মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর ভোলায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও স্মরণসভা চরমোনাইর বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিল বুধবার, চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান আসিফ মাহমুদের অসহায় শীতার্তের পাশে মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের তিন জেলায় শিক্ষক নিচ্ছে ‘আলোকিত মক্তব’ বৃদ্ধার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানী গওহরডাঙ্গা মাদরাসার ৮৯তম মাহফিল শুরু আগামীকাল

বেনারসে গঙ্গার ঘাটে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের তীর্থ-শহর বেনারসের গঙ্গার ঘাটে মুসলিমরা আসতে পারবে না, গত সপ্তাহে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এই ধরনের পোস্টার সাঁটার পর পুলিশ অবশেষে পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।

বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো গোষ্ঠীগুলো দাবি করছে, বেনারসের গঙ্গার ঘাট হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র স্থান ও সেখানে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।

তবে প্রকাশ্যে এই মর্মে পোস্টার সাঁটানো ও বিবৃতি দেওয়ার পরও উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রথমে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।

পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে মামলা রুজু করা হয়েছে, তবে অভিযুক্তরা কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

বস্তুত পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহর বেনারস বা কাশীতে হিন্দু ও মুসলিমরা পাশাপাশি বসবাস করছেন যুগ যুগ ধরে।

এই শহরেই গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে হিন্দুদের কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও মুসলিমদের জ্ঞানবাপী মসজিদ।

গত আট বছর ধরে বেনারস আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংসদীয় কেন্দ্রও বটে - যার রাজনৈতিক স্লোগান হল 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ', অর্থাৎ সব ধর্মের লোককে সঙ্গে নিয়ে চলা ।

অথচ সেই কাশীর গঙ্গার ঘাটেই গত সপ্তাহে বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একদল নেতা-কর্মী পোস্টার সাঁটতে থাকে, 'গঙ্গার ঘাটে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ' - মিডিয়ার সামনে তারা ইন্টারভিউও দেন।

বজরং দলের বেনারস শাখার সচিব রাজন গুপ্তা বলেন, "মাফ করবেন এগুলো নিছক পোস্টার নয় - হুঁশিয়ারি। এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা যারা গঙ্গার ঘাটকে পিকনিক স্পট মনে করেন।"

"আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, যারা সনাতন ধর্মের অনুসারী নন তারা গঙ্গার ঘাট থেকে দূরে থাকুন - নইলে বজরং দলই আপনাদের দূর করার ব্যবস্থা করবে।"

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা নিখিল ত্রিপাঠী রুদ্র দাবি করেন কাশীতে গঙ্গার ঘাট সবার জন্য - এটা আসলে একটা ভুল ধারণা।

তিনি বলেন, "এই গঙ্গার ঘাট হিন্দু সংস্কৃতির পীঠস্থান এবং একান্তভাবেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। মুসলিম বা খ্রিষ্টানদের এখানে কোনও জায়গা নেই, কারণ এটা হিন্দুদের সম্পত্তি।"

"এখানে শুধু হিন্দুরাই স্বাগত, বাকিরা কেউ যেন আসার চেষ্টাও না করেন", হুমকি দেন তিনি।

এই ধরনের হেইট স্পিচ বা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের পরও বেনারসের পুলিশ পুরোপুরি হাত গুটিয়ে ছিল - অন্তত পাঁচ-ছদিন ধরে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।

অবশেষে সোমবার পাঁচজন অভিযুক্তর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তবে এখনও কেউ গ্রেপ্তার হননি।

ইসলামিক স্কলার শোয়েব জামোই ছোটবেলা থেকে নিয়মিত বেনারসে যান, তিনি বিবিসিকে বলছিলেন এই গোটা ঘটনায় শহরের মুসলিম সমাজ ভীষণভাবে ব্যথিত।

তাঁর কথায়, "কাশীর মতো এত সুন্দর একটা শহর ... সেই পঞ্চদশ শতাব্দীতে কবীর এখানে গঙ্গা-যমুনা তেহজিবের সূচনা করেছিলেন।"

"এটা সেই কবীরের শহর, এটা সেই শহর যেখানকার ঘাটে উস্তাদ বিসমিল্লা খান সানাই বাজাতেন। আমি কতবার ওখান গঙ্গায় ওজু করে ঘাটে নামাজ পড়েছি, কোনও হিন্দু ভাইয়ের কখনো সমস্যা হয়নি।"

"আসলে ওখানে স্থানীয় হিন্দু-মুসলিমরা যে সম্প্রীতির আবহে বাস করেন কিছু লোক সেটাকে হাইজ্যাক করতে চাইছে", বলছিলেন মি জামোই।

তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও পুলিশি পদক্ষেপের পর ঘাটের হিন্দু দাবিদাররা কিছুটা সুর নরম করেছেন।

বেনারসের প্রভাবশালী হিন্দু সন্ত মোহন্ত নিত্যানন্দ এদিন যেমন বলেছেন, "পর্যটকরা ঘাটে এলে অসুবিধার কিছু নেই। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না-করে তারা যদি ঘাট দর্শন করেন তাহলে ঠিক আছে।"

"এটাকে আর পাঁচটা ট্যুরিস্ট স্পটের দৃষ্টিতে না-দেখলেই হল, হিন্দুদের ভাবনাকে মর্যাদা দিয়েই এখানে আসুন।"

বেনারসের গঙ্গার ঘাটে মুসলিমদের আসা হয়তো এখনই বন্ধ হচ্ছে না, কিন্তু যেভাবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এমন একটা দাবি জানাতে পারছে - সেটাই আসলে আজকের ভারতে উগ্র হিন্দুত্বের প্রকাশ্য শক্তি প্রদর্শনের ছবিটা তুলে ধরছে বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।

সূত্র: বিবিসি।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