সাখাওয়াত রাহাত:।। হজরত বেলাল রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। রাজকন্যার গর্ভজাত সন্তান হয়েও জন্মসূত্রে ক্রীতদাস। ইসলাম গ্ৰহণের অপরাধে(!) যাকে সহ্য করতে হয় অমানবিক নির্যাতন। মেরাজের রাতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে যার খড়মের শব্দ শুনেছেন। এটি তাঁর মাকবারা। এর অবস্থান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে।
বেলাল রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। নবিজির তিরোধানের পর তিনি খুব ভেঙে পড়েন।
প্রিয়তমকে দেখা ছাড়া মদিনায় অবস্থান করা তার জন্য ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। ফলে শামে চলে যান তিনি। সেখানে একরাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন— নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলছেন, বেলাল! কতদিন হয়ে গেল তুমি আমার সাথে দেখা করো না! হন্তদন্ত হয়ে তিনি ঘুম থেকে ওঠলেন এবং পরদিন সকালেই মদিনা অভিমূখে রওনা দিলেন।
তখন ছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাসনামল। তিনি বেলাল রাদিআল্লাহু আনহুকে দেখে খুব খুশি হলেন। তাঁকে আজান দেওয়ার অনুরোধ করলেন। বিদ্যুৎবেগে খবর ছড়িয়ে পড়লো শহরের অলিগলিতে। মদিনাবাসীর তনুমনে বয়ে যায় আনন্দের হিল্লোল।
বহুবছর পর তিনি যখন আজান শুরু করলেন, তখন পুরো মদিনা যেন কেঁপে ওঠলো। নবিযুগের চিরচেনা সেই আজানের সুর কানে আসতেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লো। হাবিবের স্মরণে ঢুকরে কাঁদতে লাগলো।
তিনি আজান শুরু করলেও শেষ করতে পারলেন না। আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছেই কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে পড়ে গেলেন। সংজ্ঞা হারালেন।
কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলো তার মানসপটে জীবন্ত হয়ে ওঠছিল। সাইয়্যেদুনা বেলাল রাদিআল্লাহু আনহু যখন অন্তিম শয়ানে, তখন তিনি বললেন— কী আনন্দের কথা! কী সুখের দিন এসেছে! আগামীকাল যে আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিদের সাথে সাক্ষাৎ করব।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর ভালোবাসার সাগর থেকে দুয়েক ফোঁটা দান করুন। রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়ারাদু আনহু।
-এটি