মুহাম্মদ ইশতিয়াক সিদ্দিকী
হাটহাজারী প্রতিনিধি।।
দারুল উলূম হাটহাজারী। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়াটি এখন দেশ-বিদেশর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এক বছরের ব্যবধানে আল্লামা আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুতে অনেকটা 'অপ্রস্তুত' হাটহাজারী মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
[caption id="" align="aligncenter" width="318"] এ বইটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার প্রকাশিত বইগুলো কিনতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]
এরই প্রেক্ষিতে আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. এর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পদে নিয়োগসহ একাধিক এজেন্ডা নিয়ে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শুরার বৈঠক ডাকা হয়েছে। শুরার গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকেই ঠিক হবে কে হবেন জামিয়ার মহাপরিচালক, শাইখুল হাদীস ও শিক্ষাপরিচালক।
[caption id="" align="aligncenter" width="330"] এ বইটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার প্রকাশিত বইগুলো কিনতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]
২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর জানাযার পর মজলিসে শুরার বৈঠকে হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালনা করতে 'মজলিসে এদারী' নামে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। যেখানে মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামীকে প্রধান করে আল্লামা শেখ আহমদ ও মাওলানা ইয়াহিয়াকে সদস্য করা হয়। গত এক বছর 'মজলিসে এদারী' জামিয়া পরিচালনা করে আসছিলেন।
এবারের শুরা বৈঠক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর মৃত্যুর পর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. কে ঘিরে তৈরি হয় নতুন সম্ভাবনা। কিন্তু এক বছর পার না হতেই তাঁর মৃত্যুতে গত ২৯ আগস্ট এক বৈঠকে হেফাজতের আমীর ঘোষণা করা হয় ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদরাসার পরিচালক আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে। ফলে হেফাজতের গত এক দশকের প্রভাব হারায় হাটহাজারী মাদরাসা।
এদিকে হাটহাজারী মাদরাসায় 'একক মুরুব্বি' না থাকায় শূন্য পদে নিয়োগ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শূন্য পদগুলোর পদপ্রার্থী একাধিক সিনিয়র শিক্ষক হওয়ায় এবারের শুরা বৈঠকটি হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
[caption id="" align="aligncenter" width="347"] এ বইটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার প্রকাশিত বইগুলো কিনতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]
কে কোন পদে আসছেন?
শুরা সদস্যদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু না জানালেও ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে, গত এক বছর ধরে চলে আসা মজলিসে এদারী ভেঙে দিয়ে একক মহাপরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে।
একক মহাপরিচালক কে হবেন তা জানতে যোগাযোগ করা হলে, কোন শুরা সদস্য মন্তব্য না করলেও অনেকের ইঙ্গিত মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামীর দিকে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, তিনি মজলিসে এদারীর তথা মাদরাসা পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের মুফতীয়ে আজম এবং হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ মুরুব্বী।
আর নায়েবে মুহতামিম (সহকারী পরিচালক) হিসেবে আল্লামা শেখ আহমদের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সহযোগী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তাকে ঘিরে রযেছে ভেতরে-বাইরে 'আপত্তি'। প্রভাবশালী কয়েকজন শুরা সদস্য ও ছাত্রদের একটি অংশ তাঁকে এ পদে চাচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে।
এরপরই আলোচনায় আছেন মাওলানা ইয়াহিয়া। তিনি ইতিপূর্বে তেমন পরিচিত ও প্রভাবশালী না থাকলেও মজলিসে এদারীর সদস্য হওয়ার পর থেকে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন বছরব্যাপী। বছরজুড়ে হাটহাজারীতে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ থাকায় একটি 'গ্রহণযোগ্য অবস্থান' তৈরি করে নিয়েছেন তিনি।
শাইখুল হাদীস ও শিক্ষাপরিচালক
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইন্তেকালে শূন্য হয়েছে হাটহাজারী মাদরাসা শাইখুল হাদীস ও শিক্ষাপরিচালকের পদ। এ বিষয়ে একাধিক শুরা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন মন্তব্য করেননি। তবে এ পদের যথেষ্ট যোগ্য হিসেবে আলোচনায় আছেন আল্লামা শেখ আহমদ। কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছে, তাঁর স্মরণশক্তি ও পাঠদান পদ্ধতির খুব সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি হাটহাজারী মাদরাসার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় হাদিসের শিক্ষক। নব্বইয়ের দশকে হাটহাজারী মাদরাসার হাদীস ও শিক্ষাপরিচালনার কাজ দক্ষতার সঙ্গে আঞ্জাম দিয়েছিলেন তিনি।
[caption id="" align="aligncenter" width="358"] এ বইটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার প্রকাশিত বইগুলো কিনতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]
আশি ও নব্বইয়ের দশকের হাটহাজারী ফারেগীন যারা দেশের বিভিন্ন মাদরাসার শীর্ষ পদে আছেন সবাই উনার ছাত্র। এছাড়াও তিনি হাটহাজারীর বর্তমান দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষকদের শিক্ষক।
আসতে পারে ব্যাপক রদবদল
এসবের বাইরেরও ব্যাপক রদবদল আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাটহাজারী মাদরাসার অন্তত ছয়জন সিনিয়র শিক্ষকগণ সবাই সববয়সী ও প্রভাবশালী হওয়ায় সবাইকে 'খুশি' করতে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে শুরা কমিটি।
[caption id="" align="aligncenter" width="399"] এ বইটিসহ মাকতাবাতুত তাকওয়ার প্রকাশিত বইগুলো কিনতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]
মাদরাসা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শাইখুল হাদীস পদে ৩জনকে নিয়োগ দিতে পারে। শিক্ষাপরিচালনা বিভাগে আসতে পারে নতুন মুখ। এছাড়াও মাদরাসার দারুল একামা (আবাসিক হল পরিচালনা কমিটি)তে নতুন দায়িত্ব দেয়া হবে।
তবে কে হচ্ছেন হাটহাজারীর কাণ্ডারী তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শুরা কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত।
-এনটি