের মন জয় করতে রাজাপাকসে সরকারের কর কর্তন শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
-এএ