মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
আল-হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের ১৪৪২ হিজরি/২০২১ খ্রিস্টাব্দের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে সারাদেশে মহিলা শাখায় প্রথম হয়েছেন মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা, ৫৩, গলগোণ্ডা মোমেনশাহীর ছাত্রী মাসুমা। তার মোট প্রাপ্ত নাম্বার ৯০৩।
সমপরিমাণ নাম্বার পেয়েছেন শ্রীমঙ্গল জেলার জামিয়া ইসলামিয়া (বালক-বালিকা) মহিলা মাদরাসার ছাত্রী তাজকিয়া সুলতানা চৌধুরী। তারও প্রাপ্ত নাম্বার ৯০৩।
তবে মেধাতালিকায় মোমেনশাহীর মাসুমার নাম প্রথমে থাকলেও নাম নেই শ্রীমঙ্গলের তাজকিয়ার। হাইয়াতুল উলইয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে উভয়ের সমপরিমাণ নাম্বার প্রাপ্তির প্রমাণ রয়েছে।
সূত্রমতে, মোমেনশাহীর মাসুমা যদি ৯০৩ পেয়ে প্রথম (ক) হোন তাহলে শ্রীমঙ্গলের তাজকিয়াও ৯০৩ পেয়ে প্রথম (খ) হবেন। মেধাতালিকায় তিনিও থাকবেন। কিন্তু হাইয়াতুল উলইয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মেধা তালিকায় তাজকিয়ার নামই খোঁজে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তারা এ বিষয়ে হাইয়াতুল উলিয়ার অবহেলার অভিযোগ করছেন।
এ বিষয়ে মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুস শাকুর বলেছেন, আমরা বিষয়টি দেখার পর হাইয়াতুল উলিয়াকে অবহিত করেছি। এখনো বিভিন্নজনের সাথে কথা বলছি। কোথাও ভুল হলো কিনা, তা জানার চেষ্টা করছি। তবে এখনো আমরা বিষয়টির কোনো সমাধান পাইনি।
আরও পড়ুন : শ্রীমঙ্গলের তাজকিয়ার নাম মেধা তালিকায় না থাকা বিষয়ে যা বললো হাইয়াতুল উলইয়া
এদিকে মেধাস্থানপ্রাপ্ত ছাত্রীর শ্রীমঙ্গল মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, তারা এই বিষয়ে হাইয়াতুল উলইয়ার কাছে অভিযোগ দায়ের করে মেইল করেছেন। উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বিষয়টির সুরাহার জন্য আবেদন করেছেন। হাইয়াতুল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের ফলাফল প্রকাশিত সংবাদ পোস্টের কমেন্টের ঘরে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়টির কোনো সমাধান পাননি
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে হাইয়াতুল উলইয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সংস্থাটির অফিস সম্পাদক মাওলানা অসিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাকমিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী যদি অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হয়, তাহলে যোগ্য নাম্বার পেলেও তাদের নাম মেধাতালিকায় আসে না। শ্রীমঙ্গলের ঐ ছাত্রীর অভিযোগ পাওয়ার পর খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, এই ছাত্রীটি ছিল নিয়মিত। আর কোনো শিক্ষার্থী নিয়মিত হলে আমাদের সফটওয়্যার সাধারণত ভুল করে না। কারণ আমরা মেধাতালিকায় সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোড দিয়ে নির্বাচন করা হয়। এখন বিষয়টি যাচাই করতে হবে। এই ছাত্রী কি আসলেই নিয়মিত ছিল, নাকি অনিয়মিত। আমরা যাচাই করার পর বিস্তারিত জানাতে পারবো।
মাওলানা অসিউর রহমান আরও বলেন, এই বিষয়ে আমাদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনিও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গতকাল (১৮ জুলাই) রবিবার ফলাফল ঘোষণা করেন হাইআতুল উলইয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান।
ঘোষিত ফলাফলে পরীক্ষার গড় পাসের হার ৭৩.২৫। ছাত্রদের পাশের হার ৭৯.৪২। ছাত্রীদের পাশের হার ৬৩.৬৩।
এসময় সভায় উপস্থিত ছিলেন হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা শামছুল হক, মাওলানা আব্দুল বছীর, মাওলানা আরশাদ রাহমানী, মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা মুশতাক আহমদ খুলনা, মাওলানা নূরুল আমিন, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গওহরপুরী, মাওলানা ফুরকানুল্লাহ খলীল, মুফতি জসীমুদ্দীন প্রমূখ।
হাইয়াতুল উলইয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা উপকমিটির সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের, মুফতি আমিনুল হক, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতী নাসীরুদ্দীন, মুফতি আহমদ আলী, মুফতী নূরুল ইসলাম, মুফতী ওবায়দুল্লাহ হামজা, মাওলানা মুহিব্বুলহ হক গাছবাড়ী, মুফতি এনামুল হক কাসেমী, মুফতি এমদাদুল্লাহ কাসেমী, হাইয়াতুল উলইয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মুহাম্মদ ঈসমাইল বরিশালী, অফিস সম্পাদক মাওলানা অছিউর রহমান প্রমুখ।
এবারের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২,৩৪২ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬,২৩২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১১,৩৮০ জন এবং ছাত্রী ৪,৮৫২ জন। পাসের হার ছাত্র ৮২.১০, ছাত্রী ৫৭.২১। মুমতায (স্টার মার্ক) পেয়েছে ছাত্র ৯৩৩ জন এবং ছাত্রী ৫৬ জন। জায়্যিদ জিদ্দান (১ম) বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে ছাত্র ৩,৫০০ জন, ছাত্রী ৭৭১ জন। জায়্যিদ (২য়) বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে ছাত্র ৪,৮৯১ জন, ছাত্রী ২,২৮১ জন এবং মাকবূল (৩য়) বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে ছাত্র ২,০৫৬ জন, ছাত্রী ১,৭৪৪ জন।
এমডব্লিউ/