।।ফাহীম সিদ্দিকী।।
তথাকথিত বিশ্ব ভালবাসা দিবস। বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলার পূর্বে প্রথমে দিবসটির সংক্ষিপ্ত পরিচয়, তার উদযাপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা যাক। যাতে করে এর উপর নির্ভর করে ইসলামের অবস্থান আমরা জানতে পারি।
ইতিহাসের দৃষ্টিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি:
বাংলা উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, এ দিনটি ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ বা sent Valentines day (সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে) তথা পাদ্রী ভ্যালেন্টাইন এর দিবস কিংবা ‘ফিস্ট অব সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স’ রূপে অভিহিত। বাংলায় যা ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে পরিচিত। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, এ দিবসটি মূলত সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক পাদ্রীর স্মরণে পালন করা হয়।
দিবসটির প্রথম দিকের উদযাপন পদ্ধতি:
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, দিবসটি প্রথম দিকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ রূপে পরিচিত হয়ে খ্রিস্ট সমাজের ধর্মীয় আদলেই পালনীয় হয়ে আসছিলো। কিন্তু কালক্রমে ঐ দিবস তার ভাবমূর্তি হারিয়ে ভোগের সাগরে তলিয়ে যায়। ক্রমশই তা ধর্মীয় বিষয় থেকে ভোগবাদী ও অপসাংস্কৃতিকদের ভালো লাগায় পরিণত হয়। এক সময় ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ নামেই বিশ্বব্যাপী একটি অবৈধ প্রেমভালোবাসা নিবেদন দিবসের জন্ম হয়। যা অনেক দেশে প্রথম দিকে রাষ্ট্রীয় দিবস হিসাবে মর্যাদা পেলেও পরবর্তীতে তার কুফল ও অসামাজিকতা দেখে সচেতন অনেক রাষ্ট্রই পরে তা বাতিল ঘোষণা করে। এমনকি এ দিবসটি এখনও উল্লেখযোগ্য কোন রাষ্ট্রে ছুটির দিন বলে বিবেচিত হয়নি।
দিবসটির বর্তমান উদযাপন পদ্ধতি:
এ দিবস উদযাপনের প্রতক্ষ্যদর্শী যারা তাদের কাছে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তারা তো নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আদলে মানবতা বিরোধী এমন অনেক তথ্য প্রদান করতে পারবেন, যা আমাদের মানবাত্মাকে ব্যথিত করে তুলবে। কিন্তু যারা এ দিন বাইরেই বের হন না বা হলেও সমাজের বাস্তবচিত্র জানার সুযোগ হয়ে উঠে না, তাদের জ্ঞাতার্থে কিছু কথা আমাদের উল্লেখ করতে হয়। যাতে সমাজের এ ভঙ্গুর দশার কিছুটা হলেও ধারণা তারা পান। সকল তথ্য উপস্থাপন যেহেতু আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, আর তা শতভাগ সম্ভবও নয়। তাই মৌলিক ও উপদেশ গ্রহণ করার উপযোগী কিছু তথ্য উপস্থাপন করেই ক্ষ্যান্ত হবো।
