বাজেট। একটি দেশের অর্থ বছরের আগাম অনুমান ভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ। এর মাধ্যমে একটি দেশ তার অর্থনৈতিক ভবিষ্যত পরিকল্পনা নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবার মতামত নেওয়া হলেও আলেমদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। বাজেট প্রণয়নে আলেমদেরও মতামত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ইসলামী অর্থনীতিবিদগণ। সম্প্রতি আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে আওয়ার ইসলামের মুখোমুখি হয়েছেন রাজধানীর জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের ইফতা বিভাগের প্রধান সহকারী মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম। আলাপ করেছেন খোলামেলা। তুলে ধরেছেন বাজেটের নানাদিক।
মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম এ্যাওফি বাহরাইন এর সার্টিফাইড শরীয়াহ্ এ্যাডভাইজর এ্যান্ড অডিটর। ওয়ার্কিং গ্রুপ মেম্বার, এ্যাওফি গভর্নেন্স এন্ড এথিকস বোর্ড, বাহরাইন এর সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, আইএফএ কনসালটেন্সি লি.। তার সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।।
-বাজেট বলতে আসলে কী বুঝায়?
আব্দুল্লাহ মাসুম: বাজেট মূলত একটি দেশের অর্থ বছরের আগাম অনুমান ভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ। এর মাধ্যমে একটি দেশ তার অর্থনৈতিক ভবিষ্যত পরিকল্পনা নির্ধারণ করে। বিজ্ঞজনের মতে ‘বাজেট’ (Budget) শব্দটি ফরাসী শব্দ Bougette থেকে উৎপত্তি। অর্থ হলো ‘চামড়ার ব্যাগ বা থলে’। বলা হয়, ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী বিবৃতি দানের উদ্দেশে সরকারি হিসাব নিকাশের কাগজপত্র থলের মধ্যে নিয়ে পার্লামেন্টে যেতেন। সে ধারণা থেকেই বাজেট শব্দের উৎপত্তি । ঐতিহাসিকগণের মতে, শব্দটি ১৭৩৩ সাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
লক্ষ্য করলে দেখবেন, সেই রীতি অনুযায়ী এখনো বাজেট ঘোষণার দিন অর্থমন্ত্রী মহোদয় একটি চামড়ার ব্যাগ নিয়ে সংসদে গমন করেন। একাডেমিক ভাষায় বাজেট বলা হয়- ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক অর্থ বছরে) সরকারের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়ের বিস্তারিত খতিয়ানকে বাজেট বলা হয়।’
বাংলাদেশ সরকারের একটি বাজেটের সময়কাল হচ্ছে এক অর্থবৎসর, যা এক বৎসরের ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বৎসরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের দেশে প্রতি বছর জুন মাসে বাজেট ঘোষণা হয়। সুতরাং ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত পূর্ণ এক বছর সরকারের আয় ও ব্যায়ের সম্ভাব্য হিসাব দাখিল করাই মূলত বাজেট।
-বাজেটকে ইসলামী অর্থনীতি কিভাবে মূল্যায়ণ করে?
