জুলফিকার জাহিদ।।
কুরআনের মর্ম উদ্ধার, তা থেকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত বিধি-নিষেধ বুঝা, অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও তাফসির শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে কোরআনের তাফসির পড়তে আগ্রহীদের উদ্দেশ্যে দেশের উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার আমীনুত তালীম মাওলানা আব্দুল মালেক দামাত বারকাতুহু-এর ১০ উপদেশ তুলে ধরা হল তাফসির শিক্ষার্থীদের জন্য:
১. কুরআন মজীদের উপর ঈমানকে দৃঢ় করুন এবং পুনঃপুনঃ তার নবায়ন করুন।
২. অন্তরে কুরআনের আকর্ষণ ও ভালবাসা বৃদ্ধি করুন।
৩. বিশ্বাস রাখুন যে, কুরআন মজীদের বিধান ও শিক্ষা চিরন্তন ও শাশ্বত, যা বিশেষ স্থান বা কালের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় কিংবা বিশেষ শ্রেণী ও জনগোষ্ঠীর জন্যও প্রদত্ত নয়; বরং স্থান-কাল নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির জন্য অবশ্যগ্রহণীয় ও অপরিহার্যরূপে অনুসরণীয়। এর প্রতি বিশ্বাস ও ঈমান এবং এর মর্যাদা ও ইহতিরাম মানুষ মাত্রেরই অপরিহার্য কর্তব্য। বিশ্বাস রাখুন যে, ‘উন্নতি ও অগ্রগতি’র এই যুগেও সত্যিকারের উন্নতি শুধু কুরআনের পথেই অর্জিত হতে পারে এবং ‘জ্ঞান’ ও ‘আলো’র এই যুগেও প্রকৃত আলো কুরআন থেকেই পাওয়া যেতে পারে।
৪. বিশ্বাস রাখুন যে, আমাদের পূর্বসূরী সালাফে সালেহীন কুরআন আমাদের চেয়ে বেশি বুঝতেন এবং কুরআনের প্রতি ভক্তি ও ভালবাসাও তাঁদের বেশি ছিল। তেমনি জীবনের সকল অঙ্গনে কুরআনের অনুসরণ, কুরআনী বিধান বাস্তবায়ন এবং এ পথে সর্বস্ব ত্যাগের প্রেরণা ও আকাঙ্খাও তাঁদের অন্তরে বহুগুণ বেশি ছিল।
৫. ইয়াকীন করুন যে, দ্বীনের আমানত বহনকারী আলিমগণ, যারা রাতদিন কুরআন-হাদীস, সুন্নাহ ও সীরাতের পঠন-পাঠনে মশগুল তাঁরা আমাদের চেয়ে কুরআন বেশি বোঝেন। কুরআনের মর্যাদা ও ইহতিরাম তাঁদের অন্তরে আমাদের চেয়ে বেশি এবং সমাজে কুরআনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খাও তাঁদের অন্তরে প্রবল।
৬. বিশ্বাস রাখুন যে, কুরআন বোঝা, কুরআনের শিক্ষা ও বিধান মুখস্থ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা আজকের নতুন বিষয় নয়। কুরআন নাযিলের যুগ থেকেই তা চলে আসছে। আর ইসলামের প্রথম যুগে, বিশেষত খাইরুল কুরূনে (সাহাবা-তাবেয়ীন যুগে) তা হয়েছে সম্পূর্ণ নববী তরীকায়। এজন্য কুরআনের কোনো আয়াত বা পরিভাষার এমন কোনো ব্যাখ্যা যদি কেউ করে, যা ইসলামের কোনো মুতাওয়ারাছ ও খাইরুল কুরূন থেকে চলে আসা আকীদা কিংবা ইজমায়ী ও সর্বসম্মত বিধানের পরিপন্থী তাহলে বুঝতে হবে, লোকটি হয় নিজেই বিভ্রান্তির শিকার কিংবা পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে লিপ্ত।
৭. ইয়াকীন রাখুন যে, কুরআন হল আসমানী ফরমান ও ইলাহী-নসীহতনামা, আহকামুল হাকিমীনের আইন-কানূন ও তাঁর দেওয়া বিধান-শরীয়ত। কুরআন হল আসমানী ওহীর শাশ্বত, চিরন্তন ও সুসংরক্ষিত সূত্র। কুরআন হল নূর ও জ্যোতি এবং শিফা ও উপশম। কুরআন হল সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় এবং আলো-অন্ধকারের মাঝে পার্থক্য নিরুপনকারী। হেদায়েত ও গোমরাহি এবং সুন্নত ও বিদআতের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্যরেখা। কুরআন হল মাওলার যিকর ও স্মরণের সর্বোত্তম উপায়। যে আল্লাহকে ভালবাসে কুরআন তার প্রেম-যন্ত্রণার উপশম, যে আল্লাহকে পেতে চায় কুরআন তার সান্নিধ্য-পিপাসার ‘আবে যমযম’।
কুরআন কি শুধু জ্ঞানের সূত্র? কেবল জ্ঞানার্জনের জন্যই কি আপনার কুরআন-অধ্যয়ন? বরং কুরআনের যতগুলো গুণ কুরআনে লেখা আছে সবগুলোকে চিন্তায় হাজির রাখুন এবং সে হিসেবেই কুরআনের সাথে আস্থা ও সমর্পণের সম্পর্ক গড়ুন।
কুরআনের জ্যোতিতে শুধু চিন্তা ও মস্তিষ্ক নয়, কর্ম ও হৃদয়কেও উদ্ভাসিত করুন। আপনার সর্বসত্তা ঐ আদর্শ-মানবের অনুকরণে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন, যাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং যাঁর চেয়ে অধিক অন্তরঙ্গ কুরআনের সাথে ও অধিক সমর্পিত কুরআনের প্রতি আর কেউ নেই।
৮. বিশ্বাস রাখুন যে, কুরআনের সাথে যুক্ত হতে পারা মানব-সন্তানের পরম সৌভাগ্য এবং কুরআনকে শিক্ষক ও রাহনুমা এবং বিচারক ও সিদ্ধান্তদাতা বলে গ্রহণ করতে পারা ব্যক্তি ও সমাজের চূড়ান্ত সফলতা। সুতরাং এই মহাসৌভাগ্য কিছুমাত্র অর্জিত হলেও আপনার হৃদয় যেন আনন্দে উদ্বেলিত হয় এবং যবান আল্লাহর শোকরে তরতাজা হয়।
৯. কুরআনের নূর ও হেদায়েত থেকে বঞ্চিতকারী সকল দোষ ও দুর্বলতা পরিহার করুন। বিশেষত অহঙ্কার, বিবাদ-বিসংবাদ, দুনিয়ার মোহ ও আখেরাত-বিস্মৃতির মতো ব্যধি থেকে দিল-দেমাগ ও আচরণ-উচ্চারণকে পবিত্র করুন।
১০. কুরআনের সঠিক মর্ম অনুধাবনে সহায়ক সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের চেষ্টা করুন। বিশেষত সত্যিকারের অন্বেষণ, শ্রবণ ও সমর্পণ, গাইবের প্রতি ঈমান, তিলাওয়াত ও তাদাববুর (চিন্তা-ভাবনা), আল্লাহর ভয়, তাকওয়া ও তহারাত দ্বারা কুরআনের জ্যোতি লাভের চেষ্টা করুন।
আল কাউসারের সৌজন্যে
এনটি