শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ দরকার’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মনযূরুল হক।। মসজিদের ইমাম এবং মাদরাসা ছাত্রদের উচিত মাঝেমধ্যে রাষ্ট্রের কল্যাণকর কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া। তাতে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে এবং দেশপ্রেম হৃদয়ে ঠাঁই করে নেবে। লাভ কী? নিজ দেশেও উদ্বাস্তু থাকার মনোভাব থেকে যে-হীনম্মন্যতা আলগোছে তাদের গ্রাস করে নিয়েছে, তা থেকে মুক্তি মিলবে।

নিরাপদ সড়কে নির্মাণে খতিব সাহেবান টু-দি পয়েন্ট কথা বলবেন—ভাববাদী হবেন না। ছাত্ররা হ্যান্ডমাইক নিয়ে ক্যাম্পেইনে নামতে পারেন।
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা, ফুটপাথ ধরে হাঁটা, হাঁটার পথটি দখলমুক্ত রাখা, নির্দিষ্ট পার্কিং স্পট ছাড়া পার্কিং না করা, পথে স্পিড লিমিট মাথায় রাখা—এগুলো ধরে ধরে বলুন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালনা এবং লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভিং করা যে একই সঙ্গে অনৈতিক এবং গুনার কাজ, সেটাতে জোর দিন।

রাস্তার আদব বলতে গিয়ে বলুন—রাস্তা পারাপারের নিরাপদ পদ্ধতি কী। প্রয়োজনে এঁকে দেখান। গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে বাঁম পা না-বাড়ালে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারেন, সড়কের মধ্যিখানে গাড়ি দাঁড়ালে দৌড় দিয়ে উঠতে না-যাওয়া, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তত্ত্বকথা ঝাড়ার সময় চারিদিকে জ্যাম লেগেছে কি না লক্ষ রাখা, মুজাহিদ মুজাহিদ ভাব নিয়ে সড়কের আইলেনার (বিভাজক) লাফ দিয়ে পার না-হওয়া—এভাবে বললে কি রাস্তার আদব বলা হবে না?

এ-বিষয়ে সচেতনতামূলক ভিডিও আছে, বায়োস্কোপের সাহায্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যায়। এসব শিষ্টাচার জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে জনসেবার তৃপ্তিতে বুক ভরে উঠবে।

রাজপথে কাঁটাতারের ব্যারিকেড ব্যবহার করে যারা প্রায়ই অবরোধ বাস্তবায়ন করেন, তারা যেন ঝাড়ু হাতেও নামেন—পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে। খেদমতকামী উস্তাযগণ শুধু নিজের পায়ে নয়, জনতার সেবায়ও ছাত্রদের ঠেলে দিন। বিমানবন্দর টু পল্টন মানববন্ধনের উছিলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে পুড়তে থাকা কর্মীরা কি ছড়ানো-ছিটানো কাগজ কুড়িয়ে টোকাইদের ব্যাগ ভরে দেওয়াতেও সক্ষমতা রাখেন না?

প্রসঙ্গক্রমে বলি—স্কুল ছাত্র নিহত হয়েছে বলে আপনার কিছু হয়নি, এই ভাবনায় বসে থাকা মূর্খের কাজ। এবং সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব তারা পালন করে না কেন প্রশ্ন তুলে তোরণবদ্ধ থাকাও দায়মুক্ত থাকার অজুহাতমাত্র।যেটা আপনার কর্তব্য বলে আপনি নির্ধারণ করেছেন, তা-ও আপনি ঠিকঠাক করছেন? তো? চালকদের মধ্যে নৈতিকতা বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবুন।

সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে না গিয়েও রাষ্ট্রীয় অনেক কাজে জড়ানো যায়। যেমন—ইলিশ নিধন নিষিদ্ধ সময়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জেলে ও ক্রেতাদের ইলিশ কেনাবেচায় নিরুৎসাহিত করা, শিশুদের হাতে স্মার্টফোন না দেওয়া শীর্ষক প্রচরাণা, যেখানে-সেখানে ময়লা না-ফেলা কিংবা যত্রতত্র মূত্রত্যাগ না করা ইত্যাদি। বহুক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও এসবে অভ্যস্ত না, কিংবা থোড়াই কেয়ার করি।

কিভাবে এই ক্যাম্পেইনে নামবেন—সেটা একটা বড় প্রশ্ন। মাদরাসায় স্কাউট প্রোগ্রাম চালু করা যায়। নেছারাবাদ কায়েদ হুজুরের মাদরাসা দেশের একমাত্র মাদরাসা, যেখানে বিএনসিসি (বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর) প্রোগ্রাম আছে। স্বীকৃতির গুণে কওমি-কর্তৃপক্ষের এতে যুক্ত হওয়ার পথ সহজ হয়ে গেছে। আগে বিভিন্ন মাদরাসায় শারীরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল, যা নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারীতে বন্ধ হয়ে গেছে—ওটা স্কাউটের মাধ্যমে লিগ্যালি নিয়ে আসা যায়। প্যারামেডিক বা প্যারালিগ্যাল কোর্সে ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন নাহু-সরফের প্রশিক্ষণের মতো। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ কর্মসূচীতে যোগ দিতে পারেন তারা। সিভিক এডুকেশন, ফেইক নিউজ যাচাই, সিটিজেন জার্নালিজমের মতো প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রশিক্ষণে তাদের সম্পৃক্ত করুন—জনসেবার বহু পথ তারা পেয়ে যাবেন।

বর্তমানে মসজিদ- মাদরাসার ভূমিকা যে লেজিটিমেশন ক্রাইসিসে (ন্যায্যতার সংকট) ভুগছে, তা এড়াতে বিরাট রাজনীতি করা লাগে না—যা লাগে, তা হলো, সত্যিকার অর্থে জনসেবা করার সদিচ্ছা।

লেখক: তরুণ আলেম, লেখক, অনুবাদক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