আব্দুল্লাহ মাসুম: যেমনটি আপনাকে বলেছি, বাজেট মূলত একটি দেশের অর্থ বছরের আগাম অনুমান ভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ। এটি ভালো। ইসলামী অর্থনীতি তা পুরোপুরি সমর্থন করে। কুরআনুল কারীমে আমরা দেখি, হজরত ইউসূফ আ. মিশরের ভবিষ্যত দূর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে শষ্য গুদামজাত করার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। (সূরা ইউসূফ: ৪৭-৪৮)
কুরআনুল কারীম থেকে আমরা জানতে পারি, ইউসূফ আ. তৎকালীন মিশর রাষ্ট্রের জন্য ১৪ বছরের একটি সুপরিকল্পিত ‘সুষম বাজেট’ পেশ করেছিলেন। নববী যুগে বর্তমান সময়ের মতো ঘটা করে জুন-জুলাই ভিত্তিক বাজেট প্রণয়নের ধারা যদিও ছিল না, তবে মূল বিষয়টি ছিল। রাষ্ট্রীয় আয় হিসাবে যাকাত, ফাই, গনিমতের সম্পদ, ওয়াকফ, সাধারণ সাদাকাহ ও সুদমুক্ত করজে হাসানা ছিল। একটি পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছিল। রাষ্ট্র কখনও সংকটে পড়লে সমাজের বিত্তবানরা নিজ থেকেই এগিয়ে আসতো। এই এগিয়ে আসাকে সৌভাগ্য মনে করা হতো। যেমন, গাযওয়ায়ে তাবুক। একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্ন। এই কঠিন মুহূর্তে বিত্তবান নাগরিক হজরত উসমান রা. একাই তিনশত উট ও বাহন সেনা সদস্যদের দেয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিলে প্রদান করেন।
আজকের অবস্থা দেখুন, করোনাময় রাষ্ট্রীয় সংকটকালীন কয়জন ধনাঢ্য মানুষ এগিয়ে এসেছেন। স্বাস্থ্য খাতের এই দূরাবস্থায় বেসরকারী হাসপাতালগুলোর কী অবস্থা কারো অজানা নয়। সহায়তা দূরের কথা, সরকারী যে অনুদান, সেটাও অন্যায়ভাবে ভোগ করার নেশায় মত্ত একদল স্বার্থবাদী মানুষ।
যাই হোক, মূল বিষয়টি যেহেতু ছিল, তাই মৌলিকভাবে এটি বৈধ। বাকি এটি কীভাবে প্রস্তুত করা হবে, ব্যয় ও আয়ের খাত বা সোর্স কী ধরা হবে মূলত সেটিই অর্থনীতি ও শরীয়াহর আলোচ্য বিষয়। এখানেই মূলত বাজেট প্রসঙ্গে প্রচলিত অর্থনীতি ও ইসলামী অর্থনীতির পার্থক্য তৈরি হয়।
-বর্তমানে দেখা যায় প্রতি বছরই ঘাটতি বাজেট রচিত হয়। একজন ইসলামী অর্থনীতিবিদ হিসাবে আপনি একে কিভাবে মূল্যায়ণ করেন?
আব্দুল্লাহ মাসুম: অর্থনীতিতে আয় ও ব্যয়ের সমতার দিক থেকে বাজেটকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১. উদ্বৃত্ত বাজেট: কোন নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে সরকারের রাজস্ব আয় যখন রাজস্ব ব্যয় অপেক্ষা বেশি হয়, তখন তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলে। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের তুলনায় যদি ব্যয় কম হয় তবেই তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলে। অথবা কোন নির্দিষ্ট সময়ে সরকারের চলতি রাজস্ব প্রাপ্তি বেশি হলে সে বাজেটকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলে।
২. ঘাটতি বাজেট: কোন নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে সরকারের রাজস্ব আয় অপেক্ষা ব্যয় অধিক হলে তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। সাধারণত সরকার নতুন অর্থ সৃষ্টি, অতিরিক্ত কর আরোপ, অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বাজেটের ঘাটতি পূরণ করার জন্য উদ্যোগী হয়। দুঃখের বিষয় হল, আমাদের দেশে এই ধরনের বাজেটই বেশি হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে একবারের জন্যও ঘাটতি বাজেট সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারেনি প্রিয় বাংলাদেশ।
৩. সুষম বাজেট: যে বাজেট সরকারের আয়-ব্যয়ের পরিমাণ সমান হয় তাকে সুষম বাজেট বলে। অর্থাৎ যে বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ও ব্যয় সমান হয় তাকে সুষম বাজেট বলে। ক্লাসিক্যল অর্থনীতিবিদগণ সুষম বাজেটকে সর্বোত্তম বাজেট মনে করেন। ইসলাম মূলত এই ধরনের বাজেটের কথাই বলে।
- প্রচলিত বাজেটে ‘কর’কে প্রধান ‘আয়ের উৎস’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইসলামী অর্থনীতি কিভাবে তা মূল্যায়ণ করে?
