নাজমুল হুদা মাহী
' শমশির মস্তক ছুয়ে গেলো, রয়ে গেলো প্রাণ
মম স্রোতস্বীণী প্রবাহমান, চির অটুট অম্লান।-'
প্রবহমান এই স্রোত হচ্ছেন মহাকবি আমীর খসরু (রহঃ)। ভারতবর্ষের একজন কিংবদন্তী মনীষী। ইতিহাসে তিনি বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
জন্ম, পিতৃ পরিচয় ও শিক্ষাজীবন :
পুরো নাম আবুল হাসান ইয়ামিন উদ্দীম খসরু।
তাঁর প্রকৃত নাম হচ্ছে আবুল হাসান, তাঁর উপাধি হচ্ছে ইয়ামিন উদ্দীন।
তিনি ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে উত্তর প্রদেশের পাতিয়ালা এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল আমির সাইফ উদ-দিন মাহমুদ, একজন তুর্কি। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সুফি কবি। তিনি ফার্সি ও উর্দু দুই ভাষায় লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়ার আধ্যাত্মিক শিষ্য। তার মা ছিলেন এক রাজপুত কন্যা।
তিনি তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার কাছ থেকেই শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করেন।
তিনি যখন নবম বৎসরে পদার্পণ করেন তখন তাঁর সম্মানিত পিতা পরলোক গমন করেন।
তাঁর পিতৃ বিয়োগের পর মাতৃ সম্পর্কীয় এক দূরাত্মীয়া তাঁর লেখাপড়া, দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
'ইমাদুল মূলুক' যিনি এক অনুকরণীয় ব্যাক্তিত্ব ছিলেন এবং যার বয়স একশত তেইশ বৎসর, তিনি আবার সম্পর্কের দিক থেকে নানা ছিলেন, তিনিই আমীর খসরু কে দিল্লীতে যাবতীয় শিক্ষা-দীক্ষার বন্দোবস্ত করেন।
তিনি প্রথম আট বছর বয়েসে প্রথম কবিতা লেখেন। ১২৭১ তার দিদা ১১৩ বছর বয়েসে মারা যাবার পর তিনি দুঃখিত হয়ে পড়েন। ১২৯৮ সালে তার মা ও ভাই মারা যান। এই ধাক্কাটি তার উপর বিভীষিকার মতো আছড়ে পড়ে। বলা হয় যে সঙ্গীত তাকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনতে সাহায্য করে। তিনি সুলতান বলবানের সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। অত্যন্ত সম্মানিত রয়েল কোর্টের বিধানসভার আশ্রয়ে তিনি তার কবিতার দিকে মনোযোগ করেন। বলবানের পুত্র বুঘ্র খান তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে অসংখ্য সোনার কয়েন দিয়ে পুরস্কৃত করেন। তাকে তিনি বাংলার শাসনকর্তা বানান কিন্তু তিনি দিল্লি তে ফিরে আসেন।
জালালুদ্দিন খিলজি ক্ষমতায় আসার পর তাকে "আমারত" উপাধিতে সম্মানিত করেন।
চারিত্রিক গুণাবলী :
তিনি শুধু একজন সুফি ই ছিলেন না, বরং উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন আলেমে দ্বীন, অবিসংবাদিত লেখক, কৌতুককারী ব্যাক্তিত্ব এবং আধ্যাত্মিক সুলতান ছিলেন।
তিনি একজন অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন খিলাফতপ্রাপ্ত সূফীয়ায়ে কেরামগণের দলভুক্ত একজন দরবেশ ছিলেন। তিনি শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের নামাজে একাধারে 'সাত পারা' কোরআন তিলাওয়াত করতেন।
অত্যন্ত বিনয়াবনত হয়ে অঝোরে কাঁদতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি চাকুরী করেও একাধারে চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত গোটা বছর রোজা রেখেছিলেন। তিনি মাহবুবে ইলাহীর সাথে পায়ে হেটে হজ্জ আদায় করেছিলেন।
বাইয়াত ও খিলাফত লাভ :
যখন তাঁর বয়স আট বৎসর হয়েছিল তখন তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা তাঁকে নিয়ে হযরত মাহবুবে ইলাহী নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার (রহঃ) দরবারে হাজির হলেন।
তিনি ইচ্ছা করলেন, নিজের পীর নিজেই নির্বাচন করবেন। এ কথা বুঝতে পেরে হযরত আমীর খসরুর পিতা মাহবুবে ইলাহীর দরবারে ঢুকে পড়লেন কিন্তু আমীর খসরু (রহঃ) দরবারের বাহিরে বসে একটি কবিতা লিখছিলেন. যা নিম্নে দেওয়া হলো :