এ দিন নারীরা সেজে-গুজে নিজেদের সর্বোচ্চ রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে রাস্তায় বের হয়। আর তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বহু বেহায়া পুরুষ রাস্তায়, পার্কে এসে ভিড় জমায়। বহু চরিত্রহীন তাদের চরিত্র হরণের নেশায় বুধ হয়ে বসে থাকে রাস্তায়। অফারে কাজ না হলে সুযোগ বুঝে ইভটিজিং, ধর্ষণ করতেও পিছপা হয় না তারা। স্বেচ্ছায় যারা রাজি হয়, তাদেরকে একান্তে নিয়ে হোটেল বুকিং, রুম ভাড়া করা, বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া অথবা বিনোদনের নামে স্পটগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। ইজ্জত হরণের দুরভিসন্ধিতে কখনো তাদের সম্ভ্রম বিলানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। কখনো ঢাল হিসাবে বিবাহ করার মিথ্যা প্রলোভন, ওয়াদা-কসম খাওয়ার কথাও শোনা যায়। কখনো বা অতি সত্বরই ম্যানেজ করার মিথ্যে আশ্বাসবাণীও শোনানো হয়। ক্ষেত্র বিশেষ কেবল একবার সুযোগ প্রদানেই তুষ্ট হওয়ার মিথ্যা গ্যারান্টি দিয়ে সতীত্ব ভোগের প্রস্তাব করা হয়। কোনো কোনো লম্পট পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তা ক্যামেরা বন্দী করে ও ব্ল্যাকমেইল করে বারংবার তার দেহ পাওয়ার ফন্দি আঁটে।
হতভাগা অবলা নারী তার সতীত্ব হারিয়ে তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরিবার ও লোক সমাজে জানা-জানি হওয়ার ভয়ে পরিবার থেকে বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা করে। মিথ্যে প্রলোভনকারী ঐ নরপিচাস এটাকেই মনে করে বড় সুযোগ। এবার লুটে-পুটে খাওয়ার আরো সুযোগ সন্ধানী সে হয়। এভাবে নারী এক সময় হয়ে পড়ে এক ঘরে। কেউবা হয় ঘর ছাড়া। আর তখনই উপায়-উপায়ন্তর না দেখে কেউ আশ্রয় নেয় পতিতালয়ে। কেউবা কষ্টে অসহ্য হয়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। যেন চিরকুটে এ কথা লিখা ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না; “এ মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়”।
নারীদের প্রদর্শনীর এ দিনে পুরুষদের অগ্রসরতাও কম নয়। সেদিন অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য রাস্তার ধারে পসরা সাজিয়ে বসে পড়ে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু, হস্তদ্বয়, এমনকি মুখ পর্যন্ত মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেওয়ার জন্য। এভাবে নির্লজ্জতার আরো এক ধাপ অগ্রসর হয় নারী। আর সমাজ নির্লজ্জতার একধাপ নিচে নেমে যায়।
নারী-পুরুষের অবাধ অশ্লীলতাকে সঙ্গ দিতে ব্যবসায়ীগণও কম অগ্রসর হন না। তারা বরং এই দিবসের অশ্লীলতাগুলোকে আরো উস্কে দেয়। সাধারণ ছোট ছোট কফি-চায়ের দোকান, চটপটির দোকান, ফাস্টফুডের দোকানও সেদিনের আয়োজন থেকে মুক্ত থাকে না। গান-বাদ্য বাজানো ছাড়াও রকমারি ডিজাইনের মাধ্যমে জানান দেন তারা এ দিবস আগমনের। আর তাদের বাহারি আয়োজনে জুটে হাজার কাস্টমার।