আব্দুল্লাহ মাসুম: প্রথমে বাজেটে করের মূল চিত্রটি তুলে ধরা যাক, বাজেটে আয়ের প্রধান উৎস রাজস্ব। যা মৌলিকভাবে করের মাধ্যমে আদায় হয়ে থাকে। দেশে বহু রকম করের রীতি রয়েছে। এ রীতিগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে বৃটিশ আমল থেকে চলে আসছে। বাজেটে আলোচিত মৌলিক করগুলো হল- আয়কর, মুনাফা ও মূলধনের উপর কর, মূল্য সংযোজন কর-মুসক, সম্পূরক কর, আমদানী কর, রপ্তানী কর, আবগারী কর ইত্যাদি।
তবে রাজস্ব আয়ের মূল উৎস তিন ধরনের কর। যথা-আয়কর, ভ্যাট ও আমদানী-রপ্তানী শুল্ক। বাকিগুলো গৌণ।
এবার আসা যাক, প্রচলিত কর ব্যবস্থাকে ইসলাম কিভাবে মূল্যায়ণ করে? ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংক্রান্ত বই পত্রে এ ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। কখন কোন পরিস্থিতিতে কী কী শর্তে কর আরোপ করা যাবে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতিবিদগণ এ ব্যাপারে মৌলিক যে কথাটি বলেছেন, তা হল-
১। ইসলাম মানুষের মৌলিক ব্যক্তি মালিকানাকে সমর্থন করেছে। যা শরীয়াহ্ আলোকে নিয়ন্ত্রিত হয়।
২। ইসলামে কারো সম্পদ তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া গ্রহণ করা বৈধ নয়। কুরআন ও হাদীসে তা স্পষ্ট নিষিদ্ধ।
৩। রাষ্ট্র যখন-তখন জনগণের সম্পদ ছিনিয়ে নিতে পারে না। এর জন্য শরীয়াহ্ অনুমোদন লাগবে।
মুসলিম অর্থনীতিবিদগণ করের ব্যাপারে বলেছেন, কর গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত ও নীতি অনুসরণ করা জরুরি তা হল- বাইতুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা। এটি হল তখনি, যখন ইসলামী আয়ের যাবতীয় উৎস প্রয়োগ করার পরও অর্থের যোগান না হয়।
-প্রথমে নফল অনুদানে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে।
-কোনোভাবে অর্থের যোগান না হলে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
-সুদমুক্ত ঋণ বা অন্য কোনো ভাবে অর্থের সংস্থান না হলে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রজেক্টে কর নেয়া যেতে পারে। সেই প্রজেক্টটি এমন হতে হবে, যার সাথে ব্যাপক জনকল্যাণ নিহিত। যা জনগণের আবশ্যকীয় প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, পদ্মা সেতু।
-প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যে কর আরোপ করা হবে, সেটি হবে অস্থায়ী। সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে তা বন্ধ করে দিতে হবে। উসূলে ফিকহের ভাষায় একে বলে-الحاجة تتقدر بقدرها অর্থাৎ প্রয়োজনে যা বৈধ হয়, এর বৈধতা প্রয়োজনের সাথেই সীমাবদ্ধ থাকে।
-অর্জিত কর ন্যায় ও ইনসাফের সাথে ব্যয় নিশ্চিত করা। এ হল সংক্ষেপে ইসলামে করারোপের ধারণা।
এবার দেখা যাক, এর সাথে দেশীয় করারোপ নীতির কী মিল-অমিল রয়েছে।
-আমাদের দেশে করকে ব্যাপক ও স্থায়ী একটি আয়ের উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়। ইসলামে এটি সুনির্দিষ্ট প্রজেক্টে অস্থায়ী ভাবে বহু শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদিত।
-প্রয়োজনে শুধু বিত্তবান নাগরিকদের উপর কর আরোপ করা যাবে। ব্যাপকভাবে সকল নাগরিকদের উপর আরোপ করা যাবে না। অথচ মূসক ব্যাপকভাবে সকলের উপর ধার্য্য করা হয়। একজন গরীব মানুষ একটা প্যারাসিটামল কিনতে গেলেও তাকে কর দিতে হবে। যা স্পষ্ট যুলুম।
-করটি স্পষ্ট ও জ্ঞাতসারে হতে হবে। ভ্যাট অনেকের কাছেই অস্পষ্ট ও অজ্ঞাত।
-অপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের আগ্রহ কমানোর জন্য, দাম বৃদ্ধির জন্য করারোপ অনুমোদিত নয়। যেমনটি আমাদের দেশে করা হয়। পণ্য যদি ক্ষতিকর হয়, তাহলে তা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ করতে হবে। টাকা দিলে বিষ খাওয়া যাবে-এমন নীতি হাস্যকর।
-কর কখনোই রাজস্ব আয়ের স্বাভাবিক উৎস নয়। অথচ এটিই আমাদের দেশে করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সারকথা, উপরের আলোচনা থেকে প্রতিয়মাণ যে, প্রচলিত কররীতি বহুলাংশে শরীয়াহ্ পরিপন্থী। যুলুম ও অন্যায়। এর ঘাটতি পূরণে যে সুদ ভিত্তিক ঋণের আশ্রয় নেয়া হয়, সেটিও ইসলামে নিষিদ্ধ।
- আপনি প্রচলিত কর ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করলেণ, অথচ দেশের অর্থনীতিবিদগণ একে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতামত ও যুক্তিগুলো আপনি কিভাবে দেখছেন?
