সারিব সুইজা: পবিত্র কোরআনের নিখুঁত ও দরদিকণ্ঠে তেলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন সুদানের বিখ্যাত ক্বারী শেখ নুরাইন মোহাম্মদ সিদ্দিক। পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে নিখুঁত ও দরদিকণ্ঠে তেলওয়াতকারীদের একজন ছিলেন তিনি।
তিনি যখন কোরআন তেলাওয়াত করতেন, তার কণ্ঠে খুঁজে পাওয়া যেত বিষাদ, হৃদয় স্পর্শ করা আবেগ এবং ব্লুজ সঙ্গীতের অপূর্ব মূর্ছনা। অনন্য কণ্ঠস্বর তাকে মুসলিম বিশ্বের জনপ্রিয় সব ক্বারীদের একজনে পরিণত করেছিল।
২০২০ সালের নভেম্বরে যখন তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তখন সারাবিশ্বেই শোক ছড়িয়ে পড়েছিল। সুদানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ ওয়াদি হালফার ওমদুরমান শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের একটি জায়গায় গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন বিশ্বনন্দিত কারি শেখ নুরাইন মুহাম্মদ সিদ্দিক।
[caption id="" align="aligncenter" width="613"] শায়খের দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি।[/caption]
মূলত ক্বারী শেখ নুরাইন মোহাম্মদ সিদ্দিকের মাধ্যমে আফ্রিকান লাহজা বা স্টাইলে কোরআন তেলাওয়াত জনপ্রিয় হয়ে উঠে বিশ্বময়।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের স্টাইল প্রাধান্য বিস্তার করলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বর্তমানে আফ্রিকার স্টাইলও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নুরাইন সিদ্দিকের তেলাওয়াত এবং তার মৃত্যুর ফলে ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান স্টাইলে কোরআন তেলাওয়াতের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
ইতিহাসবিদ সিলভেইন দিওফের মতে পশ্চিম আফ্রিকার দাস মুসলিমদের প্রার্থনা এবং তেলাওয়াতের সঙ্গে সাহেল অঞ্চল থেকে শুরু করে সুদান এবং সোমালিয়ার মুসলিমদের তেলাওয়াতের মিল রয়েছে। সেখান থেকেই হয়তো বিশেষ এই আফ্রিকান আমেরিকান সঙ্গীতের জন্ম হয়েছে যা পরে ব্লুজ সঙ্গীতে রূপ নিয়েছে।
[caption id="" align="aligncenter" width="668"] শায়খের জানাযার দৃশ্য।[/caption]
ক্বারী শেখ নুরাইন মোহাম্মদ সিদ্দিক ৯০ এর দশকে সুদানের রাজধানী খার্তুমের পশ্চিমে আল-ফারাজাব গ্রামের একটি মাদ্রাসায় কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
পরে যখন খার্তুমে চলে আসেন, শহরের কয়েকটি বড় বড় মসজিদের নামাজে তিনি ইমামতি করেন এবং তখন তিনি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মূলত ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করার পরই তার নাম দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের স্টাইলে কোরআন তেলাওয়াত আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
[caption id="" align="aligncenter" width="610"] সালাতে তেলাওয়াতের সময় অঝোর ধারায় কাঁদছেন শায়খ।[/caption]
বিশেষ করে শহুরে এলাকায় যেখানে লোকজন ভিনাইল রেকর্ড, শর্টওয়েভ রেডিও, অডিও ক্যাসেট টেপ এবং সিডিতে কোরআন তেলাওয়াত শুনে থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই উৎপাদন করা হয় মিসর ও সৌদি আরবে। তার সঙ্গে রয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থ সহায়তায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রভাব।
কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আফ্রিকার স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কোরআন তেলাওয়াতের লাহজা এখন তরুণ প্রজন্মসহ সবার নজরে পড়ছে। যার প্রভাব শাইখ নুরাইন মোহাম্মদ সিদ্দীক এর তিলাওয়াত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তথ্যসূত্র, বিবিসি বাংলা।
-কেএল