এদিন বড় বড় হলরুমে আয়োজন করা হয় তারুণ্যের মিলন মেলার। যেখানে নানা রঙ্গের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিল করা হয় হলরুমের অভ্যন্তর। অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইভ ব্যান্ড কনসার্ট, ডেলিশাস ডিনার এবং উদ্দাম নাচ। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সিংহ ভাগ আগতই অংশ নেয় সে নাচে। এভাবে নাচতে নাচতে হায়া-মায়া, সভ্যতা-শালীনতা সব ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েই বাড়ি ফেরে অংশ গ্রহণকারীগণ। আর অর্থের পাহাড় গড়ে তুলে স্বার্থবাদী গ্রুপ।
এভাবে বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে সেদিন তৈরি করা হয় যুবক-যুবতীদের চাহিদামাফিক। সারা দিন চলে হৈ-হুল্লোড় আর উন্মাদনা। প্রেমিক যুগলের চোখে-মুখে থাকে যৌন উত্তেজনা। সুযোগ পেয়ে নীরবে-নিবৃতে মেতে উঠে তারা নির্লজ্জতায়। দিন শেষে রিসোর্ট, আবাসিক হোটেলে ক্যান্ডেল লাইটের আলো-আধাঁরির মিশেলে হারিয়ে যায় তারা পশুত্ব ও অসভ্যতায়।
এক কথায় বললে, যৌনতা, অশ্লীলতা ও নোংরামির সরগরম চর্চাই হলো এ দিবসের কর্মসূচি! এখন তো শোনা যাচ্ছে, এ দিবসের বহু আগ থেকেই নাকি হোটলগুলো বুকিং হয়ে যায়। বিশেষ প্রয়োজনেও আপনি কোনো হোটেল খালি পাবেন না এদিনে। এক রুমের বেডগুলো এই এক দিনের জন্য ভাড়া হয় চড়া মূল্যে । যার গ্রাহক ও কাস্টমার এক-দুইজন নয়, অনেক।
এ সুযোগটিকে আরো সহজলভ্য করে তুলে এক শ্রেণির কমপাউন্ডার বা ওষুধ ব্যবসায়ী। যারা ওষুধ বিক্রির নামে ঐদিন ও এর আগে-পড়ে ব্যাপক পরিমাণ যৌন উত্তেজক ও জন্ম বিরতিকরণ সামগ্রী অবিবাহিত নর-নারী বা লম্পট, চরিত্রহীন নারী-পুরুষের কাছে বিক্রি করে। এমনকি যারা অর্থের লোভে ছোট অবুঝ বাচ্চাদের কাছেও তা বিক্রি করতে বিরত হয় না।
আফসোস “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” পালন হওয়া শুরু করেছে জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান শিক্ষাঙ্গনেও। স্কুলের ক্লাস আইনানুগ বন্ধ না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রী, এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আবেগের দাবীতে অঘোষিত বন্ধই হয়ে যায় ক্লাশ। স্কুল-কলেজে সেদিন চলে শিক্ষার পরিবর্তে ভালোবাসা প্রদানের মহোৎসব। কোথাও এ দিনকে বেছে নেওয়া হয় সকল ক্লাসমেটের সামনে প্রেমিক কর্তৃক প্রেম নিবেদনের দিন হিসাবে। যেখানে প্রেমিক এক হাঁটু গেঁড়ে ক্লাসমেটদের সামনে তার প্রেমাস্পদকে ফুল বা ফুলের তোড়া উপহার দেয়। আর প্রেমাস্পদ ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে সকলের বাহবা কুড়ায়। কোথাও এমন অনুষ্ঠানে জোর পূর্বক কোনো মেয়েকে ফুল গ্রহণ করতেও বাধ্য করার কথা জানা যায়। যার অসম্মতির খেসারতে মেয়ের জীবন হয়ে পড়তে পারে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ।
কোনো কোনো নারীকে সেদিন যেমন খুশি তেমন সাজো- এর নামে পূর্ণ উলঙ্গ করে আনার কথাও শোনা যায়। কোথাও শিক্ষক-শিক্ষিকারাই এ দিবস উদযাপনে আগ্রহ দিচ্ছেন। কচি-কাঁচা বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রেম-ভালোবাসা থেকে দুরে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরাও যার খেসারতে নোংরামির সাথে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। সুযোগ বাড়ছে এতে প্রেমনিবেদনকারীদের। এতে বারোটা বাজছে শিক্ষা ও নীতি-নৈতিকতার।