আব্দুল্লাহ মাসুম: দেখুন, যুক্তি নেই কোন কথার পক্ষে? যে কেউ তার পক্ষে তার মতো করে যুক্তি দাঁড় করাতে পারে। আমাদের টেকসই অর্থব্যবস্থার আলোকে বিচার করতে হবে। তাহলে এসব যুক্তি ধোপে টিকবে না। যেমন, করের পক্ষে বলা হয় যে, করের মাধ্যমে সম্পদের রিডিস্ট্রিবিউশন হয়।
সমাজে যেনো সম্পদ কুক্ষিগত না হয় তাই সরকার কর নিয়ে থাকে। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় এটি কতোটা হাস্যকর কথা। কর কি শুধু এমন লোকরাই আদায় করে, যাদের হাতে অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে? একজন দরিদ্র মানুষ, যে ভিক্ষা করে, সেও যখন ফার্মেসী থেকে প্যারাসিটামল কিনতে যায়, তাকে কি কর দিতে হয় না। ভ্যাটের কথা বলে জনগণ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করে কর ফাঁকি দেয় কারা? কালো টাকা সাদা করা হয় কাদের স্বার্থে। মোটকথা, কর কখনোই দরিদ্রবান্ধব নয়। পূঁজিপতিবান্ধব। এটি সচেতন নাগরিক মাত্রই বুঝতে পারেন।
- প্রচলিত কর যদি যুলুম ও অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের ব্যয় নির্বাহ হবে কিভাবে?
আব্দুল্লাহ মাসুম: এটি ভালো প্রশ্ন করেছেন। সাধারণত কর ও ঋণের যেসব বিকল্প উৎস আছে, সেগুলো খুবই নগণ্য। সরকার সবসময় করের মতো সহজ পথে হাঁটে। করে সমাধান না হরে ঋণ গ্রহণ করে। অথচ চেষ্টা করলে এর ভালো বিকল্প উৎসও কাজে লাগানো সম্ভব। অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতে সেসব বিকল্প উৎস হল-সেবা বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ। আমাদের দেশে এটি আছে। যেমন, সরকারী পোস্ট অফিস, হাসপাতাল, রেল বিভাগ ইত্যাদি। তবে একদিকে যেমন, এগুলো দূর্নীতির শিকার। অপরদিকে সেবার মানও সব ক্ষেত্রে ভালো নয়। তাই মানুষ প্রাইভেট সেক্টর থেকে সেবা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। শুধু হাসপাতালগুলোতে যদি দূর্নীতিমুক্ত ও মান সম্মত সেবা নিশ্চিত করা যেতো, তাহলে এখান থেকে সরকারের ভালো রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। ভালো সেবা পেলে মানুষও একটু বেশি টাকা ব্যয় করতে পিছু হটবে না।
-বিনিয়োগ। সরকার দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ করতে পারে। এর মাধ্যমে তার মুনাফা অর্জন হবে। বিশেষ নীতিমালার আওতায় কোম্পানীর লাইসেন্স দেয়ার সময়ই মূলধন জোগান দিয়ে এর দশ শতাংশ শেয়ার সরকার নিজের জন্য নিশ্চিত করতে পারে।