* অমন শাহী প্রাসাদ তোমার, কবুতর বসলে যেথা
বাজপাখি হয়
সম্বলহীন তোমার দরবারে গেলে নিমিষে ধনাঢ্য হয়। *
তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন মাহবুবে ইলাহী যদি প্রকৃতই কামিল পীর হয়ে থাকেন তাহলে আমার কবিতার নিশ্চই উত্তর দিবেন এবং আমাকে ডেকে নিবেন।
হযরত মাহবুবে ইলাহী (রহঃ) তাঁর এক খাদেমকে বললেন, বাইরে যে ছেলেটি বসে আছে তাঁর কাছে গিয়ে আমার কবিতাটি পাঠ করে শুনায়ে দাও।
কবিতাটি নিম্নরূপ :
* আসবে যে কেউ সহসা অভ্যন্তরে
নিরেট সোনার মানুষ হয়ে যাবে সে ফিরে,
সে যদিও হয় অজ্ঞ-অধম অবুঝ
এ পথে এলে পরে হবে চির সবুজ। *
তিনি যখন এ কবিতাটি শুনেন, তখন আর দেরি না করে হযরত মাহবুবে ইলাহী (রহঃ) দরবারে প্রবেশ করলেন এবং বাইয়াত গ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করলেন।
তাঁর অবদান ও অনবদ্য কিছু সৃষ্টি :
মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন হযরত আমির খসরু। তিনি শুধু সঙ্গীতজ্ঞই ছিলেন না, ছিলেন একাধারে কবি, গায়ক, সুফি, দার্শনিক ও যোদ্ধা। প্রধানত ফার্সি ও হিন্দি ভাষায় তিনি গান ও কবিতা লিখতেন।
তিনি ফার্সি, আরবি এবং তুর্কি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কে সমৃদ্ধ করে তোলেন।
আমির খসরুর সংগীতের একটি বিশেষ ভঙ্গিকে বলা হতো 'কাওল'। এটি ছিল দুই ভাষায় রচিত সংগীত, যেমন- ফার্সি ও হিন্দি। কাওল সংগীত গাওয়া হতো সুফি দরবেশদের মাহফিলে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। হযরত নিজামুদ্দিন আওলিয়ার দরবারে আমির খসরু সাধারণত কাওয়ালি গজল গাইতেন। এটি ছিল সহজ, বোধগম্য ও জনপ্রিয়। কাওয়ালি শব্দটি এসেছে আরবি 'কাওল' বা 'কাওলুন' শব্দ থেকে, যার অর্থ কথা, বাক্য। বহুবচনে শব্দটি হয় 'কাওয়ালি'।
এই কাওয়ালি সংগীত আমির খসরুর নিজের উদ্ভাবিত সংগীত ধারা। ফলে তাকে 'কাওয়ালির জনক' বলা হয়।
'খেয়াল' ভারতীয় উপমহাদেশে এখনও বেশ জনপ্রিয় ও পরিচিত সংগীতের একটি ধারা। খেয়ালের পূর্বে ভারতে পরিচিত সঙ্গীত ধারা ছিল 'ধ্রুপদ'। আমির খসরুর অন্যতম অবদান হলো, তিনি এই মুসলিম সঙ্গীত ধারাকে উপমহাদেশীয় সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছেন। তার হাত ধরেই 'খেয়াল' ধারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এছাড়াও আমির খসরু কর্তৃক উদ্ভাবিত অসংখ্য সঙ্গীত ধারা উচ্চাঙ্গ সংগীতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এখনও আমাদের মাঝে বিরাজমান।
আমির খসরু শুধুমাত্র সঙ্গীতের নতুন নতুন স্বর, সুর ও তালের আবিষ্কারক ছিলেন না- তিনি বহু যন্ত্রেরও আবিষ্কারক। সেতারা, তবলা, রতবাব, দোলক ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কারে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এর মধ্যে সেতারা ও তবলা তার নিজেরই আবিষ্কার বলে জানা যায়। বাকি বাদ্যযন্ত্রগুলো আরব ও পারস্য থেকে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে এসেছিলেন।
'তুহফাতুল ইনস' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, হযরত আমীর খসরু মাহমুদ (রহঃ) পাঁচ লাখের কম এবং চার লাখের অধিক ফার্সী ভাষায় বিভিন্ন কবিতা পাঠ করেছেন।
হযরত মাহবুবে ইলাহী (রহঃ) স্বয়ং হযরত আমীর খসরু মাহমুদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে নিচের কবিতাটি কলমবদ্ধ করেছিলেন :
'খসরুর উপমা গদ্যে-পদ্যে সত্যিই অনুপস্থিত
বাকশক্তিটুকুও কোথা পাবো খসরু ব্যতিত।
এতো স্বয়ং খসরু, কেউ সাহায্যকারী নয়
খসরুর ত্রাণকর্তা শুধু মাওলাই হয়।
