শহিদুল ইসলাম কবির।।
দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কথা বলতে গেলে একবাক্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কথা আগে বলতে হবে। দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। অর্থনীতিতে অক্সিজেনের মতো ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা।
পরবাসে গতর খেটে লাল-সবুজের পতাকা সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জোগান দিয়ে আসছেন প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে আসা প্রবাসীরা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে গড়ে ওঠা স্তম্ভে মজবুত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত।
করোনা মহামারির চলমান সংকটের মধ্যেও প্রবাসীদের আয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা সত্যিকার অর্থে অবিশ্বাস্য। প্রতিনিয়ত এ ধারা অব্যাহত রাখাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।
এই প্রবাসীরা দেশে-বিদেশে হয়রানী ও দুর্ব্যবহারের সম্মূখীন হচ্ছেন। দেশের অফিস, বিমানবন্দর, প্রবাসে বাংলাদেশের দূতাবাসে প্রতিনিয়ত তারা মানুষিক হয়রানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্রবাসীদের নূন্যতম সম্মান দেয়ার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন আগ্রহ আছে বলে দেখছি না।
দেশের বাইরে পাসপোর্ট নবায়ন অথবা পাসপোর্ট করাসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রবাসীদের তিক্ত অভিজ্ঞতা সিংহভাগ।
বাংলাদেশের বিমানবন্দর আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ও প্রবাসীরা হয়রানির মুখোমুখি হন।
১৬ জানুয়ারী' একজন প্রবাসীকে নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের যে দুরস্থা চোখে পড়েছে তা হলো- প্রবাসীরা সৌদি কর্মস্থলে যেতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানে যাবার জন্য কোন অভ্যর্থনা নেই। নেই প্রবাসীদেরকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা। শুধু বাঁশি ও লাঠি হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শাসক কিছু লোকের তৎপরতা দেখা যায়।
দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যারা পরিবারের মায়া ত্যাগ করে দেশের বাইরে যাচ্ছেন তাদের সাথে দরদী মন দিয়ে কথা বলে সহযোগিতা করার কেউ নেই। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীদেরকে হয়রানির স্বীকার হতে হয়।
ইমিগ্রেশনের লাইন থেকে প্রবাসে গমনেচ্ছুদের অসম্মান করে বের করে দেয়া হয়েছে; বহিরাগমনের ২ নম্বর গেট থেকে বেরিয়ে কয়েকজন লোক কষ্টের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এসময় জানা যায় তারা টুরিষ্ট ভিসা নিয়ে দুবাই যেতে বোর্ডিং শেষে যখন ইমিগ্রেশন করতে লাইনে দাঁড়িয়েছে তখন সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ তাদের কয়েকজনের পাসপোর্ট দেখতে নিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যায় বলে জানায়। সেখানে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা তাদের প্রত্যেকের নাম মিলিয়ে দেখে অন্য এক কর্মকর্তা পাসপোর্ট সহ দুবাইগামী যাত্রীদেরকে বহির্গমন গেইটে নিয়ে যার যার পাসপোর্ট তার হাতে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধ ঐ যাত্রী জানান।
প্রশ্ন হচ্ছে- দুবাইগামী ঐ যাত্রী প্রতারকের পাল্লায় পড়েছেন তা নিশ্চয়ই কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছেন। এ অবস্থায় কর্মকর্তাদের উচিত ছিলো নিরীহ দুবাইগামী যাত্রীদেরকে বুঝিয়ে বলা এবং যে দালালরা এ কাজ করেছে তাদের সাথে কথা বলে কোন ব্যবস্থা নেয়া।
দুঃখজনক ঘটনা হলো আমাদের রাষ্ট্রের সেবকরা প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগনের জন্য সে কাজটি করতে পারেননি। আমরা যখন বিজয় ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি তখনো জনগনের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমিয়ে সেবা বৃদ্ধি হয়নি। একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বলতে হচ্ছে সব আমাদের জনগণের দুর্ভাগ্য।
এ অবস্থায় রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমাতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি।
এনটি