ইউসুফ লাবিদ।।
মানবজীবনে পোশাক একটি অপরিহার্য বিষয়। ইসলামেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। পোশাক লজ্জা নিবারণের উপকরণ। এছাড়াও পোশাক মানুষের সাজ-সজ্জা বা সৌন্দর্য বর্ধনের অন্যতম মাধ্যৗম। এর মাধ্যমে আর্থিক মুনাফাও লাভ করে অনেকে।
ইসলাম নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা পোশাকের বিধান দিয়েছে। দিয়েছে পর্দার হুকুম।
মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালার দেওয়া বিধান মেনে চলে, তখন সে তার প্রভূর নৈকট্য অর্জনের সাথে সাথে লাভ করে পার্থিব নানাবিধ কল্যাণ।
আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ আছে যারা পর্দা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখে না। অনেক পুরুষ মনে করে পর্দা শুধু নারীর জন্য, আর নারীরা মনে করে পর্দা তাকে পিছিয়ে দিচ্ছে অথবা পর্দা করার যৌক্তিকতা তারা খুঁজে পায় না। অথচ পর্দা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য অবশ্য পালনীয় একটি বিধান।
যেমনটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা নুরে ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চযই তারা যা করে, আল্লাহ তা অবহিত আছেন। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান- তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশে দিয়ে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্তবাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের ব্যতীত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। ’ –সূরা নুর: ৩০-৩১
ইসলাম নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা পোশাকের বিধান দিয়েছে
এ আয়াতের শুরুতে মুমিন পুরুষের উদ্দেশে বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত কিংবা তাকানোই হচ্ছে- যৌন প্রবৃত্তির প্রারম্ভিক কারণ যার শেষ পরিণতি নানা রকম পাপ ও ফেতনাসহ ব্যভিচার পর্যন্ত গড়ায়।
একই সূরার ২৭ নম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, অনুমতি ব্যতীত কারও ঘরে প্রবেশ যেন না করা হয় (যদিও তা প্রয়োজনে হোক)।
হাদিসে প্রয়োজনে পর্দার আড়ালে থেকে কোনো জিনিস আদান-প্রদান, শিক্ষা গ্রহনের মতো কাজগুলো করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। তেমনিভাবে সূরা নুর, সূরা আহজাবে পূর্ণভাবে বলা হয়েছে, নারীদের পর্দা সম্পর্কে। হাদিসে যা আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কোরআন হাদিসে পর্দা বিষয়ে এমন হুকুম-আহকাম সত্ত্বেও অনেক মুসলিম মা, বোনেরা পর্দা করেন না। উল্টো অনেক সময় তারা পর্দা অপছন্দ করেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বেপর্দার কারণে অনেকের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। এছাড়া পারিবারিক সমস্যা এবং সামাজিক ক্ষতি তো রয়েছেই।
অনেকে আবার মাথায় ওড়না জড়িয়ে হিজাব পরিধান করেন বটে, কিন্তু তারা উপলব্ধিই করেন না- মাথা ঢেকে হিজাব করলেই পর্দা করা হয় না। পর্দার জন্য কিছু শর্ত আছে। যেমন, কাপড় পাতলা না হওয়া (মোটা হওয়া), টাইট না হওয়া (ঢিলাঢালা হওয়া), শরীরের কোনো অংশ প্রকাশ না হয়ে যাওয়া (সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা), পোশাক চোখে পড়ার মতো সৌন্দর্যমন্ডিত না হওয়া (কারণ পর্দার উদ্দেশ্যই হলো নিজের সৌন্দর্যকে গায়রে মাহরাম এবং সব রকম ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখা)।
পর্দার আলোচনায় আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, সমাজে এমন অনেক পর্দানশীল পরিবার আছে, যারা কিছু মানুষের সঙ্গে পর্দা করার প্রয়োজন মনে করে না। যেমন- ধর্মবাপ, ধর্মভাই, উকিল বাপ, মুখডাকা বাপ-ভাই বা মামা-চাচা, শিক্ষক, পীর প্রমুখ। অথচ তারা মাহরাম নন।
তেমনিভাবে দুলাভাই, খালু, ভাসুর, দেবর ও তাদের ছেলে। ননদের স্বামী ও তার ছেলে। এ ছাড়া চাচাত, মামাত ও খালাত ভাইদের সঙ্গে পর্দা করতে হয়। এক কথায়, যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ, তারা সবাই গায়রে মাহরাম। তাই তাদের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ নয়।
পর্দাহীনতার কারণে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পরে অনেকে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের বিশ্বাস উঠে যায়। পরিবারে অবিশ্বাস ও অশান্তি নেমে আসে।
অন্যদিকে বিদেশি টিভি সিরিয়ালগুলোর বদৌলতে অপসংস্কৃতির চর্চা আরও ব্যাপক হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে সরে আসছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় হলো- বেপর্দার কারণে কবিরা গোনাহ হয়। দুনিয়ার জীবনে নানাবিধ অশান্তি পোহাতে হয়। আর পরকালীন কঠিন আজাবতো রয়েছেই।
অথচ পর্দা এবং ইসলামের অনুশাসন মেনে আমরা খুব সহজে দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের সঙ্গে সমাজের চিত্রটা সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ করতে পারি।
এনটি