মিডিয়া পিছিয়ে নেই এককদমও। যে মিডিয়া অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সুর উঠানোর কথা, আফসোস! আজ তা অশ্লীলতাকে প্রমোট করছে। রীতিমতো সেদিকেই দর্শকদের মন-মাইন্ড তৈরি করছে। ফেইসবুকসহ ইন্টারনেট জগতে মিলছে এ দিবসকে ঘিরে নোংরামীর চরম উপকরণ। তাতে থাকছে অবৈধ ভালোবাসার ম্যাসেজ, ডায়ালগ থেকে নিয়ে অবৈধ দেহভোগ করার প্র্যাকটিকেল ফর্মূলা।
ভালোবাসার নাটক, সিনেমা, চরিত্র বা কৌতূক পর্যন্ত বানিয়ে বিশ্বের মানুষকে শিখানো হচ্ছে ভালোবাসার অসৎ পথ ও পদ্ধতি। লাজুক প্রকৃতির মানুষগুলোকে সেখানে সেকেলে, অযোগ্য, আনস্মার্ট প্রকাশ করে হিরো দেখানো হচ্ছে নষ্ট নায়ক-নায়িকা ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। যা সমাজ উন্নয়নের মূল ভিতটাকেই দূষিত করে ছাড়ছে। বেহায়াপনাকে আজ এতটাই চরমে পৌঁছানো হয়েছে যে, ১৪ ফেব্রুয়ারির দিবসকে আরো অধিক ভোগবাদী করতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ২১ তারিখ পর্যন্ত ভালোবাসার বিভিন্ন প্রোগ্রাম সাজানো হয়েছে।
আফসোসের সাথে বলতে হয়, “ক্লোজাপ কাছে আসার গল্প” নাম দিয়ে ইউটিউবে এমন কিছু ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যা প্রেমের ক্ষেত্রে ধর্মের বাঁধাকেও উঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে একজন হিজাব পরিহিতা নারীকে গলায় ক্রশ ঝুলানো এক ছেলেকে ভালোবাসতে দেখানো হয়েছে। তারা তাদের ওয়েবসাইটে “দ্বিধাহীন কাছে আসার গল্প ২০২১” শিরোনামে গল্প লিখে পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করছে। এর মধ্যে তিনটি সেরা গল্প নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারী তারা আয়োজন করবে বিশেষ পর্ব। এ দিবসটি বর্তমান সময়ে ব্যাপকভাবে অসামাজিক ও অবৈধ পন্থায় উদযাপিত হওয়ায় আজ তা ভালোবাসার পরিবর্তে অন্তর্জ্বালা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের পরিবর্তে “বিশ্ব বেহায়া দিবস” এ রূপ লাভ করেছে।
চিন্তার বিষয় হচ্ছে, যে হারে জনগণ তাতে অংশগ্রহণ করছে, বিভিন্ন পজেটিভ কমেন্টসও করছে, মিডিয়াও দিন দিন বিষয়টিকে ব্যাপকতর করছে, এর ফলে না জানি বাংলাদেশে আন্তধর্মীয়বিবাহ প্রথাও চালু হয়ে যায়। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের মতামতকে ডিঙ্গিয়ে যার তার সাথে বিবাহ করার মানসিকতাও প্রবল হতে শুরু করে। বিবাহ বহির্ভূত ভালোবাসা ও অবৈধ মিলনের চিত্রও দেখতে হতে পারে পথে-ঘাটে-জনসম্মুখে। আর যদি নষ্ট রুচির মানুষ সমকামিতা, পশুগামিতা, লিভটুগেদারের সংস্কৃতিও আমদানী করে বসে, এতেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। যার খেসারত দিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। এতে বারোটা বাজবে ধর্ম ও মানবতার। আল্লাহ পানাহ!
