শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণদের চোখে ভ্যালেন্টাইন’স ডে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খাদিজা ইসলাম।।

সাল ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দ। রোম নগরীতে বাস করতেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক খ্রিস্টান এক পাদ্রী। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। ইতিহাসে পঞ্চাশ জনের মতো ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যক্তি পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে দুজন অত্যন্ত বিখ্যাত। একজন ভ্যালেন্টাইনকে রোমান রাজা কারাবন্দি করেছিল। তিনি অন্তরীণ হওয়ার পর কারাগারের প্রধান রক্ষকের মেয়ের প্রেমে পড়েন। মেয়ের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি একটি প্রেমময় চিরকুট লিখে যান। এ জন্য তিনি খ্রিষ্টান সমাজে প্রেমিকদের যাজক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

প্রেমিকদের যাজক ভ্যালেন্টাইন ১৪ ফেব্রুয়ারি মারা যাওয়ার পর তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন শুরু হয়। আর এ দিনের নাম রাখা হয় ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সেই থেকে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ অল্প সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে আজ এ দিবসটি নিয়ে টালমাটাল অবস্থা। অপসংস্কৃতির এ বেড়াজাল থেকে রক্ষা পায়নি বাঙালি জাতিও।

সময়ের পরিবর্তনে আমাদের দেশে শুরু হয় এ দিবসের পথচলা। প্রতি ১৪ ফেব্রুয়ারী ঘটা করে পালিত হয় কথিত ভালোবাসা দিবস। কিন্তু এ দিবস আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কীইবা দিচ্ছে সমাজকে? সচেতন তরুণরাইবা কীভাবে দেখছে এ দিনটিকে? এসব বিষয়ে মতামত জানতে আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম মুখোমুখি হয়েছিল দেশের ভার্সিটি পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে। পাঠকের জন্য তুলে ধরছি তাদের মতামতগুলো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ফাহাদ জাকির মনে করেন, ‘পবিত্র ভালোবাসা কোনো দিনক্ষণ দেখে হয়না। কথিত এ ভালোবাসা দিবসে যা হয় তা হলো অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, সম্ভ্রমহানির ছড়াছড়ি। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে কখনোই ভালোবাসার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া সম্ভব নয়। ভালোবাসা দিবসের নাম দিয়ে নোংরামি বন্ধ করতে হবে । প্রশাসন থেকে শুরু করে আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় থেকে সোচ্চার হতে হবে। একজন মুমীনের ভালোবাসা বরাবরই সৃষ্টিকর্তার প্রতি হওয়া উচিত।’

ঢাবি’র ফ্রেন্স ল্যাংগুয়েজ এন্ড কালচারের ৪র্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী কাজী পরশ মনে করেন, ‘সত্যিকার ভালোবাসা ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তে নিছক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আজ তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের এত কদর। দিনশেষে সত্যিকার ভালোবাসা বলতে কিছু থাকলে জয় হোক ভালোবাসা দিবসের। ভালোবাসা দিবস পালন কারীদের। ভালোবাসার নামে ভণ্ডামির সুযোগ দেয়া যাবে না। সরকারকে এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। একজন মুসলিমের ভালোবাসা হওয়া উচিত তার রবের প্রতি, যে ভালোবাসায় কোনো ধোঁকা নেই।’

ভ্যালেনটাইন্স ডে নিয়ে জান্নাতুল ইসলাম রুপা’র (শিক্ষার্থী,জিটিসি,বাংলা) মন্তব্য হলো,  প্রত্যেক মুমিনের জন্য প্রতিটি মহূর্তই ভালোবাসা। তাই এর জন্য দিনক্ষণ টেনে আনার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া এ দিবসটি আামাদের সংস্কৃতির বাইরে। কল্যানকর কিছু আজও দেখতে পায়নি দিবসটিতে। যা দেখেছি। শুনেছি। সবই নোংরামিতে ভরপুর।

তিনি মনে করেন, ‘অতি শিঘ্রই এ নোংরামি বন্ধ না হলে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংসের দিন খুব সন্নিকটে। পার্ক গুলোতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আবাসিক হোটেলের রমরমা ব্যবসারও একটা বিহিত করা উচিত। অপসংস্কৃতি নির্মূল করে, নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মসহ সকলকে এ দিবসটি থেকে দূরে রাখা উচিত।’

মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী তানজুমা’র মন্তব্য হলো, ‘ইসলাম এমন বেহায়াপনায় ভরপুর দিবস পালনকে কখনোই সমর্থণ করে না। আমাদের সমাজ ভালোবাসা দিবসের নামে বেহায়াপনা চর্চা করছে। যে ভালোবাসা দিবসের কারণে তরুণ প্রজন্ম আজ পাপের সাগরে লিপ্ত; সে ভালোবাসা দিবস থেকে অদূর ভবিষ্যতে ও কোনো উপকার আশা করা যায় না। পারিবারিক মেলবন্ধন, সুস্থ সংস্কৃতি, ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত হালাল ভালোবাসা রপ্ত করা যায়। ভালোবাসাসা এ দিবসটি পালন মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের সকল ভালোবাসা হবে মহান রবকে ঘিরে।’

মানারাত ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আসমাউল মুত্তাকিন প্রচলিত ভ্যালেন্টাইন্স ডে বিষয়ে বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসটি কিন্তু সবাই পালন করে না। তরুণ প্রজন্মের বিরাট একটি অংশকে আমরা এখানে দেখি। যারা অপসংস্কৃতির কবলে পড়ে দিবসটিকে নিজের করে নিয়েছে। অপসংস্কৃতি চর্চা করছে প্রতিনিয়ত। ভালোবাসা দিবসটিকে ঘিরে বেড়ে যাচ্ছে অশ্লীললতা। আমাদের জানা থাকা উচিৎ ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। তাছাড়া আমাদের ভালোবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন পড়ে না। আমরা বাঙালি জাতি। ভালোবাসা আমাদের হৃদয়ে  মস্তিষ্কে, শরীরের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দিবসটির নাম দিয়ে বেহায়া পনা বন্ধ করে জাতিকে রক্ষা করা উচিত। প্রশাসন, সমাজ, রাষ্ট্র সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ অশ্লীলতাকে রুখে দিতে হবে।’

আসলে দিনশেষে এ ভালোবাসা দিবসের কোনো ভিত্তি নেই। অপ্রয়োজনীয়,অপসংস্কৃতি চর্চা,আধুনিকতার নামে মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ। রবের দিকে রুজু হয়ে থাকায় মুমিনের প্রকৃত ভালোবাসা। মনের কোণে চরম শান্তি পাওয়া যায় স্রষ্টা এবং সৃষ্টির ভালোবাসার মধ্য দিয়ে।সবকিছু কে ছাপিয়ে জিতে যায় রবের ভালোবাসা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