আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ক্ষমতা দখলের পর সরকার গঠন করতে পারলেও একের পর এক সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তালেবানকে। যদিও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি এই সরকারের। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা তালেবান সরকার দেশ চালানো নিয়ে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফএফআরএএস)।
গত বছরের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পরপরই বিশ্লেষকরা জানিয়েছিলেন- দারিদ্র, খাবার সংকট, বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নতা, আইএস-এর মতো গোষ্ঠীগুলোর হামলার হুমকি এবং গভীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত একটা দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তালেবানের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তালেবান এখন সেই পরিস্থিতিরই মোকাবিলা করছে।
টোলো নিউজের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, দুর্দশাগ্রস্ত আফগান জনগণকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নানা প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। তবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক (ইউএনএইচসিআর) সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপ্প গ্রান্ডি বলেছেন, তালেবান যদি তাদের আর্থিক সংস্থান বন্ধ করতে না চায়, তবে অবশ্যই কিছু প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।
গ্রান্ডি তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সম্ভবত তালেবানকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন যে, দেশ চালানোর ক্ষেত্রে তাদের নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতিতে সংস্কার আনা অপরিহার্য।
তালেবানের সমালোচনা করায় কাবুল ইউনিভার্সিটির খ্যাতিমান অধ্যাপককে গ্রেপ্তার, অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত নারীর ওপর গুলি চালানো, শরিয়া আইন মেনে চুল না রাখায় প্রকাশ্যে সেটা কেটে দেয়া, শপিংমলের ম্যানিকুইনের ‘শিরচ্ছেদের’ ঘটনার কারণে নতুন বছর তালেবানের জন্য কোনো আশা বয়ে আনতে পারেনি। এমনকি দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তনও আসেনি দেশটিতে।
এএনআই গত ১০ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, তালেবানকে অবশ্যই নারী ও মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে এবং সরকারে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
প্রাসঙ্গিকভাবে, গ্রান্ডি ওয়াশিংটন পোস্টকেও বলেছিলেন, এসব বিষয় নিয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থার দেশটির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া জরুরি। যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আফগানিস্তান কার্যোপযোগী।
গ্রান্ডির বরাত দিয়ে টোলো নিউজ জানিয়েছে, তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমস্ত সিস্টেমই স্বাভাবিকভাবে অস্থায়ী হবে। কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে, আফগানিস্তান টেকসই? আর টেকসই একটি রাষ্ট্র তার জনগণকে সহায়তা করতে পারে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও তালেবানের মধ্যে আলোচনার করেই এটি অর্জিত হবে।
গ্রান্ডি যখন কাবুলে ছিলেন তখনও তিনি তালেবানকে একই বার্তা দিয়েছেন। তখনও তিনি বলেছিলেন, যদি তালেবান চায় যে, আর্থিক সংস্থান বন্ধ হয়ে না যাক, যদি তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সহায়তা চায়, তবে ‘অবশ্যই তাদের নেতৃত্বের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে’।
২০২১ সালের আগস্টের মাঝামাঝি তালেবান যখন আশরাফ ঘানি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করে এবং ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর তা বাজেভাবে আঘাত করে এবং আফগানিস্তানের মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। নারী ও শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশটির কুন্দুজ প্রদেশের স্কুলগুলো জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টোলো নিউজ বলছে, কুন্দুজ প্রদেশে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে, কারণ তাদের শ্রেণিকক্ষগুলো আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও তালেবানের মধ্যকার সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে।
তালেবান যে তাদের আগের চেহারায় ফিরে গেছে, সম্প্রতি কাবুল ইউনিভার্সিটির ল অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের খ্যাতিমান অধ্যাপক ফয়জুল্লাহ জালালকে সমালোচনার জন্য আটকের ঘটনা তারই প্রমাণ। সমালোচনার মুখে অবশ্য শেষ পর্যন্ত গত ১১ জানুয়ারি তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়ে তালেবান।
২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি দ্য কুইন্টে ফ্রান্সিসকো মারিনো লিখেছেন, এত বিতর্কের পর পাকিস্তান আফগানিস্তানের আধা-সরকারি মুখপাত্রের মতো আচরণ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তালেবানকে আরেকটি সুযোগ দেওয়ার কথা বলছে তারা।
-এটি