আবদুল কাইয়ুম শেখ।।
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী মাহে রমজানকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত। রহমত অর্থ হলো দয়া, অনুকম্পা ও করুণা। মাগফেরাত অর্থ হলো ক্ষমা, মাফ ও মার্জনা। নাজাত অর্থ হলো মুক্তি, নিষ্কৃতি ও পরিত্রাণ। আর একজন অপরাধী এই তিনটি বিষয়েরই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে।
মনে করুন! কোন ব্যক্তি অপরাধে অভিযুক্ত হবার কারণে গ্রেফতার হলো! এরপর তাকে কারান্তরীণ করা হলো। কারাগার মানেই হলো শাস্তি প্রদান করার জায়গা। অশান্তি ও কষ্ট-ক্লেশের জায়গা। সুখ ও শান্তি দান করার জন্য কারাগারে নেওয়া হয় না, বরং শাস্তি প্রদান করার জন্যই কারারুদ্ধ করা হয়। অপরাধে অপরাধী হয়ে যখন কোন ব্যক্তি কারান্তরীণ হয় তখন সে সব সময় দয়া, করুণা ও অনুকম্পার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। এরপর যখন তার ওপর দয়া করা হয় তখন পালা আসে ক্ষমা করে দেওয়ার। কেননা ক্ষমা পাওয়া ছাড়া কারাগার হতে বের হওয়ার কোনো পথ নেই। কারাগারের অশান্তি ও শাস্তি হতে পরিত্রাণের অন্য কোনো উপায় নেই। যখন অপরাধীর দণ্ড মওকুফ করে দেওয়া হয় কিংবা ক্ষমা করে দেওয়া হয় তখন পালা আসে মুক্তি দান করার। জেল হতে পরিত্রাণ প্রদান করার।
আর এ কথা সকলেই জানি, মানুষ মাত্রই অপরাধী ও গুনাহগার। আমরা সকলেই অপরাধী ও বিভিন্ন পাপের কলঙ্কে কলঙ্কিত। নবী-রাসুলগণ ছাড়া এমন কোন ব্যক্তি নেই যার অপরাধ ও পাপ নেই। যার জীবনে কোন অন্যায়- অনাচার নেই। তাই অপরাধী লোকগুলোকে মুক্তি দান করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানুল মোবারকের মত মহা নেয়ামত দান করেছেন। তিনি রমজান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম দশদিন রহমত বা দয়ার জন্য বরাদ্দ করেছেন। এই দশদিন তিনি নিজের বান্দাদের ওপর অবিরল ধারায় রহমত বর্ষণ করবেন। যে ব্যক্তি শরিয়ত সম্মত পন্থায় রমজানের প্রথম দশদিন অতিবাহিত করবে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দয়ার আচরণ করবেন! রহমতের অবারিত ধারা বর্ষণ করে করুণার চাদরে আবৃত করে নেবেন।
বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার করুণাধারায় সিক্ত হবে এবং রহমতের দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন সে মাগফেরাত পাওয়ার যোগ্য হবে। সে ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের দ্বিতীয় দশককে তার বান্দাদের মার্জনা করার জন্য নির্ধারণ করেছেন। এই দশদিন তিনি আপন বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য বরাদ্দ করেছেন। রমজানের দ্বিতীয় দশকে আল্লাহ তাআলা নিজের প্রিয় বান্দাদেরকে প্রচুর পরিমাণে ক্ষমা করেন। এরপর ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ জাহান্নাম হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার যোগ্য হয়ে যায়।
রমজানের রোজা, তারাবিহ ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি পালন করার মাধ্যমে লোকটি যখন মার্জনা পাওয়ার যোগ্য হয়ে ক্ষমা পেয়ে যায় তখন আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করেন। এ উদ্দেশ্যেই দয়াময় আল্লাহ তাআলা রমজানের শেষ দশককে বরাদ্দ করেছেন। এই দিনগুলোতে তিনি নিজের বান্দাদেরকে প্রচুর পরিমাণে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করেন। তবে রমজানের রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার শর্ত হলো এর দিনগুলো শরিয়ত নির্দেশিত উপায়ে অতিবাহিত করা।
তাই আসুন! রমজানের দিনগুলোতে সর্বপ্রকার অন্যায়, অনাচার ও পাপাচার বর্জন করে যথাসাধ্য নেক আমল করার চেষ্টা করি। অধিক পরিমাণে সৎকর্ম সম্পাদন করার চেষ্টায় নিরত থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা।
এনটি