-সুকুক ইস্যূকরণ। সরকার তার নানা মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে যেয়ে ঋণ করতে হয়। করের উপর ভরসা করতে হয়। পদ্মা ব্রীজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এসব বড় বড় ব্যয় কর ও ঋণ থেকে সরবরাহ না করে সরাসরি সুকুক থেকে সরবরাহ করা যায়। এতে বিশেষ ফায়দা হল-জনগণ সম্পৃক্ত হওয়ায়, তাদের মাঝে এই ভালো মানসিকতা গড়ে উঠবে যে, তার নিজের কামাই করা টাকা দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ধরনের ভালো অনুভূতি জনগণকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে।
-যাকাত। যাকাত ব্যবস্থা একটি রাষ্ট্রকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। একটি টেকসই কল্যাণময় রাষ্ট্রের জন্য যাকাত ব্যবস্থা অতীব জরুরী একটি বিষয়।
-ওয়াকফ নীতি। যাকাতের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ের আরেকটি ভালো উৎস হল-ওয়াকফ। প্রতিটি জেলা ও গ্রামে পানি, চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজগুলো ওয়াকফের মাধ্যমে সহজেই করা সম্ভব। বিশেষত ক্যাশ ওয়াকফ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। যেখান থেকে দেশ ও জাতি উপকৃত হতে পারে। এ ধারণা ঠিক নয়, ওয়াকফ শুধু মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান হয়। ওয়াকফ একটি বিস্তৃত ধারণা। এর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন খুব সহজেই করা যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মুসাফিরখানা ইত্যাদি অনেক কিছুই ওয়াকফ এর মাধ্যমে করা যায়। সালাফের যুগে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ওয়াকফ বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। দুখঃজনক হলেও সত্য যে, আমরা ওয়াকফকে শুধু মসজিদ ও মাদ্রাসার সাথে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। এ ধারণার উন্নীত করতে হবে। এর মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ সরকারের বিশাল একটি ব্যয় নির্বাহ হয়ে যাবে। প্রয়োজন ওয়াকফ ও ক্যাশ ওয়াকফ নিয়ে আমাদের গণ সচেতনতা তৈরি করা।
-সাধারণ দান: সালাফের যুগে সাধারণ দান ছিল একটি রাষ্ট্রের ভালো উৎস। রাষ্ট্র যদি জনবান্ধব হয়, তাহলে জনগণ রাষ্ট্রকে দান করতে উৎসাহিত হবে। এর জন্য রাষ্ট্র-কর্ণধারদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। মোটকথা, কর নির্ভর রাজস্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এটি সম্ভব। এর জন্য সদিচ্ছার প্রয়োজন। ইচ্ছে থাকলে সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে করমুক্ত বা কর সীমিত রাজস্ব ব্যবস্থা দাঁড় করানো সম্ভব।
- করের একটি বিকল্প হিসাবে আপনি যাকাতকে উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি কি একটু বিস্তারিত বলবেন?
