শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তরুণরা কী ভাবছেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির কারণে আজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ফলে জীবনযাত্রার মানেও পরিলক্ষিত হচ্ছে অভাবনীয় পরিবর্তন। তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে মানুষ যেমন উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করছে তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তরুণরা কী ভাবছেন? বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন্য উদিয়মান তরুণের সঙ্গে আলাপ করেছেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ তামিম


প্রযুক্তির অপব্যবহার বন্ধ করা কঠিন কোন কাজ নয়। কেননা উন্নত বিশ্বে ইতোমধ্যেই নানান ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণে সাইবার জগতের অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এখন আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে উন্নত বিশ্বের পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করতে হবে এবং সেগুলোর কোন কোন দিকটি আমাদের দেশের সাইবার জগতের জন্য কার্যকরি ভূমিকা রাখবে তা নির্ধারণ করতে হবে। কথাগুলো বলছিলেন, মালয়েশিয়ার মাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি ও প্রযুক্তি প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী বশির ইবনে জাফর।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সোশাল মিডিয়ায় নির্দিষ্ট একটি টিমের মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি টিম সার্বক্ষনিক সোশাল মিডিয়ায় কটুক্তি, গুজব প্রচার, কাউকে হেয়প্রতিপন্ন করা, অশ্লীলতাকে প্রোমোট করে কোন কন্টেন্ট পাবলিশ করা সহ অপরাধজনিত যেকোন কর্মকাণ্ডের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

এটি তারা করে তাদের ইনবক্সে আসা অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে। কেননা একটি টিমের জন্য পুরো সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সম্ভব নয়। সুতরাং ব্যবহারকারীরা যারাই এর ভুক্তভোগী হবেন তাদের হয়ে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারবেন এবং অতি দ্রুততার সাথে তার সমাধানে কার্যকরি ভূমিকা রাখবে সেই টিম।

তবে মনে রাখতে হবে টেকনোলজি বা প্রযুক্তিজনিত অপরাধ কখনোই শতভাগ রোধ করা সম্ভব নয়, আর তাই সবচেয়ে বেশি যে পদক্ষেপটি নিতে হবে তা হচ্ছে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মিডিয়ায় বিভিন্ন কন্টেন্ট প্রচার করা।

প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন, ফাতেহ টোয়েন্টিফোরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাকিবুল হাসান।

তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক। এ কথা সত্য যে, তথ্য-প্রযুক্তি আধুনিক জীবনকে করে তুলেছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়, কিন্তু কিছু অসৎ ব্যক্তি তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার করে চলেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনে এসে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কেন্দ্র করে সাইবার ক্রাইম সংঘটিত হচ্ছে। একেকটি ক্রাইমের জের কখনো ডজনখানেক প্রাণের বিনিময়ে মেটাতে হয়।

এর প্রতিকার হিসেবে ইন্টারনেট ও অনন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। যেন তথ্যপ্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট সকল সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এর অপব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করা যায়। সঠিক ব্যবহার না জানা থাকার কারণে অনেকে অপব্যবহারে জড়িয়ে যায়।

সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইন প্রয়োগ ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যা অনেকটা লাঘব করা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেকের সাইবার অপরাধ তদন্ত বিষয়ক সেল রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর তৎপরতা এগিয়ে নেয়া যায়। বিবিসির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের ৩৯ শতাংশ থানা পুলিশের কাছে গিয়েও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না। দক্ষতার অভাবে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে সাইবার অপরাধের বিষয়গুলো তদন্তে হিমশিম খেতে হয়। এই জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে।

পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের ওপর বড়দের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়সোপযোগী প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েবসাইটগুলো তারা ব্যবহার করছে কি না, সে বিষয়ে সবার খেয়াল রাখা দরকার। ইন্টারনেটে এমন সব গেমস বা application নির্বাচন করতে সন্তানদের উৎসাহিত করতে হবে, যেগুলো তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে। ইতিবাচক সামাজিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বিশ্বস্ততা ইত্যাদি একজন সন্তানকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি।

প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে কৌশলগত পরিবর্তনের কথা বলছিলেন তরুণ লেখক ফরহাদ খান নাঈম।

তিনি বলেন, ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, Too much of anything is bad অর্থাৎ অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই খারাপ। অনেক সময় অনেক ভালো কাজও পরিমাণে অধিক হয়ে গেলে মন্দ হয়ে যায়।

বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে। এটি ছাড়া একটি দিনও চলে না আমাদের। গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে শতে অন্তত ৬৪ জন প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘন্টা করে কোনো না কোনো প্রযুক্তিনির্ভর স্ক্রীনের সামনে ব্যয় করে। প্রযুক্তির এই অত্যধিক ব্যবহারের ফলে আমরাই এটিকে আমাদের নানাবিধ ক্ষতির কারণে পরিণত করেছি।

প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে আগে এর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারকে রুখতে হবে। আর এজন্য ব্যক্তিগত অভ্যস্ততায় আমাদের কিছু কৌশলগত পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়।

১. অবসর যাপনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির তুলনায় প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিন। নিজের অবসর সময়কে পুরোটা প্রযুক্তির নিকট সঁপে না দিয়ে কিছু সময়ের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আসুন। সকালে ও বিকেলে নিয়ম করে প্রকৃতির সান্নিধ্য গ্রহণ করুন। দেখবেন, প্রযুক্তির চেয়ে প্রকৃতি আপনাকে ঢের বেশি দিচ্ছে।

২. কক্ষের আসবাবপত্রগুলোকে পুনরায় সাজিয়ে নিন। নিজের কক্ষের আসবাবপত্রগুলো এমনভাবে সাজিয়ে নিতে হবে, যাতে টেলিভিশন সেটটি চোখের সামনে না থাকে। টেলিভিশনটাকে এমন অবস্থানে রাখতে হবে, যেনো এটি দেখতে হলে নিজেকেই ঘোরাতে হয়।

৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার কমিয়ে আনা। ফেইসবুক, টুইটার, মেসেঞ্জার কিংবা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্রাউজ করা বাদ দিতে হবে। জরুরি কিছু জানার থাকলে নির্দিষ্টভাবে গুগলে ব্রাউজ করে জেনে নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে সাথে সাথে লগ আউট কিংবা লগ অফ করে নিতে হবে।

৪. প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় বই পড়ায় ব্যয় করুন। প্রতিদিন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করার আগেই নিজের পছন্দমতো কোনো বইয়ের অন্তত ১৫ - ২০ পৃষ্ঠা পাঠ করুন। প্রয়োজনে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করুন।

৫. নিজের জন্য কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করুন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের জন্য কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করুন ও তা ডায়েরিতে লিখে ফেলুন। একঘেয়েমি এড়াতে পরিকল্পনার তালিকায় মাঝেমধ্যে নতুনত্ব নিয়ে আসুন।

এভাবে একটা সময় দেখা যাবে, প্রযুক্তির অপব্যবহার তো দূরের কথা, অপ্রয়োজনীয়ভাবে এতে সময় নষ্ট করারও মানসিকতা থাকবে না।

এটি/এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