রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

‘দরস-তাদরিসের বাইরেও তরুণ আলেমদের বিকল্প পেশায় যুক্ত হওয়া সময়ের দাবি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা লিয়াকত আলী- বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন আলেমে দীন। একাধারে একজন সফল মুহাদ্দিস ও সংবাদকর্মী। বাংলাদেশের সংবাদপত্র বা সাংবাদিকতা অঙ্গনে যে কয়জন আলেমে দীন তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি স্থান অর্জন করে নিতে সক্ষম হয়েছেন মাওলানা লিয়াকত আলী তাদের অন্যতম।

বর্তমান সময়ে দরস তাদরিসের বাইরে তরুণ আলেমদের বিকল্প কর্মসংস্থান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিমের সাথে। ৩ পর্বের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব তুলে ধরা হলো আজ।


 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণ আলেমদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জোর দাবি উঠছে, বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

বিগত কয়েক বছর ধরে তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থান সংকটের বিষয়টি  প্রকট আকার ধারণ করছে। আল্লাহ তায়ালার রহমতে প্রত্যেক বছর আমাদের মাদ্রাসাগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ  যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম বের হচ্ছে; কিন্তু সেই পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।

আমাদের আলেমদের প্রধান কর্মসংস্থান মসজিদ-মাদ্রাসা। প্রতিবছর যে পরিমাণে তরুণ আলেমরা বের হচ্ছে, সে পরিমাণে মসজিদ-মাদ্রাসা বাড়ছে  না, বাড়লেও সেই হারে বাড়ছে না যে হারে তরুণ প্রতিভা বের হচ্ছে, তাই নতুন পথ ও কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি ক্লিয়ার হবে- কোন মাদ্রাসায় দুই পদে শিক্ষক প্রয়োজন; সেখানে নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে ইন্টারভিউ দিতে উপস্থিত হতে দেখা যাচ্ছে অনেককে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের জন্য তো সবাইকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

দিনকে দিন এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে হচ্ছে, এটা খারাপ প্রতিক্রিয়াও ফেলতে পারে, এতে করে যারা মাদ্রাসায় পড়তে চান অথবা যে সমস্ত অভিভাবকেরা নিজের সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়াতে চান তারা হয়তোবা পিছিয়ে আসতে পারেন।

বর্তমানে যেহেতু মাদরাসায় শিক্ষার্থী বেড়েছে এবং বাড়ছে; তাই আলেমদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও বিকল্প পেশায় যুক্ত হওয়া সময়ের দাবি।

 

দীর্ঘকাল ধরে দরস-তাদরিসই কওমি পড়ুয়াদের কর্মসংস্থানের অন্যতম  মাধ্যম হিসেবে পরিচিত, এক্ষেত্রে হঠাৎ ভিন্ন পেশায় যুক্ত হতে গিয়ে অনেকেই আড়ষ্টতায় ভোগেন- এব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?

 

এটা ঠিক যে দীর্ঘকাল ধরে আমাদের ওলামায়ে কেরাম, বিশেষত দারুল উলুম দেওবন্দের ধারার সাথে যারা যুক্ত তারা দরস-তাদরিসকে তাদের অন্যতম কর্মসংস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, এটা জরুরি এবং তৎকালীন পরিবেশের দাবিও ছিল তাই।

এক্ষেত্রে (দরস-তাদরিসকেই কর্মসংস্থান হিসেবে বেছে নেওয়া) আমাদের আকাবির উলামায়ে কেরামের চিন্তা-ভাবনা ছিল-দ্বীনি খেদমতের প্রচার প্রসার ঘটাতে হবে, তাই তারা তাদের ছাত্রদের বলতেন পড়াশুনা শেষে তোমাদের তালিমি খেদমতে যুক্ত হতে হবে। উপমহাদেশে মুসলমানদের স্বকীয়তা, ধর্মীয় চেতনা, দ্বীনি চর্চা বজায় রাখার ক্ষেত্রে  আকাবিরদের এই দৃষ্টিভঙ্গি বড় ভূমিকা রেখেছে। তাদের  এই চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির বদৌলতেই উপমহাদেশের সমাজ-সংস্কৃতির গভীরে প্রেথিত ইসলামি মূল্যবোধ।

