আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: প্রশ্ন: আসসালামুয়ালাইকুম, আমার বাচ্চার বয়স ১৮ মাস। সে জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। অনেক ডাক্তার দেখানোর পর ৮ মাস বয়সে জানতে পারলাম ছেলের আমার জন্মগত হ্রদরোগ আছে। রোগটা অনেক জটিল। বাংলাদেশে সব বড় বড় ডাক্তার বলেছে তিন থেকে চারটি অপারেশন লাগবে এবং তা অনেক ব্যয়বহুল। তুবও সে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে না। ডাক্তার বলেছে এমন রোগী সর্বচ্চো ২০ বছর বাঁচে।
মা হয়ে ছেলের এমন কষ্ট কিভাবে সহ্য করবো! প্রতি ওয়াক্তে কেঁদে কেঁদে আল্লাহ কে বলছি বাচ্চাটাকে আমাকে ভিক্ষা দিয়ে দিতে কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হচ্ছে না। ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি কিন্তু আমাদের ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেল আমি আমার স্বামী দুজনের করোনা পজিটিভ এসেছে।এদিকে গত দুবছর আমার স্বামী বেকার। ছেলের চিকিৎসার জন্য আমার শুশুর বাড়ির লোকজন কিছু টাকা ম্যানেজ করে দিয়েছে কিন্তু তা একবার ইন্ডিয়া যাইতে আসতে শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে আমি এক ছেলের চিন্তাই দিশেহারা আমার আরও এক ছেলে আছে তার বয়স ৫ বছর সেও ছোট এখনো তাকে একাডেমিক শিক্ষাই শুরু করতে পারিনি। দিন যত যাচ্ছে আমি পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছি। কোন কিছু ভালো লাগে না সব সময় স্বামী কে দোষারোপ করি। সারাক্ষণ ছোট বাচ্চা কে কোলে নিয়ে বসে থাকি আর অন্যকিছু করতে ভালো লাগে না।আমাকে কিছু আমল শিখিয়ে দিবেন দয়া করে যাতে সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারি আর আমার ছেলে যেন সুস্থ হয়ে যায়। আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব।
উত্তরঃ
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত বোন! আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল পেরেশানী দূর করুন। আপনার সন্তানকে পূর্ণ শিফা দান করুন। বিপদ আপদ বালা মুসিবত আল্লাহ তায়ালাই দিয়ে থাকেন। আবার আল্লাহ তায়ালাই সেগুলো থেকে মুক্তি দান করেন। হতে পারে এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য পরীক্ষা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সবকারীদের সাথে থাকেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনাদের জন্য প্রথম করণীয় হলো অধিক পরিমাণে আল্লাহ তায়ালার কাছে ইস্তেগফার করা। কেননা ইস্তেগফারের মাধ্যমে যেমনিভাবে গুনাহ মাফ হয় তেমনি বালা মুসিবতও দূর হয়।
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا - يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا - وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا
দ্বিতীয়ত যদিও অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন তবুও সাধ্য মতো সদকা করুন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে- সদকা বিপদ আপদকে প্রতিহত করে’। তৃতীয়ত: আপনারা আপানদের সাধ্যমতো সন্তানের চিকিৎসা চালিয়ে যান। আশা করি আল্লাহ তায়ালা দ্রুতই তাকে সুস্থ করে তুলবেন। প্রয়োজনে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী বা অন্য কোনো মাধ্যমে হলেও অর্থ সংগ্রহ করুন।
নিয়মিত এই দুয়াটি পড়ুন।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ - وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ. نَبِيِّ الرَّحْمَةِ ، إِنِّيْ توجَّهتُ بِكَ إِلٰى رَبِّيْ فِيْ حَاجَتِيْ هٰذِهٖ. لِتَقْضِىْ لِيْ ، اَللّٰهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِــيَّ
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নবী, দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.) এর (দোয়ার) মাধ্যমে। আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম, যাতে আমার এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দেওয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তাঁর সুপারিশ কবুল করো।
উপকারিতা: উসমান ইবনে হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক অন্ধ ব্যক্তি নবী রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেন, তুমি চাইলে আমি দোয়া করব।তবে যদি ধৈর্য ধারণ করতে পারো, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। তিনি বললেন, তাঁর কাছে দোয়া করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে অজু করার হুকুম করলেন এবং এই দোয়া করতে বললেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৮)
এ ছাড়াও অনাকাঙিক্ষত রোগ ব্যধিসহ যে কোনো বিপদাপদ থেকে বেঁচে থাকতে সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত আমল করা জরুরি। আর তাতেও কঠিন রোগ থেকে মুক্ত থাকা সহজ হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত উসমান ইবনে আফফান রা. বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি ‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় এ দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট/ক্ষতি করতে পারবে না।
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্সামিউল আলিম।’ (তিরমিজি)
এছাড়াও সকাল সন্ধা ছয় তাসবিহের আমল। দুরুদ, ইস্তেগফার, লা হাওলা ওয়ালা কুউয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ ইত্যাদী তাহবিহাতের আমলগুলোও অব্যহত রাখুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন।
উত্তর প্রদানে: মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা, মোহাম্মাদপুর
-এটি