মুফতি নাজমুল হাসান।।
তারুণ্য একটি জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ। তারুণ্যের মনোবল, অম্য ইচ্ছাশক্তি ও সীমাহীন সাহসই পারে একটি জাতিকে পরিবর্তন করে দিতে। সভ্যতা ও ক্ষমতার পালাবদল হয় তারুণ্যের হাত ধরেই। তারুণ্যই হল যেকোন জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্নয়ণের মূল কারিগর। চেতনাদৃপ্ত তরুণরা যখন জেগে ওঠে তখন সকল প্রতিবন্ধকতার জাল ছিন্ন করে সফলতার শেষ সোফানে তারা আরহণ হয়েই থাকে। তরুণরাই পারে একটি জাতিকে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ উপহার দিতে।
ইসলাম তারুণ্যের শক্তি ও সাহসিকতার মূল্যায়ণ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারুণ্যের সময়েই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘হিলফুল ফুযূল’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নবুয়াত লাভের পর যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ছিলেন সে সময়ের তরুণ। হযরত আবু বকর রা., হযরত উমর রা. ও ইসলামের প্রথম মুআযযিন হযরত বিলাল রা. ও ছিলেন তরুণ নওজোয়ান।
খায়বার যুদ্ধে যখন হযরত আলী রা. কামূছ ূর্গের লৌহ কপাট এক হাতে নিয়ে যুদ্ধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, তখন তিনিও ছিলেন একজন টগবগে তরুণ। ইতিহাসে প্রশংসিত খালি বিন ওয়ালিদ তিনিও ছিলেন চেতনাদৃপ্ত তরুণ। স্পেন বিজয়ী সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ, সিন্ধু বিজয়ের মহানায়ক মুহাম্মদ বিন কাশেম, তারাও ছিলেন তরুণ।
হযরত ইবরাহীম আ. যখন মূর্তিপূঁজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পাষণ্ড নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, হযরত ইউসুফ আ. যখন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দি হয়েছিলেন, হযরত ইউনুস আ. যখন মাছের পেটে আবদ্ধ হয়েছিলেন, বিশ^নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন; তখন তারা সকলেই ছিলেন তারুণ্যে উদ্বিপ্ত নওজোয়ান।
আসহাবে কাহাফের কয়েকজন তরুণের জীবন্ত কাহিনী কি মনে আছে? যারা তাদের ঈমান হেফাজতের জন্য একটি গুহায় নিজেদের আবদ্ধ করেছিলেন, তারা সবাই ছিলেন একেকজন যুবক নওজোয়ান।
তাদের ছিল মনোবল ও আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তারে ইতিহাস কেয়ামত পর্যন্ত জারী রাখতে কুরআন শরীফে তাদের সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ তাদের প্রশংসা করে বলেন, ‘হে নবী! আপনার কাছে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) এর ইতিবৃত্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি, তারা ছিল কয়েকজন তরুণ। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি।’ - (সূরা কাহাফ: আয়াত ১৩)
ইতিহাস স্বাক্ষীÑ তাকওয়াবান যুবকদের দ্বারা পৃথিবীতে বহু উত্তম আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার পথভ্রষ্ট যুবকদের দ্বারা পৃথিবীর অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুত্তাকী যুবকদের নিয়ে বদর, অহুদ, খন্দক ও তাবুকসহ বহু যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছেন। চীন ও ফরাসী বিপ্লব, এদেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধেও যুবকদের রয়েছে স্মরণীয় ভূমিকা। সুতরাং বর্তমান এই ক্ষত-বিক্ষত সমাজকে সুস্থ করে গড়ে তুলতে হলে সময়ের তরুণদের বিকল্প নেই। তরুণরা অঙ্গিকার নিয়ে মাঠে নামলেই দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সফলতা অর্জন করা একেবারেই সহজ বিষয় হয়ে যাবে।
লেখক: তরুণ আলেম, লেখক ও গবেষক।
-এটি