যুবায়ের বিন আখতারুজ্জামান।।
আত্মহত্যার রোগটা ইদানীং মহামারী আকার ধারণ করেছে। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা হয়তো অনেক কিছু দেখাবেন। নানা রিসার্চ পেপার উপস্থাপন হতে পারে৷ তবে আমি এর কারণ হিসেবে বস্তুবাদী দুনিয়াকেই দায়ী করছি। আত্মিক প্রশান্তির অভাব বা বস্তুবাদী দুনিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে এগুতে না পেরে নিজের মুক্তির জন্য অধিকাংশ সময় আত্মহত্যা বেছে নিচ্ছে মানুষ। প্রেম-ভালোবাসায় অকৃতকার্য হয়েও এই পথ অবলম্বন করে থাকে অনেকে।
আদতে বস্তুবাদী দুনিয়া মানুষকে নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রেখেছে। এটা বুঝতে হলে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে। সুরা তাকাসুরের প্রথম দুই আয়াত নিয়ে একটু ভাবলেই এর বাস্তবতা হারে হারে টের পাওয়া যায়। এসব কথা বস্তুবাদের যান্ত্রিক মানুষকে বোঝানোটা ঢেড় মুশকিল।
এখনকার বড় সমস্যা হচ্ছে লালসা। অবশ্য লালসাটা দুনিয়ার একটা ট্রেন্ড। লালসা বা টাকা পয়সা না থাকলে এই দুনিয়ায় মূল্য নেই। এর কারণ হলো যে মানদণ্ডে মানুষকে মূল্যায়ন করা হয় সেটা বস্তুবাদ। সেজন্যই তো অশিক্ষিত মানুষগুলো শুধু সম্পদের বলে জনগণের প্রতিনিধি হয়ে যায়। যেহেতু এই সময় সম্পদই মূল্যায়নের চাবিকাঠি তাই নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, ইসলাম কি তাহলে দুনিয়া ত্যাগ করে সন্যাসী হতে বলে?! উত্তর হলো, না।
ইসলাম বস্তুবাদ ও ভাববাদের মধ্যে সঠিক সমন্বয় করে। সেটা সুরা জুমুআ'র দশ নাম্বার আয়াতে লক্ষ্য করলেই দেখা যায়। সফলকাম হওয়ার আল্লাহ তাআলা সালাতের পর জমীনে ছড়িয়ে পড়তে আদেশ দিয়েছেন এবং তাঁরই অনুগ্রহ তালাশ করতে বলেছেন। অর্থাৎ, সফলকাম হওয়ার শর্ত স্রেফ সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আল্লাহর অনুগ্রহই মুখ্য বিষয়। এখানে বস্তুও ঠিক থাকছে আবার আধ্যাত্মিকতাও৷
ইসলামের জীবনব্যবস্থাটা পুরোটাই ভ্রাতৃত্ববোধের উপর ভিত্তি করে। মনে রাখা উচিত, এই ভ্রাতৃত্ববোধটা ইসলামের সংজ্ঞায়; পশ্চিমাদের সংজ্ঞায় ইসলামী ভ্রাতৃত্ব তালাশ করলে নিরাশ হবেন। এজন্য আপনি যখন হালাল প্রাচুর্যের মালিক হবেন, তখন আপনার সম্পদের কিছু অংশ ঐশ্বরিক বিধান মোতাবেক অসচ্ছল ব্যক্তিদের অধিকার হয়ে যাবে। আবার যদি অবৈধপন্থায় সম্পদ উপার্জন করেন তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে আপনি শাস্তিযোগ্য অপরাধী হবেন।
অন্যদিকে পুঁজিবাদী বস্তুর দুনিয়ায় আপনার সম্পদই মুখ্য বিষয়। কোন পন্থায় কামাই করলেন সেটা দেখার বিষয় নয়। যদিও রাষ্ট্রের কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম আছে; কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যারা নিয়ম বানান তারাই আগে ভাঙেন। যেহেতু অধিক সম্পদই আপনার সফলতার মূল চাবিকাঠি তাই আপনাকে যেকোনো মূল্যে আরেকজন থেকে বেশি সম্পদশালী হতে হবে। তখন শুরু হয় পুঁজিবাদের নীতি অনুসরণ করে মানুষকে নিঃস্ব করা।
আত্মহত্যার একটি কারণ হলো অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ ও দুশ্চিন্তা। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা প্রতিনিয়ত এই দুশ্চিন্তায় ফেলছে মানুষকে। একমাত্র ইসলামী জীবনব্যবস্থা ভ্রাতৃপ্রেমের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই সংকট থেকে মানবজাতিকে উত্তোলন করতে পারে।
এনটি