কাওসার আইয়ুব
নির্ভরতার আশ্রয়স্থল প্রিয়ো বাবা। বট বৃক্ষের মতো ভালোবাসার ছায়া দিয়ে যায় জীবনের শুরু থেকেই। সন্তানের ইচ্ছা পুরণে সর্বস্ব ত্যাগ করে যায় বাবা। পূর্ণ ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখে সারা জীবন। মায়ের ভালোবাসা থেকে বাবার ভালোবাসাটা একটু আলাদা। বাবার ভালোবাসা কখনো প্রকাশ পায়না।
শাসনের ভেতর দিয়ে ভালোবাসে বাবা। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কষ্ট বাবা কখনো সন্তানকে বুঝায় না। বাবার ছায়া কতো বড় রহমত, একজন বাবা হাড়া এতিম সন্তান বুঝতে পারে সে দুঃখ। বাবাহীন জীবন আর ছন্নছাড়া জীবনের মাঝে কোন ব্যবধান নেই। বাবা নিজেকে নিয়ে যত বড় স্বপ্ন দেখে তারচে বেশি বড় স্বপ্ন দেখে সন্তানকে নিয়ে। নিজের ভবিষৎ স্বপ্নকে না দেখে সন্তানের স্বপ্ন পূরণে বেতিব্যস্থ থাকে।
অথচ জীবনের পড়ন্ত বিকেলে সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে ওঠেন, বাড়তি ঝামেলা। ঝামেলা সইতে না পেড়ে অবশেষে বাবার আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রম! বৃদ্ধাশ্রম মূলত বৃদ্ধদের আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল! এর উৎপত্তি হয়েছে অসহায় দরিদ্র সহায়-সম্বলহীন, সন্তানহারা বৃদ্ধদের শেষ জীবনে বিশেষ সেবা নিশ্চিত করার জন্য।
কিন্তু বর্তমানে এর সংজ্ঞা পুরোপুরি ভিন্ন। এখন বৃদ্ধাশ্রমগুলো হয়ে উঠেছে পরিবার–পরিজন থেকে বৃদ্ধ পিতা-মাতার পৃথক নিবাস ও আশ্রয়ের হিসেবে।
আথচ হাদিসে এসেছে, সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘আমি নবী করিম সা. কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন সময়মতো নামাজ পড়া। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
এ হাদীসে বাবার মর্যাদা রক্ষা করতে বাবা-মার সাথে আচরণ সুন্দর করতে শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনুল কারিম অনেক বার বাবা-মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের নির্দেশ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কর না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
আমাদের অসহায়ত্বের সময় মা-বাবা যেমন স্নেহভরে লালন–পালন করেছেন, আমাদেরও উচিত বৃদ্ধাবস্থায় তাঁদের সব চাহিদা পূরণ করা। তাদের আগলে রাখা, তাদের পরন্ত জীবনের স্বপ্নগুলো পূর্ণ করা। আর কোনো বাবার আশ্রয় যেন না হয় বৃদ্ধাশ্রম। কারাগারের মতো বন্দিত্ব বরণ না করুক কোনো পিতা। বৃদ্ধাশ্রমের জানালা ধরে অপলক চাহনি মিথ্যা প্রতিপন্ন হোক।
জীর্ণশীর্ণ দেহ–মন আর স্বচ্ছ চোখ দুটি থেকে ঝরে না পড়ুক আর একফোঁটা অশ্রু। সুতরাং আমাদের বাবাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া তাদের সাথে কঠোরতা না করা। বৃদ্ধাশ্রমের মতো নিরব কুঠিরে তাদের ফেলে না আসা। আজ থেকে সন্তানের জন্য বাবা-মার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন হোক আমাদের অঙ্গীকার।
-এটি