আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে খনিজ শিল্পাঞ্চল মধ্যপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মুন্সিপাড়া, পলিপাড়া, সুকুরডাঙ্গা, আদিবাসী, শাহপাড়া, মৌলভীডাঙ্গা ও কোটালপাড়াসহ সাত গ্রামের পাঁচ শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর-বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা পাকা ঘর। উড়ে গেছে ঘরের চালা। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য হাজার হাজার গাছপালা।
ঝড়ে ঘরের দেয়ালে চাপা পড়ে কুলসুম খাতুন (১৩) নামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন নারী-শিশুসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টার দিকে তারাবির নামাজের সময় উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ফসল, আম, লিচু. ভুট্টা, শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, আজ বুধবার সকাল ৮টায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো পরিদর্শনে করেন পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মো. হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক।
এ সময় তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মুন্সিপাড়া ও শুকুরডাঙ্গা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ ৪০ হাজার টাকা ও নিহতের পরিবারকে ১০ হাজার সহয়তা প্রদান করা হয়।
মধ্যপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (আইসি) পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল হক জানান, প্রচণ্ড ঝড়ে ফাড়ির ইটের প্রাচীর ভেঙে গেছে সেইসঙ্গে ফাড়ির টিন উড়ে গেছে।
মুন্সিপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল জানান, আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়ে এমন ঘুর্নিঝড় জীবনে ও দেখিনি। মাত্র ২ মিনিটের ঝড়ে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নীচে আমি আমার পরিবার ও গবাদিপশু। কালবৈশাখী ঝড়ে আমার বসত বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ঘরের দেয়ালের ইট পড়ে তার পরিবারের ৪ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, ঝড়ের পরপরই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। রাত ১টায় উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে ছুটে যান, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ইসমাঈল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রীতম সাহা, পার্বতীপুর মডেল থানার (ওসি) ইমাম জাফর, মধ্যপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (আইসি) পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল হক ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাহেদুল ইসলাম সোহাগ।
পরে রাত ১টার দিকে নিহত মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবার শওকত আলীর হাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ইসমাঈল।
হরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহেদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ঝড়ে পাঁচ শতাধিক বাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ১০ থেকে ১২ জনকে রংপুর ও ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে ঝড়ে ১৫ হেক্টর আধাপাকা বোরো ধান, ১২ হেক্টর ভুট্টা ক্ষেত, ১৬ হেক্টর আম এবং ৫ হেক্টর লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইসমাঈল জানান, ঝড়ে এক মাদ্রাসাছাত্রী নিহত হয়েছেন। বেশ কিছু গবাদিপশু মারা গেছে। মেডিকেলটিমসহ প্রতিটি বিভাগ কাজ করছে। দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবন, চিড়া, লুডসসহ ৫০টি পরিবারকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। নিহতের পরিবার নগদ ২৫ হাজার নগদ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। রাতে সেহরির ব্যবস্থা করেছি। জেলা প্রশাসক ও ত্রাণ অধিদপ্তরে অবহিত করা হয়েছে।
এনটি