শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইমাম বুরহান উদ্দীন যারনুজীর রহ.কিছুকথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাসান মুরাদ: ছাত্রদের জন্য প্রথম কাজ উস্তায নির্বাচন করা। নির্বাচিত উস্তাযের গুণাবলী হবে তিনটি ১. বড় আলেম ২. অত্যাধিক পরহেজগার ৩. বয়স্ক। ইমাম আবু হানিফা রহ: বলেন আমি অনেক ভেবেচিন্তে হযরত হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান রহ: কে আমার উস্তায নির্বাচন করেছি। আমি আমার উস্তাযকে পয়েছি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন, সহনশীল এবং অতিশয় ধৈর্যশীল। আমি আমার প্রিয় উস্তাযের নিকট পূর্ণএকাগ্রতাসহ দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। তারপর আমি ইজতেহাদের দরজাতে পৌঁছেছি।

ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, সমরকান্দের এক হাকিমের কাছে শুনেছি। একবার এক ছাত্র ইলম শিখার জন্য বুখারা যাওয়ার ইচ্ছা করল। তো যাওয়ার পূর্বে সে ছাত্র, সমরকান্দের ঐ হাকিমের নিকট পরামর্শ চাইল। তখন সমরকান্দের হাকিম তাকে কয়েকটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

১ . তুমি ছাম্মা খায়ের (এখানে না ওখানে ভালো) রোগে আক্রান্ত হয়ো না।সিদ্ধান্তে ত্বরাপ্রবণ হয়ো না। বরং কোন শহরে গিয়ে ২মাস (উদ্দেশ্য উল্লেখযোগ্য সময়) অবস্থান করো। মানুষের সাথে আলাপ করো। তারপর খুব ভেবে-চিন্তে উস্তায নির্বাচন করো। কোথাও গিয়েই উস্তায নির্বাচন করে নিলে। তারপর সেখানে তোমার মন বসল না। ছবক বুঝতে পারলে না। সেখান থেকে অন্যত্র হুট করে চলে গেলে। এতে উস্তায মনে কষ্ট পাবে। উস্তায মনে কষ্ট পেলে তো তোমার ইলমে বরকত হবে না। ইলম থেকে উপকৃত হতে পারেবে না। সুতরাং ভেবেচিন্তে উস্তায গ্রহণ করে, ধৈর্য ও অবিচলতাসহ লেগে থাকবে। তাহলে উস্তায মনে কষ্ট পাবে না। সে ইলম থেকে তুমি উপকৃত হতে পারবে। আর মনে রেখ ধৈর্য ও অবিচলতাই সফলতার মূল সূত্র।

কথিত আছে বাহাদুরী অর্জন হয় দীর্ঘ ধৈর্যের পর। সুতরাং প্রতিটি তালিবুল ইলমদের উচিত নির্দিষ্ট উস্তায এবং ফনের উপর অটল থাকা।বিনা প্রয়োজনে উস্তায পরিবর্তন করবে না। এতে দিল ও সময় নষ্ট হয়। বিশেষত উস্তায কষ্ট পায়। আর এক ফন পরিপূর্ণ না বুঝে অন্য ফন পড়তে যাবে না।

২ . কখনো নিজের মন মত চলবে না। কোন ছাত্ররই নিজের মন মত চলা উচিত না। আর মনে যা ইচ্ছে হয়, সিদ্ধান্ত নিবে না। কবি বলেন “ নিশ্চয় খায়েশের পরিনতি হল লাঞ্ছনা, অপদস্থতা। যে খায়েশের পেছনে পড়েছে সে লাঞ্ছনার পাত্র হয়েছে”

৩ . ইলম শিখতে যে কষ্ট ও মুসিবত আসে তা ধৈর্য সহকারে মেনে নিবে। বলা হয় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে প্রয়োজন, ধৈর্যের।
হযরত আলি রা. বলেন (কবিতা)

৬টি জিনিস ছাড়া তুমি ইলম শিখতে পারেব না।

১. মেধা ২. ইলম অর্জনের তীব্র আগ্রহ ৩. মেহনত এবং মুসিবতে ছবর ৪. চাহিদা কম ৫. উস্তাযের পথনির্দেশনা ৬. উস্তাযের নিকট দীর্ঘ সময় অবস্থান।

সমরকান্দের সে হাকিম ছাত্রটিকে পরামর্শ দেয়ার সময় প্রসঙ্গক্রমে পরামর্শ সম্পর্কে বলেন, সকলের উচিত সব কাজে পরামর্শ গ্রহণ করা। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরামর্শের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আর আপনি তাদরে সাথে কাজে কর্মে পরামর্শ করুন। তারপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন তখন আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করুন। আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।(সুরা আলু ইমরান-১৫৯)

ভাবার বিষয়, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। জ্ঞান এবং হেকমতেপূর্ণ। তারপরও সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করতেন।
হযরত আলী রা. বলেন, পরামর্শ করে কাজ করলে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

বর্ণিত আছে মানুষ তিন প্রকার। ১. পূর্ণ মানুষ ২. অর্ধ মানুষ ৩. অপূর্ণ মানুষ। পূণ মানুষ: যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তারপরও পরামর্শ করে ।

অর্ধ মানুষ: যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে পরামর্শ করে না অথবা পরামর্শ করে কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
অপূর্ণ মানুষ: যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না আবার পরামর্শও করে না।

আল্লামা বুরহান উদ্দীন ঝারনুজী রহ রচিত তালিমুল মুতায়াল্লিম কিতাব থেকে অনুবাদ

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