একজন মুসলিম তা উদযাপন করতে না পারার কারণ:-
দিবসটি উদযাপনের বিস্তারিত তথ্য আমাদের সামনে আসার পর ইসলাম সম্পর্কে নুন্যতম জ্ঞান রাখা যে কোনো মুসলিমই বলবে, মৌলিক কয়েকটি কারণেই একজন মুসলিম এ দিবস উদযাপন করতে পারে না। কারণগুলো সংক্ষেপে বললে, এক. এতে ব্যক্তিগত ক্ষতি। দুই. সমাজের ক্ষতি। তিন. ঈমানের ক্ষতি। নিম্নে ক্ষতিগুলোর ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া যাক।
এ দিবসে নামায ব্যাপকভাবে অনাদায় থেকে যায়। অথচ নামায সময়মত আদায় করার বিশেষ নির্দেশ এসেছে আল কুরআনে।(সূরা বাকারা ২৩৮)
দিবসটি উদযাপনে আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ ও মেধা, যোগ্যতা ও যৌবনের যথেষ্ট অপচয় হয়। অথচ অপচয় ইসলামে নিষিদ্ধ।(বনি ইসরাঈল ২৭)
তাছাড়া ইসলাম বলে, তোমাদেরকে সেদিন যাবতীয় নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।(সূরা আত তাকাসুর ৮)
এদিন একজন মুসলিম আল্লাহ থেকে ভুলে থাকার হরেক রকমের পণ্য নিজে কিনে ও অন্যকে কিনে দেয়। গায়িকা ভাড়া করা, ডেস্কসেট ভাড়া আনা, প্রেমকার্ড কেনা, ভালোবাসার গান ডাউনলোড করা ইত্যাদি। অথচ এসব থেকে আয়াতে বারণ করা হয়েছে। (সূরা লুকমান ৬)
এতে ইসলামের পর্দা বিধান ও শরীর ঢেকে রাখার নির্দেশ উপেক্ষিত হয় মারাত্মকভাবে। যার নিদের্শ করা হয়েছে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে।
দিবসটিতে যিনা, ব্যভিচার ও তার উপায়-করণের সবরকম ব্যবস্থা থাকে। যা থেকে মুসলমানদের কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।(সূরা নাহল ৯০)
কেবল যিনা-ই নয়, যিনার কাছে যাওয়াও ইসলামে নিষিদ্ধ।(সূরা বনি ইসরাঈলঃ৩২) ইসলামে অশ্লীল কাজ কর্ম যেমন নিষেধ, অশ্লীলতা ছড়ানোও নিষেধ।(সূরা নূরঃ ১৯)
অনেকে এ উদযাপনের অবাধ সুযোগে অমুসলিমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তা বিবাহের দিকেও অগ্রসর হয়। অথচ একজন মুসলিমের জন্য অমুসলিম নারী-পুরুষের আকর্ষণ রাখা যেমন নিষেধ, তাদের বিবাহ করাও নিষেধ। (সূরা বাকারার ২২১)
একজন মুসলমান এদিনে আল্লাহকে প্রায় ভুলে থাকারই ধৃষ্টতা দেখায়। অথচ এমন ভুলে থাকতে তাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। (হাশর ১৯)
সেদিন এরা অবাধ্য ও আল্লাহবিমুখ মানুষদের সঙ্গে সময় কাটায়। অথচ এদের সঙ্গ দিতেও কুরআনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।(সূরা কাহফ ২৮)
এসব দিবসের আগে-পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও যে ইসলাম বিরোধী অপপ্রচার চালানো ও বিপরীত কালচারকে উপভোগীয় করার চিত্র দেখা যায়। যা মুসলমানদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমান ও বিশ্বাসকে দুর্বল করে ফেলে। অনেক সময় এমন অপপ্রচারে অনেকে সংশয়গ্রস্তও হয়ে পড়ে। অথচ এমন মজলিসে একজন মুসলিমকে কুরআন বসতেই বারণ করে। (সূরা নিসা ১৪০)
এ প্রোগ্রামগুলোতে বিভিন্ন কুফরী কথাবার্তাও হয়। যা মেনে নিলে কাফের হতে হয়। আবার চুপ থাকলে ইসলাম দূর্বল হয়। যার উভয়টিই আল কুরআনে নিষিদ্ধ। (সূরা আনআম ১২১)
