আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আলগী ইউনিয়নে মাঠে খেলাকে কেন্দ্র করে সোনাখোলা ও বালিয়াচরা গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বালিয়াচরা গ্রামের বাসিন্দা আলগী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও ভাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এটিএম ফরহাদ নান্নুর বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও ফসল নষ্ট করা হয়। এছাড়াও ওই গ্রামের আরও ২টি বাড়িতে আগুনসহ ৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উভয় গ্রামের পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে ২৮ মার্চ (সোমবার) পুরো আলগী ইউনিয়নে মাইকিং করে পুলিশ। সংঘর্ষে ব্যবহৃত সকল অস্ত্র থানা অথবা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে বুধবার (৩০ মার্চ) বিকেলে ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো.হাবিবুর রহমান ঘটনা স্থলে গিয়ে, সংঘর্ষে ক্ষতি গ্রস্থদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাত করে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন। এসময় আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিক মিয়া উপস্থিত ছিল।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ২২ মার্চ (মঙ্গলবার) ভোরে সোনাখোলা ও বালিয়াচরা গ্রামের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে সোনাখোলা গ্রামবাসীরা তাদের পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন ভাড়া করে বালিয়াচরা গ্রামে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী বালিয়াচরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তাণ্ডব চলতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। সংঘাতে ৩টি বাড়ির রান্নাঘরে (পাঠ কাঁঠির ঘরে) অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাংবাদিক নেতা, পুলিশ সদস্য আকাশ মুন্সী, আ. হান্নান, জাফর, সিরাজ শেখ, নুরু কাজী, আব্দুল গফফার, হাবিল, কাউসার, মিজানুর মুন্সীর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও জমিনের রবিশস্য, মরিচ, কুমড়ো, লাউ, পিয়াজ, পুঁইশাক, ডাটা, টমেটো, কলাগাছ ইত্যাদি নষ্ট করা হয়। গম ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
সংঘর্ষে বালিয়াচরা গ্রামের জালাল শেখ, সালেহা, লতিফা বেগম, খোকন মুন্সি, রাজ্জাক শেখসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।
অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ঘরের মালামাল লুটের অভিযোগ করে আব্দুল গফফার জানান, হামলাকারীরা তার ঘরের মালামাল ভাংচুর ও লুটপাটসহ মেয়ের বিয়ের স্বণালংকারসহ মার্কসীট, আইডি কার্ড নিয়ে গেছে।
আব্দুল গফফারের বড় মেয়ে জানান, আমার ছোট বোনের বিবাহ ঠিক হওয়ায় বোনের জন্য নতুন দুই ভরি স্বর্নালংকার, হাতের ঘড়ি, পায়ের দুল এসএসসি, এইচএসসি মার্কসীট, পরিবারের অন্যদের ৩টি এনআইডিকার্ড, আমার ভাইয়ের সার্টিফিকেট সহ সব দলিলপত্র নিয়ে যায় সোনাখোলা গ্রামের লোক।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরবর্তীতে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে ভাঙ্গা থানা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহিমা কাদের চৌধুরী স্যার গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
ভাঙ্গা থানা সূত্রে আরও জানা যায়, এঘটনায় পুলিশ বাদী একটি মামলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। ঘোষণায় ৩১ মার্চের মধ্যে সব দেশীয় অস্ত্র জমা দিলে বলা হয়। পরবর্তীতে পুলিশী অভিযানে কোনো ব্যক্তির বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বালিয়াচরা গ্রামের ছেলেদের ক্রিকেট খেলায় বাঁধা দেয় সোনাখোলা গ্রামের ছেলেরা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ২১ মার্চ সোমবার কলেজ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে বালিয়াচরা গ্রামের ছেলেদের মারধর করে সোনাখোলা গ্রামের ছেলেরা। স্থানীয়রা নিকটস্থ ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তারা চিকিৎসা নেয়। এরই সূত্রপাতে সৃষ্টি হয় দু গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ।
-এএ