আব্দুল্লাহ মাসুম: জি, সালাফের যুগে যাকাত ছিল রাজস্ব আদায়ের অন্যতম মাধ্যম। একটি টেকসই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় করের তুলনায় যাকাত বেশী উপকারী। প্রথম কথা হল, যাকাত অবশ্যই একটি ইবাদত। এটি কোনো কর নয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে করদাতা মাত্র ২০-২২ লক্ষ মানুষ। । এর মধ্যে ফাঁকিবাজ তো আছেই। এরপর সেই কর সামাহীন। অপরদিকে সংখ্যায় যাকাতা দাতা ১০ কোটির বেশি হবে। আদায়ের হারও মাত্র ২.৫%। এর উপর ফসলের যাকাত তো আছেই। ১ লক্ষ টাকায় যাকাত আসে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। ১০ কোটি মানুষ মাত্র ১ লক্ষ টাকার যাকাত দিলে ২৫ হাজার কোটি টাকা উঠে আসে। বাকি হিসাব নিজেরাই করে নিতে পারবো আমরা। সালাফের যুগে যাকাত ব্যবস্থা ছিল রাষ্ট্রীয় আয়ের অন্যতম উৎস।
যে এলাকা থেকে যাকাত আদায় করা হতো, সেই যাকাত ঐ এলাকার দরিদ্রদের মাঝেই বিতরণ করা হতো। সুতরা কর বর্জন করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যাকাত আদায় চালু করা সময়ের দাবি। তবে এর জন্য মযবুত শরীয়াহ্ বডি ও বিতরণ কমিটি লাগবে। যেনো যথাযথ খাতে যাকাত বিতরণ হয়। অভিজ্ঞজন মনে করেন, শুধু ফসলের যাকাত দিয়েই সংশ্লিষ্ট এলাকার খাদ্য সংকট দূর করা সম্ভব। দরিদ্রতা দূর করা সম্ভব। কেনো সালাফের যুগে কর ব্যবস্থা চালু না করেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেটা এখান থেকেই বোধগম্য।
শুধু তাই নয়, এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৫ বছর যদি সঠিক ভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত ব্যবস্থাপনা করা হয়, তাহলে দেশ দরিদ্রমুক্ত হয়ে যাবে। এই যে দেখুন, করকে বলা হয় সম্পদ যেনো কুক্ষিগত না হয়, তাই কর ব্যবস্থা। অথচ বাস্তবে যাকাত ও সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থাই মূলত এমন ব্যবস্থা যা সম্পদকে কুক্ষিগত হতে বাধা দেয়। করের মতো যাকাত সবাইকে দিতে হয় না। এরপর সেই যাকাত সরাসরি সম্পদহীণ মানুষের কাছে চলে যায়। কর ব্যবস্থায় কি এমনটি হয়!! সুতরাং করকে রিডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যম বলা নিতান্তই অজ্ঞতা।
-আমরা দেখি, সরকার ঘাটতি বাজেটে সুদভিত্তিক ঋণের আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
আব্দুল্লাহ মাসুম: ঘাটতি বাজেট যেনো লেগেই আছে আমাদের সাথে। এবারে ঘাটতি রীতিমত ভয়ংকর ব্যাপার। এই পুরো ঘাটতি পূরণ হবে বৈদেশিক ও আভ্যান্তরিণ উৎস থেকে সুদ ভিত্তিক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে। যে সুদ একটি আপাদমস্তক অভিশাপ। যুলুম ও অন্যায়। অর্থনৈতিক অনিষ্টের কারণ, সেটিই আমাদের প্রধান আশ্রয়। আল ইয়াযু বিল্লাহ।
শুধু তাই নয়, এভাবে সুদ ভিত্তিক ঋণ গ্রহণ করাকে সগর্বে নিজেদের আর্থিক সামর্থ্যরে প্রতীক হিসাবে ব্যক্ত করা হয়। সুদ যে অর্থনীতির জন্য ভালো নয় এটি বুঝার জন্য বেশি দূর যেতে হবে না। ১৯৩০ এর ঐতিহাসকি অর্থনৈতিক মহামন্দার পর কেন তা হল, এর থেকে উত্তোররণের পথ কি তা জানতে ‘সাউদাম্পটন চেম্বার অব কমার্ ‘ যে রিপোর্ট পেশ করেছিল, তাতে স্পষ্টভাবে সুদকে দায়ী করা হয়েছে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে ২০০৮ এর অর্থনৈতিক ক্রাইসিসের সময়েও। শুধু তাই নয় ফ্রান্সের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ জেক. অসট্রাই (J.Austry), প্রাচ্যবিদ লয়েস জারদিট (L.Gardet) প্রমুখ অমুসলিম বিজ্ঞজনও ইসলামী অর্থনীতিকে সমর্থন করেছেন। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের চেয়ারম্যান সাহেবের কথা তো আমি বহু জায়গায় উদ্ধৃত করেছি। তিনি বর্তমান সময়ে ইসলামী অর্থনীতির দিকেই বিশ্বকে আহবান জানিয়েছেন।