এ দিবসের ব্যাপক প্রচারণার কারণে একজন মুসলিম ভোগবাদী কালচার দেখে ফেলে। এতে কেউ কেউ অশ্লীলতা ও খারাপ মানুষগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়ে। অথচ কুরআনে তাও নিষেধ। (সূরা হুদ ১১৩)
কেউ কেউ তাদেরকে বন্ধু বানিয়ে ফেলে। যার অনুমতি ইসলামে নেই। (মুমতাহিনা ১৩)
পূর্বে আমরা জেনেছি যে, এটি নিরেট একটি খ্রিস্টীয় বা মূর্তিপূজারী কিংবা ভোগবাদী সংস্কৃতি। একজন মুসলিমের যে সংস্কৃতি গ্রহণের কোনোই সুযোগ নেই। হাদিসে অন্য সংস্কৃতি গ্রহণকারীদের মুমিন নয় বলেও ধমক দেওয়া হয়েছে।(তিরমিযি ২৬৯৫)
এসব ছাড়াও সেদিন ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, অঙ্গ-প্রতঙ্গ বা মনের দ্বারা জানা-অজানা অনেক গোনাহই হয়ে যায়। চোখের গোনাহ তো হবেই হবে। লজ্জাস্থানের গোনাহ, তার সম্ভাবনাও কম নয়। অথচ এ দুটি অঙ্গের গোনাহ থেকে বাঁচতে আল কুরআন বিশেষভাবে মুসলিমদেরকে হুঁশিয়ার করেছে।(সূরা নূর ৩০)
তাছাড়া অন্যকে কষ্ট দেওয়া, তার অনুমতি ছাড়া তার জায়গা ব্যবহার করে স্টেজ প্যান্ডেল ও অন্যান্য গর্হিত কাজ তো আছেই। যার সবটিই ইসলামে নিষেধ। অল্প কথায় যা বর্ণিত হয়েছে এভাবে, তোমরা সকল প্রকার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য গোনাহ থেকে বেঁচে থাকো। (সূরা আনআম ১২০)
এ দিবস পালনকারীদের দেখে দেখে যারা দিবসটি উদযাপন করবে, তাদের গোনাহও ঐ ব্যক্তির গোনাহ হিসাবে লেখা হবে।(সহিহ ইবনে খুযাইমা ২৪৭৭)
সর্বশেষ নিজে অন্যায় না করলেও এ দিবস উদযাপনে অন্যায় কাজে সহযোগিতা করা হয়। যা থেকেও কুরআন আমাদের সতর্ক করেছে জোরালোভাবেই। (সূরা মায়েদা ২)
তাদের বারণ না করলে ‘অসৎ কাজে বাধা’ না প্রদানের গোনাহও হয়ে যাচ্ছে আমাদের থেকে।
এসব কারণে ইসলামকে পছন্দকারী কোনো মুসলিম কখনোই এ দিবসকে সমর্থন করতে পারে না। তার নিজের জন্য যেমন নয়, তার পরিবারের জন্যও নয়। দেশের স্বার্থে যেমন নয়, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রের স্বার্থেও নয়। কারণ পৃথিবীর যেখানেই দিবসটি চলমান হোক, এর ক্ষতি উপচে পড়বে মুসলিম বিশ্বের উপরও। এতে উদযাপনকারী দেশ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বমানবতা। যার কুফল উঠাতে হতে পারে মুসলিম বিশ্বকেও।
রাষ্ট্রীয় বাধা না হয় নেই, ঈমানী বাধা, সুস্থ মস্তিস্কের দাবী, সভ্য রুচির চাহিদা; আমরা কি অস্বীকার করতে পারবো? এগুলোর দোহাই দিয়ে অন্তত তা থেকে বিরত থাকার নিয়ত কি করতে পারি না?! পারি, অবশ্যই পারবো এবং পারতে যে আমাকে হবেই। কারণ এ দুনিয়ার বিনোদন সহজ হলেও এর পরিণতি ও ক্ষতি যে সাধারণ নয়।
হে আল্লাহ! বিনোদনের অবাধ এ পরিবেশ থেকে আমাদের মুক্ত করো। তোমার ভয়ে, তোমাকে পাওয়ার আশায়, তোমার জান্নাত ও জাহান্নামের কথা মনে করে আমাদেরকে তা থেকে বাঁচিয়ে রেখো। আর বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবসের এ উৎসবকে আমাদের জন্য বিশ্বব্যাপী উৎকট, উৎকণ্ঠার বস্তু বানানো থেকে হেফাযত করো। আমিন!
গ্রন্থনা- দাওয়াহ প্রকাশনের পক্ষে ফাহীম সিদ্দিকী।
-কেএল