'জওয়াহেরুল আনওয়ার' নামক গ্রন্থে দেখা যায় হযরত আমীর খসরু (রহঃ) এর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য একবার হযরত শায়খ সা'দী সিরাজী (রহঃ) সুদূর ভারত এসেছিলেন।
একবার হযরত আমীর খসরুর (রহঃ) সাথে হযরত খিজিরের (আঃ) সাক্ষাৎ ঘটে। তিনি হযরত খিজির (আঃ) কাছে দরখাস্ত পেশ করলেন, হযরতের মুখ নিসৃত একটিখানি লালা যেন তাঁকে খাওয়ায়ে দেন।
হযরত খিজির (আঃ) বিলে দিলেন, ঐই সৌভাগ্য হযরত শায়খ সা'দী সিরাজী (রহঃ) নিয়ে ফেলেছেন।
তিনি সোজা মাহবুবে ইলাহীকে (রহঃ) এ ঘটনা ব্যক্ত করলেন। হযরত মাহবুবে ইলাহী (রহঃ) নিজ মুখের লালা হযরত আমীর খসরুকে (রহঃ) খাওয়ায়ে দিলেন।
ঐই লালার বরকতে হযরত আমীর খসরুর (রহঃ) মুখের এমন বরকত লাভ হয়েছিল যে, তাঁর মুখের কোন দোয়াই আর বিফলে যেতনা। ঐই সৌভাগ্য কোন শিষ্যই লাভ করতে পারেনি।
তার লিখিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ওয়াসতুল হায়াত (১২৭৯), ঘুররাতুল কামাল (১২৯৪), খামসা-ই-খসরু (১২৯৮), সাকিনা, দুভাল রানি (১৩১৬), বাকিয়া নাকিয়া (১৩১৭), নুহ সিপার (১৩১৮), ইজাজ-ই-খসরু, আফজাল উল-ফাওয়াইদ (১৩১৯), তুঘলক নামা (১৩২০), নিহায়াত উল-কালাম (১৩২৫)
'রাহতুল মুহিব্বীন' এ গ্রন্থে তিনি হযরত মাহবুবে ইলাহীর (রহঃ) বিভিন্ন বাণী লিপিবদ্ধ করেছেন ইত্যাদি।
তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী :
• ১২৫৩-৫৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের বর্তমান পাতিয়ালা (বর্তমান পাঞ্জাব রাজ্যের একটি জেলার নাম ও জেলা শহর) নামক স্থানে আমির খসরু জন্মলাভ করেন। শৈশবে তাঁর নাম ছিল আবুল হোসেন।
• ১২৬৪ খ্রিষ্টাব্দের তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর মায়ের সাথে মাতুলালয়ে যান এবং সেখানে বিদ্যার্জন করেন। নানারকম ঘটনার পর ১২৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি বংশোদ্ভুত গিয়াসউদ্দীন বলবন দিল্লীর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। এর কিছুদিন পরে খসরু এই সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। অল্প বয়সে কবিতা রচনা করে তিনি শিক্ষিত সমাজে এবং রাজ দরবারে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।
• ১২৭১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'তুহফাতুস-সিঘ্র' রচনা করেন।
• ১২৭২ খ্রিষ্টাব্দে বলবনের ভ্রাতুষ্পুত্র মালিক চর্জ্জুর সাথে তিনি সভাকবি পদে অধিষ্ঠিত হন।
• ১২৭৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি বলবনের পুত্র বঘরা খাঁর সাথে কবিতা রচনায় বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠেন।
• ১২৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গদেশের শাসনকর্তা তুঘ্রাল খাঁর বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দীন অভিযান চালান। যুদ্ধে তুঘ্রাল ঘাঁ নিহত হলে, তিনি তাঁর পুত্র বঘরা খাঁকে বঙ্গদেশের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন।
• ১২৮১ - সুলতান মুহম্মদের সাথে মুলতান যাত্রা
• ১২৮৬ খ্রিষ্টাব্দে মোঙ্গলরা মুলতান আক্রমণ করে। সুলতান বলবন তাঁর পুত্র মহম্মদকে এই আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সেখানে পাঠান। এই যুদ্ধে মহম্মদের সাথে খসরুও যান। যুদ্ধে মহম্মদ নিহত হন এবং আমির খসরু মোঙ্গলদের হাতে বন্দী হন।
• ১২৮৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি বন্দীদশা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। বলবন তাঁকে আগের মতই সমাদর করে সভাকবি হিসেবে দরবারে স্থান দেন।
• ১২৮৮ - "কিরিনুস সাদ্দাইন" লেখা সম্পন্ন হয়
• ১২৮৯ খ্রিষ্টাব্দে খসরু রচনা করেন 'ওয়াস্তুল হায়াত' নামক দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। এই বৎসরে বঘরা খাঁর অনুরোধে তিনি বঙ্গদেশ ভ্রমণ করেন এবং তৎকালীন বাংলার রাজধানী লক্ষ্মণাবতীতে কিছুদিন কাটান।
• রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি সালতানাতে খিলজি রাজবংশের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে উস্তাদ আমির খসরু সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজির সচিব পদে নিযুক্ত হন। আমির খসরুর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়ে সুলতান তাকে 'আমির খসরু' উপাধি প্রদান করেন। জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজিকে নিয়ে তিনি তার দ্বিতীয় মসনভি 'মিফতাহুল ফুতুহ' রচনা করেন।
• ১২৯৪ খ্রিষ্টাব্দে রচনা করেন 'ঘিরাতুল-কামাল' নামক কাব্য।
• ১২৯৮ - "খামসা-ই-নিজামি" লেখা সম্পন্ন হয়।
• ১৩১০ খ্রিষ্টাব্দে রচনা করেন 'খজাইন - উল -ফুতুহ' নামক কাব্য।
• ১৩১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি "দুভাল - রানি - খিজার - খান" কাব্য লেখা শেষ করেন।
• ১৩২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'তুঘলকনামা' রচনায় হাত দেন।
• অনেকে মনে করেন, গুরুর মৃত্যু শোকেই তিনি ১৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যবরণ করেন।
প্রাপ্ত উপাধি
আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি-সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আউলিয়ার ছাত্র ও তার অন্যতম খলিফা। তাকে 'ভারতের তোতা ' উপাধি দেয়া হয়েছিল।।এছাড়াও ' ইয়ামিন উদ্দীন ' উপাধিতে তাকে ভূষিত করা হয়েছিলো।
উর্দু ভাষা ও তার উন্নয়ন
দিল্লির সুলতানরা সাধারণ মানুষদের সাথে যোগাযোগের জন্য তাকে একটি ভাষা তৈরি করতে বলেন। তারই ফল আজকের উর্দু ভাষা। ফার্সি, আরবি, তুর্কি ও সংস্কৃত ভাষায় পটু খসরু এই ভাষাগুলির সাথে খারিবলি ভাষা মিশিয়ে তৈরি করেন এই ভাষা। ফার্সি, আরবি, তুর্কির সাথে উর্দু ভাষাতেও তিনি প্রচুর লিখতেন।
তাঁর পক্ষ থেকে অসীয়ত :
হযরত আমীর খসরু (রহঃ) পীর ছাহেব কেবলা হযরত মাহবুবে ইলাহী (রহঃ) তাঁকে পবিত্র জবানে যে সব মুহাব্বাতের বাক্যে সম্বোধন করতেন সে সব শব্দ একটি কাগজে লিখে তাবিজের মত গলায় ধারণ করতেন। তিনি অসিয়ত করে যান, যেন এই লেখা তাবিজটি স্ব-যত্নে তাঁর মৃত্যুকালীন সময়ে কবরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়।
হযরত আমীর খসরুর ওফাত :
হযরত মাহবুবে ইলাহী যখন দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিচ্ছিলেন হযরত আমীর খসরু তখন দিল্লীতে ছিলেন না। সে সময় তিনি সুলতান গিয়াস উদ্দীন তুগলকের সাথে 'লখ্নৌতে' ছিলেন।
পরে নিজ পীর ও মুরশিদের মৃত্যু সংবাদ অবগত হয়ে দিল্লী আসেন এবং নিজ পীরের মাজারে হাজির হলেন।
পরে ঐই চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে যা কিছু সম্বল ছিল সবটুকুই ফকীরদের মধ্যে বিলি-বন্টন করে দিলেন।
শোক পালনস্বরুপ কালো কাপড় গায়ে জড়ালেন এবং মাজারে থাকা আরম্ভ করলেন।
একাধারে ছয় মাস অত্যন্ত শোকে অতিবাহিত হওয়ার পর পরিশেষে ১৮ শাওয়াল ৭২৫ হিজরি সনে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করেন।
তাঁর মাজার মাহবুবে ইলাহীর মাজারের পাশেই 'চবুতরান ইয়ারাঁ' নাম নিয়ে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
উপসংহার :
আমীর খসরুকে ভারতের প্রথম জাতীয় কবিও বলা হয়। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র মধ্যযুগীয় কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ, যার গান-কবিতার প্রভাব এখনও স্ব-মহিমায় বর্তমান আছে। উপমহাদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংগীত সাধনায় তার অবদান চিরস্মরণীয়।
লেখক- শিক্ষার্থী- মা'হাদুল ফিকরি ওয়াদ্দিরাসাতিল ইসলামিয়া।
-কেএল