মুফাককিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.।।
ভাষান্তর: আবদুল কাইয়ুম শেখ।।
মাদরাসা টিকে থাকতে হলে, জীবনের ময়দানে স্থান করতে হলে, জীবনের যোগ্যতা ও উপযোগিতা প্রমাণ করতে হলে নিজেদের ভিতর উপকারিতা সৃষ্টি করতে হবে। জীবনে তাদের প্রয়োজনীয়তা সাব্যস্ত করতে হবে!
কাজে-কর্মে জানান দিতে হবে, এসব প্রয়োজন আমাদের ছাড়া পূরণ হতে পারে না। কেননা সময় যে ভাষা বুঝে তা প্রতি যুগে বুঝে এসেছে। তার জন্য কোন অনুবাদের প্রয়োজন নেই। আরবি ভাষায় বললেও বুঝবে। ইংরেজি ভাষায় বললেও বুঝবে। মৌন ভাষায় বললেও বুঝবে। বোবা ব্যক্তি বললেও বিষয়টি বোঝা যাবে। যদি কোন ব্যক্তি কিংবা কোনো বড় ভাষাবিদ এ কথা বলে, তা হলেও সময় বুঝতে পারবে। জমানা যে ভাষাকে বুঝে, তা হলো যোগ্যতা ও উপযোগিতার ভাষা।
আল্লামা ইকবালের ভাষায় জীবন হলো এক যোগ্যতা। জীবন কোন করুণা, অনুকম্পা নয়। জীবনকে নিজে অর্জন করতে হয়। আপনি যোগ্যতা অর্জন করুন! উপযোগিতা সৃষ্টি করুন। পৃথিবী আপনার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হবে। জার্মানি দু’টি ভয়ঙ্কর যুদ্ধের শিকার হওয়ার পরও এজন্য টিকে রয়েছে যে, সে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। টিকে থাকার উপযোগিতার প্রমাণ দিয়েছে। তাকে চিরকালের জন্য কেউ নিঃশেষ করে দিতে পারে নি।
পৃথিবীতে এমন অনেক জাতি ছিল যারা একদম ধংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বহু জাতি এমনও রয়েছে যারা বারবার পরাজিত হওয়ার পরও টিকে রয়েছে। মুসলমানরা তাতারদের মাধ্যমে পরাজিত হয়েছে। তারা এমন শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছে যে, পৃথিবীর কোন জাতি এমনভাবে কখনো পরাভূত হয় নি। কিন্তু যেহেতু তাদের ভিতর মানুষের উপকার করার উপাদান বিদ্যমান ছিল, তারা নিজেদের মধ্যে একটি পয়গাম ধারণ করে, তারা এক জীবন্ত দাওয়াতের অধিকারী, এ জন্য তাতারদেরকে তাদের সামনে অবনত হতে হয়েছে। মুসলমানরা তাতারদের সামনে, তাদের তলোয়ারের সামনে নত হয়েছে ঠিক; কিন্তু তাতারদের তলোয়ারসমূহ এবং তাদের মন-মস্তিষ্ক ও অন্তরগুলোকে এসব মুসলমানদের উপকারিতার সামনে শির নত করতে হয়েছে।
আমার প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা! আজ আমাদের দীনি শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর সামনে একটি রাস্তা খোলা আছে। তা হলো- তারা টিকে থাকার যোগ্যতা প্রমাণ করা। নিজেদের এই বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা যে, যদি তারা না থাকে, তাহলে মানুষের জীবন অর্থহীন হয়ে যাবে কিংবা অসম্পূর্ণ হয়ে পড়বে অথবা ন্যূনতম পক্ষে অনেক বড় এক শূন্যতা তৈরি হবে। মানুষের জীবনে এমন এক ফাটল সৃষ্টি হবে যা এসব মাদরাসা ছাড়া আর কেউ পূরণ করতে পারবে না।
দয়া ও করুণা করার আবেদন পৃথিবীতে কখনো শোনা হয় নি এবং কখনো শোনা হবে না! তা ছাড়া আজকের সময়টি গণতন্ত্রের। গণতন্ত্রও এমন যে, সার্বজনীনতা ও সাম্যবাদকে গ্রহণ করে নিয়েছে। একদম বুঝে শুনে একটি লক্ষ্য হিসাবে, কেবল লক্ষ্যই নয়, বরং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসাবে সাম্যবাদকে গ্রহণ করা হয়েছে। অতএব, এই মতবাদে এর অবকাশ একদম নেই যে, আমরা এ কথা বলবো, ভাই! আমাদেরকে অমুক শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছিল! আমরা অমুক যুগে টিকেছিলাম। আপনারাও আমাদেরকে টিকিয়ে রাখুন! হয়ত আপনারা বলবেন, আমরা স্বাধীনতা আন্দোলনে এত পরিমাণে অবদান রেখেছি! আমাদের টিকে থাকার অধিকার রয়েছে! এসব কথা আজকের পৃথিবী শুনতে প্রস্তুত নয়!
অনুবাদক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ মাদরাসা চকবাজার ঢাকা।
-এএ