মাওলানা মুহাম্মদ কালিম সিদ্দিকী
অনুবাদ: আবদুল্লাহ তামিম
হযরত ঈসা আ. এবার তার এক শিষ্যকে নিয়ে সফরে বের হলেন। পথে তিনি শিষ্যকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার পকেটে কিছু আছে? ছাত্র বলল, আমার পকেটে দুই দিরহাম আছে। হজরত ঈসা আ. তার পকেট থেকে একটি দিরহাম দিয়ে বললেন এখানে মোট তিন দিরহাম হবে। পাশের বস্তি থেকে তিনটি রুটি নিয়ে আসো।
সে তিনটি রুটি নিয়ে আসলো। শিষ্য পথের মধ্যে চিন্তা করলো হযরত ঈসা আ. আমাকে এক দিরহাম দিয়েছেন আ দু'টি দিরহাম আমার, এখানে রুটি তিনটি। সে একটি রুটি খেয়ে হযরত ঈসা আ. এর কাছে দু’টি রুটি নিয়ে হাজির হলো। ঈসা আ. একটি রুটি খেয়ে শিষ্যকে জিজ্ঞেস করলেন, তিন দিরহামে কতটি রুটি এনেছ? শিষ্য বলল দু’টি, একটি আমি খেয়েছি আর একটি আপনি খেয়েছেন।
হযরত ঈসা আ. রওনা হলেন। পথে একটি নদী এলো। শিষ্য বলল হযরত এখানে তো কোনো নৌকা দেখা যাচ্ছে না, আমরা কীভাবে নদী পার করব? হযরত ঈসা আ. বললেন, চিন্তা করবে না।
আমি নদী পার হয়ে যাবো, তুমি আমার জুব্বায় ধরে আমার পিছনে পিছনে নদী পার হয়ে যাবে। হযরত ঈসা আ. নদীতে পা রাখলেন। শিষ্যও তাঁর কাপড়ে ধরেছিলেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি নদীটি এমনভাবে পেরিয়েছিলেন তাঁর পা একটুও ভিজেনি। শিষ্য এ দৃশ্য দেখে বলল, আপনার উপর আমার হাজারো জীবন উৎসর্গ হোক! আপনার মত মুজিজার অধিকারী নবি এর আগে প্রেরণই করা হয়নি।
হজরত ঈসা আ. বললেন, এ অলৌকিক ঘটনাটি দেখে কি তোমার ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছে? সে বলল হ্যাঁ! আমার হৃদয় আলোকিত হয়ে গিয়েছে। তখন হযরত ঈসা আ. বললেন, যদি তোমার হৃদয় নূরে ভরে ওঠে তাহলে বল রুটি কতটি ছিলো?
শিষ্য বলল শুধু দুটি রুটি ছিল। হযরত ঈসা আ. সেখান থেকে রওনা হলেন, পথে হরিণের একটি পাল যাচ্ছিল। হযরত ঈসা আ. একটি হরিণ কে ইশারা করলেন, হরিণটি হযরত ঈসা আ. এর কাছে চলে আসলো। তিনি সেটিকে জবাই করে খেলেন। শিষ্যকেও দিলেন। গোশত খাওয়া শেষ হলে, হযরত ঈসা আ. হরিণের চামড়ায় থাপ্পর মেরে বললেন আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে যাও। হরিণটি জীবিত হয়ে দৌঁড়ে হরিণের পালের সঙ্গে গিয়ে মিশে গেলো।
শিষ্য এ ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আল্লাহ তায়ালা আমাদের আপনার মত জ্ঞানী নবি ও শিক্ষক দিয়েছেন। হযরত ঈসা আ. বললেন, এই অলৌকিক ঘটনাটি দেখে কি তোমার ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছে? শিষ্য বলল, হে আল্লাহর নবি আমার ঈমান দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে! হযরত ঈসা আ. বললেন, এবার বল রুটি কতটি ছিলো? শিষ্য বলল, রুটি দু’টিই ছিলো।
তারা আবার চলতে শুরু করলো, চলতে চলতে একটি পাহাড়ের পাদদেশে তিনটি সোনার ইট দেখতে পেলো। হযরত ঈসা আ. বললেন, একটি ইট আমার আর একটি ইট তোমার। তৃতীয় ইটটি তার যে তৃতীয় রুটি খেয়েছিলো। সঙ্গে সঙ্গে শিষ্য বলে ওঠলো হযরত তৃতীয় রুটিটি আমিই খেয়েছি। হযরত ঈসা আ. এ লোভী শিষ্যকে তার রাস্তায় ছেড়ে দিলেন। সঙ্গে তিনটি স্বর্ণের ইটও দিয়ে দিলেন।
শিষ্য চিন্তায় পড়ে গেলো, স্বর্ণের ইট কিভাবে বাড়ি নিয়ে যাবে। ঠিক তখনই তিন ডাকাত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, শিষ্যের কাছে স্বর্ণের ইট দেখে তারা তাকে হত্যা করে ইটগুলো নিয়ে নিলো। ডাকাতরা ক্ষুধার্ত থাকায় তাদের তাদের তিনজনের একজনকে বাজারে রুটি আনতে পাঠায়। তাকে বলে তুমি ফিরে আসলে আমরা তিনটি ইট তিনজনে নিয়ে নিবো। যে রুটি আনতে বাজারে যাচ্ছিলো, সে ভাবলো আমি যদি রুটির মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেই তাহলে তিনটি রুটিই আমার হয়ে যাবে। আর বাকি দুই ডাকাত চিন্তা করলো আমরা যদি তাকে মেরে ফেলি তাহলে আমরা দেড়টি করে স্বর্ণের ইট ভাগে পাবো।
যখন তৃতীয় ডাকাতটি বিষযুক্ত রুটি নিয়ে আসে, তখনই দু'জন মিলে তাকে হত্যা করে। আর তার নিয়ে আসা বিষ মেশানো রুটি খেয়ে বাকি দু’জনও মৃত্যু বরণ করেন। হযরত ঈসা আ. এদিক দিয়ে ফিরছিলেন, তিনি দেখলেন, সে স্বর্ণের তিনটি ইট সেভাবেই পড়ে আছে। সাথে চারটি মৃতদেহ। হযরত ঈসা আ. বললেন, যারা দুনিয়ার লোভ লালসা লালন করে, দুনিয়া ছাড়া আর কিছুই বুঝে না, দুনিয়া তাদের সঙ্গে এমনই আচরণ করে।
যে বিষয়গুলোর উপর ঈমান না আনলে একজন মানুষকে কখনো মুমিন বলা যায় না। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাকদির বা নিয়তি।
নিয়তির প্রতি ঈমান আনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল জীবিকা বা সহায়-সম্পদ নির্ধারিত হওয়া। যার জন্য আল্লাহ তায়ালা যতটুকু ধন-সম্পদ লিখে রেখেছেন, পুরো মহাবিশ্বের শক্তি একত্রিত হয়েও তাতে একটি শস্য কম করতে পারবে না। আর যে টাকা পয়সা ধন দৌলত নিয়তিতে নেই বিশ্বের সমস্ত শক্তি ব্যয় করেও তা যুক্ত করতে পারবে না। অথচ মানুষ লোভ লালসায় পড়ে দুনিয়া আখেরাত ধ্বংস করে দেয়। হায় যদি আমরা তাকদির বা নিয়তির উপর ঈমানের অর্থ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারতাম।
-এটি