একজন মুসলিম হিসাবে যদি চিন্তা করেন, ইসলামে শিরকের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় রিবা। হাদীসে নির্দেশিত জাতীয় আযাব-গযবের একটি প্রধান কারণ সুদ। সুতরাং অর্থনীতি বলেন বা ধর্মীয় বিধান কোনও ভাবেই সুদের দিকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে এখন প্রশ্ন আসবে, তাহলে এর বিকল্প পথ কি হবে? হাঁ, পথ অবশ্যই আছে। অনুসন্ধানী চোখ ও সদিচ্ছা থাকলে বের হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাবনা হল-
-প্রথমে ব্যয় সংকোচন করা।
-আয়ের উৎসগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে পূর্বে আলোচিত করের বিকল্প উৎসগুলো ভালোকরে কাজে লাগানো।
-করজে হাসানা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
-অনুদান প্রধানে উৎসাহিত করা।
-দেশময় ইসলামী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। এগুলো একবারে হবে না, তবে ধীরে ধীরে এগুলো এক সময় সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করুন, বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যয় দেখানো হয়েছে সুদ আদায়। গত বাজেট মোট বরাদ্দের ১১.২৩ শতাংশ এ বাবদ ব্যয় হবে বলা হয়েছিল। এটি ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের বৃহৎ বরাদ্দ। কী দাঁড়াল বিষয়টি? ২০-২২ লক্ষ মানুষ যে কর দিচ্ছে, সেটির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সুদ আদায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলা হয়, গণতান্ত্রিক সরকার। জনগণের মতামত-ই-অগ্রগণ্য। অথচ জনগণের মতামত না নিয়েই তাদের টাকা দিয়ে সুদ আদায় করা হচ্ছে। সুদ ভিত্তিক ঋণ নেয়া হচ্ছে। ‘আপনি কর দিবেন, তা দিয়ে সুদ আদায় করা হবে। আপনি কি এতে রাজি আছেন’ এ ব্যাপারে মতামত জরিপ করা হোক। এরপর দেখা যাক, কতজন মানুষ সুদ দিতে রাজি হবে!!
- এবারের বাজেটে কোন বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আব্দুল্লাহ মাসুম: প্রতি বছর দেশের প্রয়োজনকে সামনে রেখে বাজেট রচিত হয়। এবারের বাজেট আমাদের করোনার দ্বিতীয় বর্ষের বাজেট। আমরা যদি দেখি, এ সময়ে আমাদের জাতিয় প্রয়োজনগুলো কি কি, তাহলে মোটা দাগের যে বিষয়গুলো সামনে আসে-
-টিকার সংকট। এক্ষেত্রে সরকার বহুমুখী পদক্ষে না নিয়ে শুধু ভারতের উপর ভরসা করা নীতিগত ভুল ছিল। তাছাড়া নিজেরাই টিকা উৎপাদনের পথেও যায়নি দেশ। এখন সময় এসেছে নিজেরাই মানসম্মত টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া। বাজেটে এ বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে।
-চিকিৎসা সেবার সংকট। করোনায় চিকিৎসা খাতের দূর্বল অবকাঠামো উলঙ্গ হয়ে পড়েছে। এর উপর আছে এ খাতের সীমাহীণ দুর্নীতি। সুতরাং এবারের বাজেটে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত।
-দরিদ্র সংকট: করোনায় বহু মানুষ কর্মহীন। দেশের সকল দরিদ্র মানুষের কাছে কিভাবে নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়া যায়, তাদেরকে কাজে লাগানো যায় এটিও বাজেট গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। এছাড়া আয়ের উৎস হিসাবে বাজেটে সুকুক ও অন্যান্য ইসলামী বিনিয়োগ পদ্ধতির প্রতি সরকারের আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। জনগণকে জাতীয় অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের এটি একটি ভালো মাধ্যম। পাশাপাশি ক্যাশ ওয়াকফ, যাকাত এর প্রতিও গুরুত্ব দেয়া উচিত। সর্বপরি, বাজেট বাস্তবায়ন তদারকি করতে হবে। দূর্নীতিবাজদেরকে চিহ্নিত করে আইনের অধীনে আনতে হবে।
-একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট রচনায় কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত বলে মনে করেন?
