।।মুসা আল হাফিজ।।
সলিমুল্লাহ খান ঠিকই বলেছেন মাদরাসা শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে ইউরোপ। এটি নিয়ে ইসলামপন্থীদের আহ্লাদ যেভাবে দেখছি, মূল বিষয়টা নিয়ে অনুসন্ধান মোটেও দেখছি না। আমরা এমনই। হয় উল্লাস, নয় গেলো গেলো!
বহু বছর ধরে এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। পাশ্চাত্যে কীভাবে শিক্ষার জাগরণ হলো, কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত হলো, এর সিলেবাস,কারিকুলাম,অবকাঠামো ইত্যাদি নিয়েও কাজ করেছি। যারা সহস্রাব্ধের ঋণ পড়বেন, তারা বুঝতে পারবেন বিষয়টা কত ব্যাপক!
শুধু শিক্ষা নয়, চিকিৎসা, বাণিজ্য, নগরব্যবস্থাপনা, স্থাপত্য, বিজ্ঞানচেতনা, পোশাকাশাক, খাবারদাবার, ভাষা ও ভাষিকতা, অর্থনীতি, কূটনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধ ও সন্ধি, গোলাবারুদের ব্যবহার, শিল্পকলা, গণিত, কাব্য, উপন্যাস, থ্রিলার ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে ইউরোপ কীভাবে জেগে উঠার রসদ পেলো, কীভাবে ইসলাম থেকে শত শত বছর ধরে নিতে থাকলো, সেসব নিয়ে পশ্চিমা অগ্রগণ্য গবেষকদের বয়ানেই প্রমাণ করতে চেয়েছি সত্যকে। এ জেড এম শামসুল আলম সাহেবের মতে, এ বই অক্সিডেন্টালিজম বা প্রতীচ্যবাদের উপর পদ্ধতিগত প্রথম কাজ ; বাংলা ভাষায়।
যাক। যে কথাটি বলার, তা হলো- মাদরাসা শিক্ষা থেকে ইউরোপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য পেয়েছে, তা ঠিক। কিন্তু এখন মাদরাসা যে অবয়বে আছে বা যেরকম আছে, তেমন মাদরাসা ছিলো না সেগুলো। সেসব মাদরাসার সিলেবাস, কারিকুলামসহ প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সাথে এখনকার মাদরাসার সাদৃশ্য খুবই কম, বৈসাদৃশ্য খুবই বেশি।
এককথায় বলতে গেলে তখনকার মাদরাসায় জীবন ও জগতের প্রতিটি বিষয়কে সর্বোচ্চ দক্ষতায় পড়ানো হতো, ধারণ করা হতো। তখনকার মাদরাসা বিশ্বসভ্যতার নেতৃত্ব দেয়ার লোক তৈরি করতো সমস্ত দক্ষতাসহ। এখনকার মাদরাসা তার প্রধান একটি দিককে ধরে রেখেছে। সেটা হলো ইসলামকে উপলব্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা। তথা ইসলামী শাস্ত্রজ্ঞ তৈরি করা।
কথাটি কেন বলছি? যেহেতু সবাই শুনছি,মাদরাসা থেকেই ইউনিভার্সিটি এসেছে, অতএব কেমন মাদরাসা থেকে, সেটাও যেন ভাবি। তাতে আমরা আমাদের সভ্যতার বিজয়কালের শিক্ষাব্যবস্থা এবং পতনকালের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যবধান নিয়ে চোখ খুলতে পারবো এবং লাভ করতে পারবো করণীয় সম্পর্কে ইশারা। -লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া।
-কেএল