মুযযাম্মিল হক উমায়ের
এক ব্যক্তি আল্লামা থানবী রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কাছে প্রশ্ন করলো, হজরত! আলেমগণ রাজনীতিতে ব্যর্থ হতে দেখা যায় কেনো?
উক্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখুন! প্রতিটি কাজ ওই কাজের পদ্ধতিতে করতে হয়। শুধু খামাকা পরামর্শ আর পরামর্শ করে কৌশলী কাজে সফল হওয়া যায় না। কাজকে যখন ওই কাজের পদ্ধতিতে করা হবে তখন অবশ্যই সেই কাজে সফলতা আসবে।
আলেমগণ যারা এই রাজনীতিতে নেমেছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, তাঁরা সাধারণ লোকদের থেকে তাঁদেরকে মানবে— এই ধরনের আশা করতে পারেন না।
আর যদি কখনো এই কথা জানাও যায় যে, এখন সাধারণ লোকেরাও তাঁদের দিক—নির্দেশনা মানবে এবং সাধারণ লোকদের মধ্যেও মানার মাদ্দা আছে, তখনও আলেমদের রাজনীতিতে আসা উচিত নয়।
বরং এখনো যারা দুনিয়ায় মালদার। ক্ষমতাবান। প্রভাবশালী। তারা এইসব কাজ আঞ্জাম দেবে। তবে তারা তাদের কাজকে শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালনা করার জন্য আলেমদের থেকে জায়েজ—নাজায়েজ, হালাল—হারাম বিষয়ে জেনে নিবে।
মোটকথা, আলেমদের মূল কাজ হলো শরীয়তের দিক—নির্দেশনা প্রদান করা। তাঁদের এই মূল কাজ নিয়েই পড়ে থাকা উচিত। এটিই মূল কথা। যাচাই করলে আপনি দেখবেন, রাষ্ট্রপ্রধানের মোকাবেলায় যেখানেই আলেমগণ ব্যর্থ হয়েছে সেখানেই বেউসূলীর সাথে কাজ করাকে মূল কারণ হিসাবে পাবেন’।
মাওলানা আমীর শাহ খান রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা অত্যন্ত চমৎকার বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের মোকাবেলা একমাত্র অন্য আরেকটি রাষ্ট্রই করতে পারে’।
ইমাম হুসাইন রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কতো পবিত্র মানুষ ছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতি ছিলেন। ছিলেন সাহাবীও। কিন্তু তিনি ইয়াজিদের মোকাবেলায় সফল হতে পারেননি। কারণ, এটিই ছিলো। একা কখনোই রাষ্ট্রের মোকাবেলা করা যায় না। যদি কেউ করতে যায়, তখন তার ব্যর্থ হয়েই ফিরতে হয়’।
আল্লামা থানবী রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা এই বিষয় প্রসঙ্গেই নিজের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এক ভদ্রলোক আমার এখানে এসে আমাকে বললো, হজরত! আপনি অন্যান্য আলেমদের মতো রাজনীতিতে কেনো যোগদান করেন না? সক্রিয় ভূমিকা কেনো রাখেন না?
উত্তরে বলি, এখানে একটি বিষয়ের ত্রুটি আছে। সে বললো, সেই ত্রুটি কোনটি? তখন বলি, এই দলের মধ্যে কেউ আমীরুল মুমিনীন নেই।
ওই লোক বললো, হজরত! তাহলে আমরা আপনাকে আমাদের দলের আমীরুল মুমিনীন বানিয়ে নিই। আমি বললাম, ঠিকাছে। আমি আমীরুল মুমিনীন হতে রাজি। তবে এখানে আমার কয়েকটি শর্ত আছে। সেগুলি আপনারা মেনে নিয়ে আমাকে আমীরুল মুমিনীন বানালে আমি আমীরুল মুমিনীন হতে রাজি আছি। সেই শর্তগুলির মধ্যে, ১. সমস্ত নেতা পর্যায়ের আলেমগণ আমি আমীরুল মুমিনীন এই কথা উল্লেখ করে স্বাক্ষর করবেন।
২. সমস্ত মুসলমানগণ তাদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে যা যা কিছু আছে, সবকিছুর মালিক আমাকে বানিয়ে দিতে হবে। আমি সেগুলির মধ্যে যেনো স্বাধীনভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারি।
কারণ, যদি আমার কাছে অর্থসম্পদ না থাকে, তখন প্রতিটি প্রয়োজনের সময় আমার চাঁদা ওঠাতে হবে। আমি ভিক্ষুক আমীরুল মুমিনীন হতে রাজি নই। আরো কিছু শর্ত বলেছিলাম।
শর্তগুলি এই জন্য বলেছিলাম যে, শক্তি ছাড়া যদি আমি কাগজে লিখিত আমীরুল মুমিনীন হয়ে যাই, তাহলে আজকে আমীরুল মুমিনীন হবো, আগামীকাল ‘আসীরুল কাফিরুন’ তথা কাফেরদের হাতে বন্দি— হয়ে যাবো। সুতরাং আলেমদের উচিত তাঁদের মূল কাজেই নিজেকে জড়িয়ে রাখা।
আর রাজনীতিতে যেতে হলে, রাজনীতির নিয়মাবলী মেনে রাজনীতির ময়দানে অগ্রসর হওয়া। শুধু কাগজে রাজনীতিবীদ লেখার দ্বারা রাজনীতিবীদ হওয়া যায় না। এমন রাজনীতির দ্বারা সফলও হওয়া যায় না। এমন রাজনীতি করার দ্বারা আজীবন ব্যর্থ আর ব্যর্থতাকেই বহন করে যেতে হবে’।
সূত্র: মালফুজাতে হাকীমুল উম্মাত: খ.৩, পৃ.২৯
-এটি