আব্দুল্লাহ মাসুম: প্রথম কথা হল, বাজেট-ই সব কিছু নয়। বাজেট কেবলই একটি অনুমান ভিত্তিক আয় ও ব্যয়ের পরিসংখ্যান। এর চেয়ে বড় কথা হল-সঠিক বাস্তবায়ন। বাজেট বক্তব্য যতই আকর্ষণীয় হোক, সেটি বড় কথা নয়। স্বাস্থ্য খাতে গতবার ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি কতটুকু কাজে এসেছে তা সকলেরই জানা আছে। তাই আমরা মনে করি, প্রথমত একটি সুস্থ ও বাস্তবসম্মত বাজেট রচনা করতে হবে। এর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা হতে পারে এভাবে-
-বাজেটের অন্যতম আয় আসবে যাকাত থেকে।
-ওয়াকফ ব্যবস্থা তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
-পূর্বে প্রস্তাবিত করমুক্ত বিকল্প আয়ের উৎসগুলো কাজে লাগানো হবে।
-সুদকে ধীরে ধীরে পুরোপুরি বর্জন করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে ইসলামী ফিন্যান্স। এক্ষেত্রে সুকুক সহ অন্যান্য ইসলামী বন্ড সুন্দর বিকল্প হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে আপোষহীন শরীয়াহ্ সুপারভাইজিং নিশ্চিত করা একান্ত আবশ্যক। দ্বিতীয়ত, বাস্তবায়নে দূর্নীতিকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এর জন্য সর্বত্র তাকওয়া ও নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে।
- বাজেট প্রণয়নের আগে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের থেকে মতামত নেয়া হয়। কিন্তু আলেমদের মতামত বা বক্তব্য নেয়া হয়না। এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
আব্দুল্লাহ মাসুম: জি, এটি দুখঃজনক। একটি মুসলিম দেশ হিসাবে দেশের বিজ্ঞ আলেম ও ইসলামী অর্থনীতিবিদদের থেকেও মতামত নেয়া উচিত। শুধু একমুখী বামপন্থী অর্থনীতিবিদদের মতামত নেয়া উচিত নয়। আলেমদের মতামত নেয়া হলে এতে সরকার বৈচিত্র মতামত পাবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও বাস্তবসম্মত হবে। তবে আমাদের আলেমদেরও উচিত অর্থনীতি ও ইসলামী অর্থনীতিতে আগ্রহী হওয়া।
-বাজেটে কি আলাদা করে ধর্মীয় খাত নির্ধারণ করা জরুরি? জরুরী হলে কেন?
আব্দুল্লাহ মাসুম: আমরা আগেও বলেছি, বাজেট রচনাই শেষ কথা নয়। সেটি সঠিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত থেকে বাস্তবায়ণ করতে হবে। দুর্নীতি মোকাবেলার জন্য তাকওয়া ও নৈতিকতার চর্চার বিকল্প নেই। এর জন্য ধর্মীয় খাতের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে উদ্যোগগুলো নেয়া যেতে পারে-
-দেশের প্রতিটি স্কুলে সরাসরি দাওরায়ে হাদীস পাশ করা আলেমদেরকে কাজে লাগানো। এর জন্য বরাদ্দ রাখা।
-কলেজ ও ভার্সিটিতে ইসলামী ফিন্যান্স উৎসাহিত করা। এর জন্য স্বতন্ত্র বরাদ্দ দেয়া।
-ইমাম ও খতীব সাহেবদেরকে আরও প্রশিক্ষিত করে তাদেরকে সমাজে আরও ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা করা। এর জন্য স্বতন্ত্র বরাদ্দ রাখা।
-প্রতি বছর সেরা হাফেয, সেরা আলেম, বর্ষ সেরা ইসলামী অর্থনীতিবিদ হিসাবে জাতীয় স্বীকৃতি প্রদান ও এ খাতে বরাদ্দ প্রদান।
-মাদ্রাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে স্বতন্ত্র বরাদ্দ প্রদান।
এভাবে ধর্মীয় খাতকে উন্নয়ণ করার নানা উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, শুধু আইন দিয়ে দেশ চলতে পারে না। প্রয়োজন তাকওয়া ও সততা প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্য ধর্ম চর্চার বিকল্প নেই।
-আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আব্দুল্লাহ মাসুম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
এমডব্লিউ/