আকাবিরদের চিন্তাধারার ফলে এক মাদ্রাসায় পড়ে সেখান থেকে বের হয়ে আরেক মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে ইলমে দ্বীনের খেদমত করাটা আমাদের এই অঞ্চলে এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

আর দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু আমাদের এই অঞ্চলে মসজিদ মাদ্রাসার খেদমতকে প্রধান কর্মসংস্থান হিসেবে দেখা হতো,  তাই নিজের অঙ্গনের বাইরে গিয়ে একেবারে নতুন কর্মসংস্থান, নতুন পরিবেশে  যুক্ত হতে  কিছুটা আরষ্টতা ও অস্বস্তি কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে আস্তে আস্তে যখন দরস-তাদরিসের বাইরে বিভিন্ন পেশায় আলেমদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকবে তখন আরষ্টতা আর কাজ করবে না।

এছাড়া ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় দারুল উলুম দেওবন্দের আগ পর্যন্ত ওলামায়ে কেরাম শুধু দরস-তাদরিসের মধ্যেই নিজেদের কর্মসংস্থান সীমাবদ্ধ রাখতেন না, সরকারি চাকরি ও অন্যান্য পেশাতেও যুক্ত হতেন, পরবর্তীকালে ওলামায়ে কেরাম পরিবেশের কারণেই এদিকটাতে (দরস-তাদরিসে) জোর দিয়েছিলেন। বর্তমানে দরস-তাদরিসের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই ওলামায়ে কেরাম যখন আবার নতুন বিকল্প পেশায় যুক্ত হতে শুরু করবেন, আস্তে আস্তে আড়ষ্টতা কেটে যাবে।

 

তরুণ আলেমদের বিকল্প পেশায় যুক্ত হওয়াকে অনেকেই ভিন্ন চোখে দেখে থাকেন, বিষয়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

 

যারা একে ভিন্ন চোখে দেখেন তারা দুই কারণে এটাকে ভিন্নভাবে দেখেন। প্রথমত তারা দ্বীনী ইলমের প্রচার-প্রসারকে ইলমে দ্বীনের বড় খেদমত মনে করেন, এ কারণেই কেউ ভিন্ন পেশায় যুক্ত হলে তারা মনে করেন বড় খেদমত থেকে কেউ হয়তোবা সরে দাঁড়াল।

দ্বিতীয়  বিষয় হচ্ছে, যারা দরস-তাদরিসের বাইরে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছে বাস্তবিকভাবে তাদের আমল-আখলাক ও ইলমি চর্যায় ভাটা পড়ছে-বর্তমানে এটাও একটা চরম বাস্তবতা, আর এই বাস্তবতা থেকেই অনেকে এটাকে কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখেন।

এর জন্য প্রথমত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে যে, দরস-তাদরিস ইলমে দ্বীনের অনেক বড় খেদমত তবে অন্যান্য পেশাগুলো দ্বীনি খেদমতে বাইরে নয়।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি ‘তরুণদের আমল-আখলাক এ ভাটা পড়া’-এটা ওলামায়ে কেরামের সাথে সম্পর্ক বজায় না রাখার কারণে এবং তাদের প্রতি ওলামায়ে কেরামের নাগরানি না থাকার কারণে। ওলামায়ে কেরামের সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় থাকলে এবং যাতায়াত থাকলে দ্বিতীয় এই ঘাটতি আর থাকবে না।

তাই যারা তরুণ আলেমদের বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়াকে কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখেন তারা এ কারণে দেখে থাকেন; তবে ভিন্ন পেশায় আগ্রহী তরুণদের প্রতি মুরব্বী আলেমদের বিশেষ নজরদারি থাকলে এ শঙ্কা আর থাকবে না।

আরো পড়ুন: নতুন শিক্ষাবর্ষে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জোর দাবি তরুণ আলেমদের

-চলবে

এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