নাজমুল হাসান সাকিব।।
রমজানুল মোবারক রহমত-বরকতের মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার রহমত পরিপূর্ণরূপে বর্ষণ হয়। তাই এই মাসে সবাই আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি-বেশি রহমত বরকতের প্রত্যাশা করা চাই। রমজান মাসে বিশেষ কিছু ইবাদত করার সুবর্ণ সুযোগ মিলে। তাই এটি ইবাদতেরও মাস। কেউ যেন এ মাসের ইবাদত আদায়ে গাফলতি না করে বরং ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। তবেই আগামী ভবিষ্যতের জন্য সকল ইবাদত-বন্দেগী তার অভ্যাসে পরিণত হবে।
এই মাসে আল্লাহ তায়ালা এবাদতের সাওয়ার বাড়িয়ে দেন। যারা এবাদতে মশগুল হবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের পুরষ্কৃত করবেন। যারা এই মাস পেয়েও এর যথাযথ কদর করেনি, তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ।
হজরত কাব বিন আজরাহ রাযি. বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন- “তোমরা মিম্বরের কাছাকাছি হয়ে বসো”। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. সবাই কাছাকাছি হয়ে বসলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেন: 'আমিন'। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেনঃ 'আমিন'। অনুরূপ তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও তিনি বলেন: 'আমিন'। বয়ান শেষে মিম্বর থেকে নবিজি সাম্রাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেমে আসলে কৌতূহলী হয়ে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে তো আগে কখনো এমন করতে দেখিনি। তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি সে ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম: 'আমিন'। অতঃপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যার নিকট আপনার নাম পেশ করা হয়েছে কিন্তু সে আপনার প্রতি দরূদ পড়েনি সে ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম 'আমিন'। সর্বশেষ যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা মাতার কাউকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, কিন্তু তাদের খেদমত, সেবা-যত্ন করে জান্নাতের মালিক হতে পারেনি সেও ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম, 'আমিন'। বায়হাকী: ১৫৭২
অনেকই হয়তো ভাবছেন, সবে মাত্র রমজানুল মোবারক শুরু হল। আর কিছু দিন না হয় যাক। পরে কোমর বেঁধে ইবাদতে নেমে যাবো। তখন তাহাজ্জুদের জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে সব গুনাহ মাফ করিয়ে নেবো। সন্তুষ্ট করে নিবো প্রভুকে। এরকম স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে যাবে। এটি চির শত্রু শয়তানের ধোকা। আমাদের ঈমান-আমল ধ্বংসের জন্য শয়তানের এই সুন্দর পরিকল্পনাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বরং রমজানের আগে থেকেই আমরা যে পরিকল্পনা লালন করে আসছি, সে পথ ধরেই চলতে হবে। পৌঁছে যেতে হবে গন্তব্যে।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে পবিত্র রমজানের হক পরিপূর্ণরূপে আদায় করার তাওফিক দান করুন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিসম্পাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
-এএ