মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
বিদেশিদের জন্য প্রায় দেড় বছর বন্ধ রয়েছে পবিত্র ওমরা হজ পালন। অবশেষে আগামী ১০ই আগস্ট চালু হচ্ছে বাইরের মুসল্লিদের জন্য ওমরা। আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ তারিখটি ১৪৪৩ হিজরির পহেলা মুহাররম। এদিন বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে বেঁধে রাখা স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটবে। তারা আবার নতুন করে ইহরামের কাপড় পরবেন। পবিত্র মসজিদ বায়তুল্লাহ শরীফে আদায় করবেন নামাজ। সালাম দিবেন প্রিয় নবির রওজা মুবারাকে।
সৌদির ঘোষণা মোতাবেক বাংলাদেশের হজ এজেন্সীগুলোর প্রস্তুতি কতটুকু? ওমরা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কী ভাবছে হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা হাব-এর কর্মকর্তাগণ। দীর্ঘদিন পর চালু হওয়া ওমরা পালনে ট্রাভেলস মালিকদের প্রস্তুতিই বা কতটুকু?
জানতে চেয়েছিলাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। তারা জানান, সৌদি আরবের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা হাজীদের হজ পালনে সহায়তা ও সেবা দিতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
তবে হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা হাব-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ওমরার প্রস্তুতির বিষয়ে আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘সৌদি আরব বিদেশি মুসুল্লিদের জন্য আগামী ১০ তারিখ থেকে ওমরা পালনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ওমরায় যাওয়ার যে প্রক্রিয়াগুলো আছে, এটা যে দেশ যত আগে শেষ করতে পারবে, সে দেশ তত তাড়াতাড়ি ওমরা পালনে করতে পারবে।
তিনি বলেন, বিদেশি মুসুল্লিদের জন্য যে ওমরার অনুমোদন দিয়েছে, সেটা প্রথমত হলো ঐসব দেশের জন্য, যাদের জন্য কোনো ফরমালিটি মানতে হয় না। যাদের ভিসা লাগে না। যারা ডোমেস্টিক হিসেবে কাছাকাছি আছেন তারা। এরপর দূরের যেসব দেশ আছে তারা এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ওমরা পালন করতে পারবে।’
হজের প্রস্তুতির বিষয়ে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশের অন্যতম বড় হজ গ্রুপ ‘আকবর হজ গ্রুপ’ এর কর্ণধার মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকির সঙ্গে। তিনি জানান, ‘প্রতিবছরই আমরা হাজীদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত সেবা নিশ্চিত করে থাকি। হাজীদের উন্নত সেবা প্রদানের জন্য আমাদের যথেষ্ট একটি পরিচিতিও রয়েছে। সে হিসেবে এ বছর সৌদি আরব বিদেশি মুসুল্লিদের জন্য ওমরা হজের ঘোষণা দেয়ার পরপরই আমি আমার হজ কাফেলাসহ হাজীদের সেবা দিতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি। সরকার যখন অনুমোদর দিবে তখনি আমরা ওমরায় যাত্রী প্রেরণ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও জানান, ‘আকবর হজ গ্রুপের অধীন ১৬ টি হজ লাইসেন্স রয়েছে। আর শুধু ওমরার জন্য দুটি লাইসেন্স রয়েছে। একটি হলো ‘মৌসুমী এয়ার ট্রাভেলস লিমিটেড’। যার লাইসেন্স নং-৫১। আরেকটি হলো ‘নেয়ার এন্ড ফার্স্ট ট্রাভেলস’। যার লাইসেন্স নং-৩২১। আমরা উভয় ট্রাভেলসের মাধ্যমে ওমরা যাত্রীদের সংগ্রহ করে সৌদি আরবের অনুমোদিত করোনার টিকার সনদসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন করছি। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
মাবরুর হজ কাফেলার কর্ণধার মুফতি মুশতাক আহমদ আল-মাদানী বলেন, ‘সৌদি আরব যদিও ওমরা হজ পালনের জন্য বিদেশি মুসুল্লিদের অনুমতি প্রদান করে একটি ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সৌদি হজ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রণালয়ে কোনো নোটিশ আসেনি। তাই এখনি ওমরা যাত্রী পাঠানোর বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তবে সরকার যখনি অনুমোদন দিবে তখনি আমরা ওমরার যাত্রী পাঠাতে পারবো।’
ওদিকে এক প্রশ্নের জবাবে হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা হাব-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম আরও বলেন, ‘সৌদি থেকে ওমরায় যাওয়ার যেসব শর্তাবলী রয়েছে সেসব শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে যাত্রীরা ওমরায় যেতে পারবেন। তবে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে খুব শীঘ্রই হয়তো ওমরায় যেতে পারবেন না বাংলাদেশি মুসুল্লিরা। সব কার্যক্রম সমাপ্ত করে ১০ তারিখের পরে আরও সময় লাগতে পারে। সেটা হয়তো এ মাসের শেষের দিকেও হতে পারে। আবার আগামী মাসও হয়ে যেতে পারে।’
কথা বলেছিলাম হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা হাব-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতীর সঙ্গেও। তিনি মনে করেন, ‘সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে আগামী মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে ওমরায় যাওয়ার প্রক্রিয়া। তবে ওমরার জন্য যেহেতু কোনো নিবন্ধন করতে হয় না। তাই সৌদি থেকে দেওয়া শর্তগুলো পূরণের পরই একজন যাত্রী ওমরায় যেতে পারবেন।
বাংলাদেশ থেকে সবশেষ কোনো যাত্রী ওমরায় গিয়েছেন গত ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর আর কোনো যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ওমরায় যাননি। আর হাব-এর হিসেব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমরা হজ পালন করতে গিয়েছিলেন প্রায় এক লাখ নব্বই হাজার মানুষ।
এমডব্লিউ/