আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সাভারে একটি কারখানায় হিজাব ও বোরকা পরে ঢুকতে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। তারা বলছেন,তাদের বেতনও কাটা হয়েছে।
তবে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, কাউকে হিজাব বা বোরকা পরতে নিষেধ করা হয়নি। দুর্ঘটনার শঙ্কায় লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছিল। ২০০ শ্রমিককে মার্চ মাসে বেতন কিছুটা কম দেয়া হয়েছে। তবে এর সঙ্গে হিজাবের কোনো সম্পর্ক নেই।
আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার ‘ইয়াংজিন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড’ কারখানায় শনিবার সকালে ওই অভিযোগ ওঠে। কারখানার সামনে প্রায় ৬০ জন শ্রমিক অবস্থান নেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুরে তারা বাড়ি ফিরে যান।
কারখানার অপারেটর রিয়া মনি বলেন, ‘এই কারখানায় চুল প্রসেসিং করে তা বিভিন্ন পুতুলের মাথায় লাগানোর কাজ করি আমরা। সাত মাস ধরে এখানে আমি কাজ করছি। তবে বোরকা ও হিজাব পরে আসায় শনিবার সকালে আমাদের অন্তত ৬০ জন শ্রমিককে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে আমরা কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
‘মূলত দেড় মাস আগে চীনা মালিক কারখানায় এসে আমাদের বোরকা ও হিজাব পরতে নিষেধ করে। তবে একটা ফ্লোরের আমরা ৬০ জন শ্রমিক এতে রাজি হইনি। এ কারণে গত মাসে আমাদের ২০০ টাকা করে জরিমানা করছে। আর এই মাসে আমাকে ৫ হাজার টাকা বেতন কম দিয়েছে।’
পারুল আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘দুই বছর ধইরা (ধরে) ওই কারখানায় কাম (কাজ) করি। দেড় মাস ধইরা হিজাব ও বোরকা পরা নিয়ে ঝামেলা করছে স্যাররা৷ আমি প্রতি মাসে বেতন পাইতাম ১২-১৪ হাজার টাকা। গত মাসে আমাকে বেতন দিছে ৭ হাজার টাকা।
‘শনিবার কারখানায় যারা হিজাব ও বোরকা পইরা গেছি, তাদের ঢুকতে দেয়নি। স্যাররা বলে, যদি বোরকা খুলতে পারো তাহলে ভেতরে আসো। এর আগে কারখানার স্টাফ সুপারভাইজার ফেরদৌস ভাইকে দিয়ে আমাদের চাপ দিয়ে বোরকা খুলানোর (খোলানোর) চেষ্টা হয়েছে।’
নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানায় ঢুকতে পারেননি সুপারভাইজার ফেরদৌস হোসেন তালুকদার। কেন তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল, আমার আন্ডারে যে শ্রমিকরা আছেন তারা যেন হিজাব না পরেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আমাকে টাকাও দিতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে আমি এতে রাজি হইনি। তাই কারখানার বোরকা পরা শ্রমিকের সঙ্গে আমাকেও ঢুকতে দেয়নি৷’
তবে হিজাব ও বোরকা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ইমরান হাসেম বলেন, ‘এর আগে চেয়ারম্যান স্যার কারখানায় এসে শ্রমিকদের বোরকা ও হিজাব পরে কাজ করতে দেখেন। এ সময় লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক মেশিনে ঢুকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তাই কাজের সময় শ্রমিকদের হিজাবের পরিবর্তে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়।’
বেতন কম দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রডাকশননির্ভর আমাদের কারখানার এই মাসে উৎপাদন কম হওয়ায় ২০০ শ্রমিককে বেতন কিছুটা কম দেয়া হয়েছে। তবে শ্রমিকরা এটাকে হিজাব ইস্যু বানিয়েছে। তাদের দাবি, প্রডাকশন রেট বাড়িয়ে দিতে হবে। কোম্পানির প্রডাকশন কম হলে তাদের রেট কীভাবে বাড়াবে? তার পরও মালিকপক্ষ ঈদের পর তাদের রেট বাড়িয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে শ্রমিকরা ঈদের আগেই বেতন, বোনাস ও প্রডাকশন রেট বাড়িয়ে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফেডারেশন নেতাদের সঙ্গে বসে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেহেতু কারখানায় কাজ কম তাই ওই শ্রমিকরা আপাতত বাসায় থাকবেন। তবে ঈদের আগেই তাদের বেতন-বোনাস দিয়ে দেয়া হবে।’
সুপারভাইজারকে দিয়ে শ্রমিকদের বোরকা পরা বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা। তাকে কোনো টাকা দেয়ার কথা বলা হয়নি।
সূত্র: এনবি
এনটি